সময় টিভি: কৃষককে অপহরণের পর নির্যাতনকারী সেই উপজেলা যুবলীগ সভাপতিকে দল থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও সন্ত্রাসী কাজের সাথে জড়িত থাকা ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিলের নির্দেশে পাবনা জেলা যুবলীগের আহবায়ক আলী মুতজা বিশ্বাস সনি স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
অব্যাহতি প্রাপ্ত পাবনার সাথিয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আশরাফুজ্জামান টুটুল সম্প্রতি সাথিয়ার হারিয়াকাহন গ্রামের সোনাই বিলের পানিতে মাছ ধরার অপরাধে এক কৃষককে অপহরণের পর নির্যাতন করে পরদিন ফেলে রেখে চলে যায়। এ নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হলে দল এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন বলেও নিশ্চিত করেন জেলা যুবলীগের আহবায়ক সনি বিশ্বাস।
স্থানীয়রা জানান, সাঁথিয়া উপজেলার হাঁড়িয়াকাহন গ্রামের সোনাই বিলে বর্ষার পানিতে টইটুম্বর থাকে বিলের মাঠ। কৃষি-প্রধান এই গ্রামে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ করা আর বর্ষায় পানিতে নিমজ্জিত হলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন গ্রামবাসীরা। তবে, গত কয়েক বছর ধরে শান্ত, সুনিবিড় গ্রামটির দরিদ্র চাষিদের মনে শান্তি নেই। মৎস্যজীবী কালিপদ হালদারের নামে ইজারা নিয়ে বিলটি উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আশরাফুজ্জামান টুটুল দখলে নেয়ায় বিপাকে পড়েন তারা। নিজ মালিকানাধীন জমিতে মাছ ধরলেও টুটুল বাহিনীর রোষানলে পড়তে হয় তাদের।
হাড়িয়াকাহন গ্রামের কৃষক কোরবান আলী বলেন, বন্যার পানির কারণে আমরা গত চার থেকে পাঁচ মাস ধরে আমাদের জমিতে চাষ করতে পারি না। বন্যার পানি মাঠ থেকে নেমে আসছে, তাই আমরা মাঠে মাছ ধরার জন্য জাল পেতেছিলাম। কিন্তু যুবলীগের লোকেরা জলাশয়টি দখলে নেয়ায় মাছ ধরতে বাধা দেয়। তিনি বলেন, আমরা খাওয়ার জন্য কেবল তাদের চোখ এড়িয়ে মাছ ধরছি তবে বিক্রি করার জন্য মাছ ধরতে পারি না।
গ্রামের বাসিন্দা ও বিলের জমির মালিক সরোয়ার হোসেন বলেন, মাছ ধরতে গেলেই টুটুলের শ্যালক বাবুল হোসেনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমাদের জাল তুলে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। তাদের হুমকির কারণে আমরা নিজস্ব জমিতে যাওয়ারও সাহস পাই না। তবে টুটুলের দলীয় পদ থেকে অব্যাহতির খবরে তারা খুশি বলেও জানান। ভেতরে ভেতরে খুশি হলেও তাদের মধ্যে অজানা এক ভয় কাজ করছে। কখন গ্রামে এসে এই টুটুল বাহিনীর লোকজন আবার তুলে নিয়ে মারপিট করেন।
সম্প্রতি, টুটুলের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নিজের জমিতে মাছ ধরেন কৃষক মাসুদ হোসেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে টুটুলের সন্ত্রাসী বাহিনী অস্ত্রের মুখে সাঁথিয়া হাট থেকে মাসুদকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে রাতভর নির্যাতনের বাজারে ফেলে দিয়ে যায়। ভোরে গুরুতর অবস্থায় মাসুদকে উদ্ধার করেন স্বজনরা। এ ঘটনায় সাঁথিয়া থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ না করে তালবাহানা করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
ভুক্তভোগী মাসুদ বলেন, গত ১৯ অক্টোবর সাঁথিয়া সদরের সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে চককোনাবাড়িয়া গ্রামের ফজর আলী কসাইয়ের ছেলে আজিজুল, নন্দনপুরের বক্কার পীরের ছেলে আশরাফুল আলম ও বাবুল হোসেন, তেথুলিয়া গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে মতিউর রহমান, আব্দুল মতিনের ছেলে শাকিল হোসেন আমাকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নিয়ে যায় নন্দনপুরের সাইফুল ইসলামের বসত বাড়ির উত্তর পাশের আশরাফুল আলমের ডিশ লাইন অফিস ঘরের মধ্যে। আশরাফুলের নির্দেশে তারা মারপিট করে আমার কাছ থেকে ৫৭ হাজার ২’শ টাকা কেড়ে নেয় এবং ঘরের মধ্যে আটকে রেখে মারপিট করে। এরপর সাঁথিয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি টুটুলের তেঁথুলিয়া গ্রামের বাড়িতে নিয়ে টুটুলসহ সবাই মিলে মারপিট করে।
মাসুদ রানা আরো বলেন, ঘটনার পর হাসপাতালে ভর্তি হই। কিছুটা সুস্থ হলে ভাই মিল্টনের সাথে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেন নাই। উল্টো আমাদের বিষয়টি সমঝোতা করতে নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়। তবে টুটুলের অব্যাহতির খবরে যতটা আনন্দ ততটা ভয়ও কাজ করছে তাদের মধ্যে। আবার কখন তাদের তুলে নিয়ে যায়। তারা পুলিশের ঊর্ধ্বতন অফিসারদের হস্তক্ষেপ কামনাও করেন।
উল্লেখ্য, সাঁথিয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আশরাফুজ্জামান টুটুলের বিরুদ্ধে, চাঁদাবাজি, সরকারি জমি দখল, বাড়ী দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকুর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। উল্টো পুলিশ ওই সন্ত্রাসীদের পক্ষে অবস্থান নেন বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।