সালেহ্ বিপ্লব: [২] ‘জুম প্রযুক্তি ও আমাদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক আলোচনায় তারা বলেন, প্রথাগত মিডিয়ায় তথ্য প্রকাশের সীমাবদ্ধতার কারণেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু অপেশাদার এই মাধ্যমে যাচাই বাছাইহীন তথ্য প্রচারের সুযোগ অবারিত। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহারের আশংকাও তৈরি হয়েছে।
[৩] তারা বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে নানা ধরনের প্রযুক্তি সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে প্রাতিষ্ঠানিক মিডিয়া এবং গণযোগাযোগের মাধ্যমগুলোকে বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তনের কথা ভাবতে হবে।
[৪] কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় ‘শওগাত আলী সাগর লাইভে’ তারা এই মতামত দেন। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে টরন্টো থেকে এই অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়।
[৫] আলোচনায় আংশ নেন ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের অধ্যাপক ড. শিরিন হক, সাউথ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমান এবং দ্য ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা কলেজ অব মেডিসিনের অধ্যাপক ড. সেজান মাহমুদ।
[৬] ড. শিরিন হক বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসার নিঃসন্দেহে ইতিবাচক অগ্রগতি। কোভিড যখন সবাইকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে, ঠিক সেই সময় জুমসহ অন্যান্য প্রযুক্তি মানুষকে নিবিড়ভাবে যুক্ত হতে সহায়তা করেছে।
[৭] তিনি বলেন, মহামারিকালে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন স্থানে অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য খাবার দাবারসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা সংগ্রহ ও পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ সফল হয়েছে।
[৮] তিনি বলেন, প্রথাগত মিডিয়া তাদের পছন্দের বাইরে অন্য মানুষের বক্তব্য প্রচারের তেমন একটা সুযোগ দেয় না। সেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শত মানুষের কথা বলার এবং তাদের কণ্ঠস্বর শোনার সুযোগ করে দিয়েছে। এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং প্রাতিষ্ঠানিক মিডিয়ার সংস্কারের জন্য একটি ‘ওয়েক আপ কল’।
[৯] ড. শফিকুর রহমান বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই পাঠক ও দর্শক প্রাতিষ্ঠানিক মিডিয়ার বাইরেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক মিডিয়াও তাদের প্রকাশিত-প্রচারিত খবর পাঠক-দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে প্লাটফরম হিসেবে ব্যবহার করছে।
[১০] তিনি বলেন, বিশ্বের সব দেশেই মিডিয়া একটি ব্যবসা এবং বড় বড় সব মিডিয়ার মালিকানা ব্যবসায়ীদের হাতে। গাড়ী কোম্পানির পাবলিক সার্ভিস আর হাসপাতালের পাবলিক সার্ভিসের তফাৎটা বোঝা মিডিয়ার জন্য জরুরী। কেননা মিডিয়কে সমাজে হাসপাতালের ভূমিকা পালন করতে হয়।
[১১] ড. সেজান মাহমুদ বলেন, কোভিডের সময়ে অনেক চিকিৎসকই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোভিডের চিকিৎসার নামে নানা ধরনের ওষুধের প্রচার করেছেন। মানুষ সেগুলো ব্যবহারও করেছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া আমরা দেখবো আরো চার পাঁচ বছর পর।
[১২] তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অখ্যাত কোনো শিল্পী বা লেখক বিখ্যাত হয়ে গেলে সেটি অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু চিকিৎসা বা ওষুধের মতো বিষয়ে এই যাচাই বাছাইহীন তথ্যের প্রচার মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে ।
[১৩] শওগাত আলী সাগর তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক মিডিয়াই এখন পর্যন্ত তথ্য প্রবাহের নিয়ন্ত্রক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিকাশের এই যুগে মূল ধারার মিডিয়ার নেতৃত্ব অক্ষুন্ন রাখতে পেশাদারিত্ব বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।