ডেস্ক রিপোর্ট: বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ চলমান। একে বলে এমআরটি লাইন-৬। আরেকটি মেট্রোরেল প্রকল্প এমআরটি লাইন-৫ নেওয়া হয়েছে। এটি নির্মাণের অনুমোদিত রুট হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত। এর এলাইনমেন্টের একটা অংশ পড়েছে সেনানিবাসের কচুক্ষেত ধরে। এ জন্য অনাপত্তি দরকার সেনা সদরের।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির (ডিএমটিসিএল) পক্ষ থেকে সমঝোতা স্মারক সই করার প্রস্তাব দিলে চারটি বিষয় তুলে ধরে সেনা সদর। এর একটি নতুন করে রুট বৃদ্ধির প্রস্তাব। তার পরিপ্রেক্ষিতে এখন সেনাবাহিনীকে জানানো হয়েছে, অনুমোদিত প্রকল্পের দৈর্ঘ্য হ্রাস-বৃদ্ধির ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক নন। এটি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যপার। তা ছাড়া ২য় পর্যায়ে রুট বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। সময়মতো কাজ এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে বিদ্যমান এলাইনমেন্টের ওপর কার্যক্রম গ্রহণে সমঝোতা স্মারক সই করা জরুরি বলে মত দেওয়া হয় এ-সংক্রান্ত চিঠিতে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক আফতাব উদ্দিন তালুকদার জানান, এমআরটি লাইন-৫ নদার্ন রুটের হেমায়েতপুর-ভাটারা এলাইনমেন্ট জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। একনেক, ইআরডি, প্ল্যানিং কমিশন তথা সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে রুট বৃদ্ধির পরিকল্পনা আছে।
এমআরটি-৫ প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর অনুমোদন দিয়েছে একনেক। হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত নর্দান রুট শীর্ষক প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ করা হয় গত বছরের জুনে। পাতাল ও উড়াল রেলের সমন্বয়ে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ। এর মধ্যে পাতাল পথ ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এবং উড়ালপথ ৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৪টি স্টেশন থাকবে।
এ রুটের এলাইনমেন্ট হেমায়েতপুর-বালিয়ারপুর-ঝিলামালিয়া-আমিনবাজার-গাবতলী-দারুস সালাম-মিরপুর-১-মিরপুর-১০- মিরপুর-১৪-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান-২-নতুন বাজার-ভাটারা। এ রুট ধরে মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়ে গেছে। প্রকল্পের এ পর্যায়ে এসে সেনা কর্তৃপক্ষের কাছে অনাপত্তি নিতে চিঠি দেয় প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। সেনাসদর প্রস্তাব দেয়- রুটটি হেমায়েতপুর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং ভাটারা থেকে ৬ কিলোমিটার জলসিঁড়ি আবাসন পর্যন্ত বাড়াতে।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলেন, প্রকল্প অনুমোদনের আগেই বিষয়গুলো সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। এখন সমস্যা হচ্ছে- মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য আরও ২২ কিলোমিটার বাড়লে এর খরচ বাড়বে। জাইকার অনুমতি ছাড়া প্রকল্পের রুট বর্ধিত করা সম্ভব নয়। এরইমধ্যে পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে সংস্থাটি। তাই এ নিয়ে গত ৮ ডিসেম্বর বৈঠক হয়। সেখানে বলা হয়, নতুন করে বর্ধিত সংযোগ পরবর্তী সময়ে বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক। তাই আপাতত নয়, দ্বিতীয় পর্যায়ে হেমায়েতপুর থেকে সাভার-নবীনগর-বাইপাইল পর্যন্ত এবং নতুনবাজার থেকে জলসিঁড়ি-রূপগঞ্জ হয়ে নরসিংদীর ভুলতা পর্যন্ত প্রকল্প বাড়ানোর পরিকল্পনা তুলে ধরে ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি।
সর্বশেষ ২৭ ডিসেম্বর লেখা এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় এমআরটি-৫ নর্দান রুট প্রকল্পের কাজ ‘যথাসময়ে সম্পন্ন করতে’ এমওইউ সই করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো। রুট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের মতামত ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয় চিঠিতে। এমআরটি করিডোর নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ ধরা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে।