লিহান লিমা: [২] নিজ দলের এমপিদের চাপ ও কট্টর জাতীয়তাবাদী নাইজেল ফারাজের ইউকিপের উত্থানের মুখে ২০১৩ সালের ২৩ জানুয়ারি ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন ইউরোপিয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হওয়ার সমঝোতাপূর্ণ ‘ব্রেক্সিট’ নিয়ে গণভোটের পরিকল্পনার কথা জানান। তখন বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ক্যামেরুন।
[৩] ক্যামেরুনসহ বিশ্বায়নবাদীদের চমকে দিয়ে টোরি দলের দশকব্যাপী করে চলা এই দাবীকে গণভোটে জাতীয় দাবীতে রুপ দেয় ব্রিটেন। ৪৮.১ শতাংশ ভোটের বিপরীতে ৫১.৯ শতাংশ ব্রিটিশ ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দেয়।
[৪]২০১৬ সালের ২৪ জুন পদত্যাগ করেন ক্যামেরুন। ১৩ জুলাই থেরেসা মে ব্রেক্সিট চুক্তি কার্যকরের লক্ষ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
[৫] ২০১৬ সালের ১০নভেম্বর ব্রিটেনের সুপ্রিমকোর্ট সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে ইইউ থেকে বের হওয়ার ধারা আর্টিকেল-৫০ নিয়ে ভোট গ্রহণের নির্দেশ দেয়। তবে অনড় থেরেসা আর্টিকেল ৫০ বাস্তবায়ন করেন। ব্রাসেলসে সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিেিডন্ট ডোনাল্ড টাস্ক আনুষ্ঠানিকভাবে বলেন, ‘বিদায় ব্রিটেন, আমরা তোমাদের মনে রাখবো। ধন্যবাদ।’
[৬] ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল থেরেসা মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা দেন। তবে ৮ জুন সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে আরো দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি।
[৭] থেরেসা মে ব্রাসেলসে ইইউ-ব্রিটেন বন্ধুদের বার্তা দিয়ে সমঝোতাপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি করতে চাইলেও প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ করেন ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস ও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর ব্রেক্সিট মন্ত্রীর পদ থেকে সরে যান ডমিনিক রাবও।
[৮] ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর ব্রেক্সিট চুক্তিকে স্বাগত জানান ২৭টি ইইউ দেশের নেতারা। তবে এই চুক্তি ব্রিটেনের পার্লামেন্ট অনুমোদন করে নি। ১৫ জানুয়ারি এমপিরা থেরেসার ব্রেক্সিট পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেন।
[৯] চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যর্থতা নিয়ে ২০১৯ সালের ২৪ মে অশ্রুসিক্ত নয়নে পরাজয় স্বীকার করে পদত্যাগ করেন। ২৪ জুলাই বরিস জনসন ব্রেক্সিট কার্যকর ও দেশকে একত্রিত করার বার্তা দিয়ে ভার নেন ডাউনিং স্ট্রিটের।
[১০] ১৭ অক্টোবর ২০১৯ বরিস জনসন দীর্ঘ প্রতিক্ষীত উত্তর আয়ারল্যান্ড সীমান্ত নিয়ে ইইউর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেন। জানান, যুক্তরাজ্য অর্থাৎ ‘ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়ালস ও উত্তর আয়ারল্যান্ড একসঙ্গে ইইউ’ থেকে একযোগে বেরিয়ে আসবে। ১২ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে শক্তিশালী হন বরিস।
[১১] ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ইউরোপিয় কমিশনের নতুন প্রেসিডেন্ট উরসূলা ভন দের লিয়েন যুক্তরাজ্য সফর করে জানান, এই বছরের মধ্যেই শেষ হবে অন্তবর্তীকালীন সময়। করোনা ভাইরাস মহামারীতেও সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলোচনা চালিয়ে গিয়েছিলো দুই পক্ষ। অবশেষে ৯ মাসের হাড্ডাহাড্ডি আলোচনার পর দুই পক্ষই ২৪ ডিসেম্বর ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছায়।
আপনার মতামত লিখুন :