আজকাল ভালো ঘুম হয় না। শাহবাগের তদানীন্তন পিজি হাসপাতালের হোস্টেলে যখন থাকতাম তখনও এমনটি হতো। তবে সবসময় না, হরতালের সময়। পিজির হোস্টেলে আমার রুমটি ছিল এ ব্লকের ছয় তলায়। জানালার দিকে চোখ মেললেই জাদুঘর দেখা যেত। দিনের বেলা রিক্সার টিংটিং, গাড়ির হর্ন, মানুষের চিল্লাচিল্লি আর রাতে ট্রাকের হুড়ুম দাড়ুম চলার শব্দ। প্রথম প্রথম অসহনীয় লাগতো। আস্তে আস্তে সয়ে গেছিলো। ওই শব্দগুলো ছাড়া ঘুমের ব্যাঘাত হতো। তাই হরতালের সময় সুনশান শাহবাগে আমার ঘুম আসতো না।
এখন আমার বিদেশের বাসাটি বিমান বন্দরের খুব কাছাকাছি। মানে রানওয়ের খুব নিকটে। আমার বাসার পরে আরেকটি বাসা। তারপর রানওয়ের আগে আর কোনো বাসা নেই। তবে একটি গলফ কোর্সের পরই রানওয়ে। উড়োজাহাজগুলো আমার বাসার ওপর বা আশপাশ দিয়ে আসা যাওয়া করে। নামার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বারান্দা থেকে দেখা যায়। প্রথম দিকে কয়েকদিন শব্দগুলো বিরক্তিকর মনে হতো । একসময় সয়ে গেছে। শব্দ শুনলে বোঝা যেত কয়টা বাজে। কোন ফ্লাইট এলো, কোথা থেকে এলো। কোভিড এসে সব ওলোট পালট করে দিয়েছে। আগে যেখানে কুয়ালালামপুর ও সিংগাপুরে দিনে দুইটা করে ফ্লাইট আসা যাওয়া করতো, এখন সেখানে যায় সপ্তাহে দুইটা। দিনে একটা ফ্লাইট যেত লন্ডনে, এখন যায় মাসে দুইটা। সব রুটে একই অবস্থা। তাইতো শব্দহীন রানওয়ের পাশে থেকে আজকাল ঘুমই হয় না। কবে যে রাতের শাহবাগের মতো আবার গুড়ুম দাড়ুম করে উড়োজাহাজগুলো উড়বে আর শান্তিতে ঘুমুতে পারবো….!
(ফেসবুক থেকে)