বকুল খান, স্পেন থেকে: বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে অদক্ষ প্রবাসীদের জীবন দুঃখ, কষ্ট ও লাঞ্ছনার। প্রবাসে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে প্রাত্যহিক ও পেশাগত জীবনে প্রথমেই ভাষা ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ভাষা ও ড্রাইভিং জানা থাকলে প্রবাসীদের জীবনব্যবস্থা অনেকটাই সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়ে ওঠে।
জীবনযাত্রার মান এগিয়ে নিতে হলে ড্রাইভিং জানার বিকল্প নেই। তাই ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জীবনযাত্রা সহজ করার লক্ষ্যে ‘আপনার ভাষায় কথা বলে’ স্লোগান নিয়ে 20১২ সালে স্পেনে ড্রাইভিং ক্লাস শুরু করেন বাংলাদেশি এক স্বপ্নবাজ তরুণ ওবায়দুর রহমান খান সাদা।পরবর্তীতে 20১৮ সালে বৃহৎ পরিসরে |তিনি আজ বাংলা ভাষায় ড্রাইভিং ক্লাসের একজন সফল উদ্যোক্তা ও প্রদর্শক। তিনি সব সময় বলেন, ‘চাকরি না খুঁজে চাকরি তৈরি করুন।’
একটা চ্যালেঞ্চ নিয়ে সাদা, স্পেনে চালু করেন বাংলা অটো স্কুল। প্রফেশনালি শুরু করলেন এই প্যানডামিকের শুরুতে। একসময় ফিজিক্যালি চালু করলেও বর্তমানে সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ অনলাইনভিত্তিক বাংলা স্কুল চালু করেন।। স্কুলের পরিধি এখন স্পেনজুড়ে। সাবলীল বাংলা ভাষায় গড়ে তোলা স্কুলটি এখন স্পেনপ্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে জনপ্রিয় এক নাম।
ড্রাইভিং নিয়ে যখন সবার মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে, দুর্ভেদ্য ভেবে অনেকেই সাহস পাননি, তাদের কাছে আশার আলো এই বাংলা অনলাইন অটো স্কুল। সহজ পদ্ধতি এবং সক্ষিপ্ত সময়ে জানমালের নিরাপত্তার বিষয়ে সঠিক ও স্বচ্ছ ধারণার অনুশীলনই এই প্রতিষ্ঠানের মূলনীতি।
স্পেনপ্রবাসী বাংলাদেশিরা এখন ব্যাপক আগ্রহ ও উৎসাহ নিয়ে অনলাইন ক্লাস করছেন। সাদা তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার নির্যাস ঢেলে দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রবাসীদের স্বপ্ন পূরণের। অমিত সম্ভাবনাময়ী বাংলাদেশিদের সহজে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাইয়ে দিতে তিনি নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।
নিজের মনের কোণে লুকিয়ে থাকা আকাঙ্ক্ষা তাকে সব সময় পীড়া দিত। যদিও প্রথমে তাকে নিয়ে হাসি-তামাশা কম হয়নি। তবে যারা তাকে উপহাস করেছিলেন, তারাই পরে তার স্কুলের ছাত্র হন।
২০১১ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে স্পেনে আসেন ওবায়দুর রহমান খান সাদা। ভর্তি হন স্প্যানিশ স্কুলে। রপ্ত করেন স্প্যানিশ ভাষা (কাস্তিয়ানো ও কাতালান)। একসময় বাংলা ক্লাস চিন্তাই করতে পারতেন না, আজ তা হাতের মুঠোয়। অনলাইনে মেসেঞ্জারে শুরু, পরে হোয়াটস অ্যাপ। এখন জুম অ্যাপের মাধ্যমে ক্লাস নেন, যা খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ওবায়দুর রহমান খান সাদা বলেন, এখন ৪০ দিনের প্রতি ব্যাচে প্রায় ১৫০ জন ছাত্রছাত্রীর ক্লাস নিয়ে থাকেন। ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে তিনি ক্লাস করিয়েছেন। তিনি মনে করেন, স্পেনে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে যেভাবে চায়নিজ ভাষায় পরীক্ষা দেওয়া যায়, সেভাবে বাংলা ভাষায় পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হলে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন। এ জন্য প্রয়োজন সরকারিভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা।
সাদা আরো বলেন, বাংলা অনলাইন অটো স্কুলে পাসের হার ৭০ শতাংশ, কিন্তু স্প্যানিশ ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার সংখ্যা মাত্র ৫ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্লাসে অনিয়মিত এবং হঠাৎ করে অনুশীলন বন্ধ করার কারণে অনেকেই সফল হতে পারছে না।
তবে অনেকেই আজ ট্যাক্সি ক্যাবিং, বিভিন্ন ট্রান্সপোর্টসহ নিজস্ব ব্যবসা-বাণিজ্যে সফলতার সাথে কাজ করছেন। বাংলা ভাষায় ড্রাইভিংয়ের দুটি বই রয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলায় ড্রাইভিং এপ্লিকেশন , ওয়েবসাইটসহ পূর্ণাঙ্গ প্রাতিষ্ঠানিক ড্রাইভিং স্কুল করার পরিকল্পনা আছে তার।