ডেস্ক রিপোর্ট: ভাস্কর্য ইস্যুতে প্রথম দিকে কিছুটা নমনীয় হলেও এখন কঠোর হচ্ছে সরকার। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙার পর সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারীদের কোনো ধরণের ছাড় দেওয়া হবে না বলেও স্পষ্ট জানানো হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।
সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, দেশে অস্থিতিশীলতার যেন সৃষ্টি না হয় সেজন্য শুরুতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি। দলীয় নেতাকর্মীদেরও সংযত থাকতে বলা হয়েছিল; কিন্তু ভাস্কর্যবিরোধীরা দিন দিন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত করার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত করছে। আমাদের জাতিসত্তাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। তাই এ জাতির পিতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ইস্যুতে কারও সঙ্গে কোনো আপোষ করার সুযোগ নেই।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের ব্যাপারে কোনো ধরণের সমঝোতা করা হবে না। অন্যান্য স্থানে ভাস্কর্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভাস্কর্যবিরোধী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা জায়, গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দেশের রাজনীতি অনেকটাই শান্ত ছিল। বড় ধরনের কোনো সংকট না থাকায় সরকারের পাশাপাশি স্বস্তিতে ছিল সাধারণ মানুষও। কিন্তু হঠাৎ করেই রাজধানীর ধোলাইখালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনা নিয়ে বিরোধিতা শুরু করে বেশকিছু ইসলামি দল। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন ও চরমোনাই পীরের অনুসারীরা ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় থাকা ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেয়।
গত শনিবার কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এরপর থেকেই প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে অনেক সংগঠন। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। এ ঘটনায় ইন্ধনদাতা ও দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে ওই কমিটি। এরই মধ্যে কুষ্টিয়ার ওই ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতারও করে ফেলেছে পুলিশ।
ভাস্কর্যের বিরোধিতার মধ্যে সরকারের এমন উদ্যোগের বিরোধিতাকারীদের জন্য কঠোর বার্তা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষার প্রয়োজনে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। বাড়াবাড়ি করলে কর্মীরা ঘরে বসে থাকবে না -ওবায়দুল কাদের উগ্রবাদী গোষ্ঠীর প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেক হয়েছে, এবার থামুন। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দেবেন না। এখনো দলের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছি, আবারও বাড়াবাড়ি করলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ঘরে বসে থাকবে না। বঙ্গবন্ধু মানে এদেশের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু মানে দেশ ও সংবিধান, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের অবমাননা মানে দেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আক্রান্ত করা। এর পেছনে নিশ্চয়ই দুরভিসন্ধি আছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত আছে। নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় রোববার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন সেতুমন্ত্র।
ভাস্কর্য ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা করার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পর্যায়ের এক নেতাকে সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।