শিরোনাম
◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি ◈ বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স: কীভাবে পাবেন, কী কী শর্ত মানতে হবে? ◈ এবার থাইল্যান্ড থেকে ভারতগামী বিমানে ১৬ টি সাপ, এরপর যা ঘটল ◈ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনালাপ নিয়ে এবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্তা

প্রকাশিত : ০৬ জানুয়ারী, ২০২১, ০৬:৪৯ সকাল
আপডেট : ০৬ জানুয়ারী, ২০২১, ০৬:৪৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম: ভারতের ভ্যাকসিন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের ভ্যাকসিন প্রাপ্তি

ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম: করোনায় আক্রান্তের দিক দিয়ে ইন্ডিয়ার অবস্থান দ্বিতীয়, আর মোট মৃত্যুর দিক দিয়ে তাদের অবস্থান তৃতীয়। এই মহামারীতে ক্ষতির দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিলের পরেই রয়েছে ইন্ডিয়া। ১৩৫ কোটি মানুষের দেশটি ভ্যাকসিনের জন্য মূলত নির্ভর করছে তাদের নিজের দেশে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের উপর। আর এ কারণেই তারা ফাইজার বা মর্ডানা থেকে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভ্যাকসিন অর্ডার করেনি। তাদের দেশের সেরাম ইন্সটিটিউট যে ৫ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন প্রস্তুত করে রেখেছে তার পুরোটাই হয়তো তারা ব্যবহার করবে নিজের দেশের মানুষের জন্য। এটাই স্বাভাবিক। এই একই কারণে, যুক্তরাজ্যে উৎপাদিত অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম চালানের ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সর্বপ্রথম সরবরাহ করা হবে ব্রিটেনকে। এর পরে তারা ভ্যাকসিন দিবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপকে। ২৫ ডিসেম্বর রাশিয়া যখন তাদের স্পুটনিক-৫ ভ্যাকসিনের ৩ লক্ষ ডোজ আর্জেন্টিনায় পাঠালো, তখন রাশিয়ার মানুষ বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছিলো। সর্বপ্রথম দেশের চাহিদা না মিটিয়ে বিদেশে ভ্যাকসিন রপ্তানির বিরোধিতা করে স্যোসাল মিডিয়াতে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে।

এই মহামারীতে যেসব দেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম চালানের ভ্যাকসিনগুলো তারাই পাবে। বাংলাদেশ একদিকে ফলাও করে প্রচার করবে যে এই মহামারীতে তারা নিরাপদ অবস্থায় আছে এবং ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী তারা বিশ্বে প্রথম ২০ টি ‘রেজিলিয়েন্ট’ দেশের তালিকায় রয়েছে। আবার অন্যদিকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার প্রদর্শণ করবে, এটা স্বাভাবিক নয়। বাংলাদেশ যদি কোনো ভ্যাকসিনের ট্রায়াল নিজ দেশে করতে পারতো সে ক্ষেত্রে হয়তো ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্টে শরিক দেশ হিসেবে প্রথম চালানেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই ভ্যাকসিন পেতে পারতো। যেভাবে ভ্যাকসিন পাচ্ছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ। এসব দেশে চাইনিজ ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করা হয়েছে বিস্তৃতভাবে। বাংলাদেশে রাশিয়ার ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করা যেতে পারতো গেলো বছরের ডিসেম্বরে সানোফির ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হলো না। অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ট্রায়াল ইন্ডিয়াতে যখন শুরু হলো তখন সেরাম ইনষ্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশও ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করতে পারতো। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশও হয়তো কোনো বিলম্ব ছাড়াই অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন প্রথমদিকেই পেতে পারতো।

ইউরোপে উৎপাদিত অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন বাংলাদেশে এ বছরের প্রথমভাগে আসার সম্ভবনা নেই। এবছরে ইউরোপে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ৫০ কোটি ডোজের পুরোটাই সরবরাহ করা হবে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে। অন্যদিকে গ্যাভি বা কোভ্যাক্স সেরাম ইনষ্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের অন্যতম দাবিদার। সেরাম ইনষ্টিটিউট ২০২১ এর শেষ নাগাদ কোভ্যাক্সকে সরবরাহ করবে ৩০-৪০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন। কোভ্যাক্স আরো অন্যান্য কোম্পানির কাছ থেকেও ভ্যাকসিন আহরণ করবে। বিভিন্ন সূত্র থেকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির পর কোভ্যাক্স সেই ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের বিভিন্ন দেশে। এবং এক্ষেত্রেও ভ্যাকসিন দেয়া হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। বাংলাদেশ কোভ্যাক্সের কাছে চেয়েছে ৬ কোটি ৮০ লক্ষ ডোজ ভ্যাকসিন। কিন্তু এই ভ্যাকসিন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেতে গেলে বাংলাদেশেকে যথার্থ কারণ প্রদর্শন করতে হবে। শুধু মূল্য পরিশোধেই ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যাবে না।

বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের জন্য সেরাম ইনস্টিটিউ প্রস্তুত করবে ১০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন। এক বছরে সেরামের উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৫০ কোটি ডোজ। ইন্ডিয়া আগস্ট মাসের ভেতরেই তার দেশের ৩০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা করেছে, যার বেশীরভাগ ভ্যাকসিনই (৬০ কোটি ডোজ) তারা নিবে সেরাম থেকে, এবং বাকিটা নিবে ভারত বায়োটেক থেকে। ভ্যাকসিনের এই বিপুল চাহিদা মেটাতে সেরাম হয়তো তাদের প্রথম ২/৩ মাসে উৎপাদিত সকল ভ্যাকসিনই নিজ দেশের মানুষের জন্য সরবরাহ করবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রথম চালানের ৫০ লক্ষ ডোজ ভ্যাকসিন আসতে পারে মে/জুন মাসের দিকে।

লেখক : এমবিবিএস, এমএসসি, পিএইচডি, সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়