রাশিদ রিয়াজ : টেক্সাসের টেক মোগল ও সফটওয়্যার সিইও রবার্ট ব্রকম্যানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় কর ফাঁকির অভিযোগ বলে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা বলছেন। রেনোল্ডস এন্ড রেনোল্ডস সফটওয়্যার কোম্পানির এই প্রধান নির্বাহী কর ফাঁকি ছাড়াও আয়ের তথ্য গোপন, জালিয়াতি, অর্থ পাচার, বিনিয়োগকারীদের জন্যে প্রতরণা সহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত ছিলেন বলা হচ্ছে। সিএনএন/ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল/মার্কেট ওয়াচ
রবার্টের বিরুদ্ধে অভিযোগের বহরও অনেক দীর্ঘ। অন্তত ৩৯টি গুরুতর আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। চলতি মাসের শুরুতে দায়ের করা এসব অভিযোগের মধ্যে বিদেশি কোম্পানি ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোর জন্যে একটি জটিল ওয়েব পরিচালনা, ‘বোনফিশ ও স্নেপার’ এর মতো কোড নাম ব্যবহার করে কর্মীদের সঙ্গে গোপন ইমেইল যোগাযোগ, বিলাসবহুল প্রমোদতরী কিনতে করযোগ্য আয়ের ব্যবহার সহ নানা কুকর্ম রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস (আইআরএস) ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের প্রধান জমি লি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন ২৫ বছরের পেশাগত জীবনে ‘স্পেশাল এজেন্ট’ হিসেবে আমি কখনো এত বিশাল ডলারের মজুদ, লোভের এমন ধরন ও তা গোপন করার কৌশল দেখিনি। তবে রেনোল্ডস এন্ড রেনোল্ডস বলছে সিইও হিসেবে রবার্ট ব্রকম্যান যথারীতি তার চাকরীতে বহাল থাকবেন।
টেক্সাসের এই কোটিপতি ১৯৭০ সালে গাড়ির ডিলারদের জন্যে ইউনিভার্সাল সিস্টেম নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৬ সালে তার এ কোম্পানি রেনোল্ডস এন্ড রেনোল্ডস’এর সঙ্গে একীভূত হয়। এরপর ব্রকম্যান এর সিইও ও চেয়ারম্যান হন। পেশাগত জীবনের শুরুতে তিনি মার্কিন নৌবাহিনী, ফোর্ড ও আইবিএম’এ কাজ করেছেন। গত শুক্রবার তাকে ফেডারেল কোর্টে তলব করা হলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। দশ লাখ ডলার মুচলেকা দিয়ে তিনি জামিনে মুক্তি পান। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস ট্যাক্স ডিভিশনের সাবেক এ্যাসিসটেন্ট এ্যাটর্নি জেনারেল ক্যাথরিন কেনেলি রবার্টের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে সাংবাদিকদের বলেন তার বিরুদ্ধে আনীতি অভিযোগগুলো আমরা আইনীভাবে লড়েই খন্ডন করব।
রেনোল্ডস এন্ড রেনোল্ডস’এর মুখপাত্র বলেছেন রবার্ট কোম্পানির পেশাগত দায়িত্বের বাইরে থেকে ব্যক্তিগতভাবে এধরনের আর্থিক অনিয়ম বা কর ফাঁকি দিয়েছেন যার সঙ্গে কোম্পানি যুক্ত নয়। রেনোল্ডস এন্ড রেনোল্ডস এধরনের অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়নি এবং আমরা আমাদের ব্যবসায়ের সততা ও শক্তিতে আত্মবিশ^াসী। তবে রবার্ট ভিসতা ইক্যুইটি পার্টনারসে বিনিয়োগের পর বারমুদা ও সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে গোপন এ্যাকাউন্টে অর্থ জমা রাখেন। ভিসতার সিইও রবার্ট স্মিথ কর তদন্তকারী কর্মকর্তাদের এব্যাপারে তথ্য দিয়ে সাহায্য করেন। ব্রকম্যানের বিরুদ্ধে আরেক অভিযোগ হচ্ছে তিনি তার কোম্পানির কর্মীদের বিভিন্ন স্কিম গোপন করার জন্যে ব্যাকডেটে রেকর্ড রাখতে বলতেন। তথ্য গোপন করে সফটওয়্যার কোম্পানির জন্যে ৬৮মিলিয়ন ডলার ঋণ নেন। এসব অভিযোগ প্রমানিত হলে তাকে জেলে যাওয়া ছাড়াও তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে ভিসতা’র সিইও স্মিথের বিরুদ্ধে বেলিজ ও নেভিসে গোপনে অর্থ সঞ্চয়ের অভিযোগ উঠেছে। সোনোমা’তে তিনি কর ফাঁকির অর্থ দিয়ে বাড়িও কিনেছেন। ফ্রান্সের আলপসে স্কি কোম্পানি করেছেন আবার কলারোডোতে শিশু ও আহত সেনা সদস্যদের জন্যে দাতব্য প্রতিষ্ঠানও পরিচালনা করছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগেকে স্মিথ ১৩৯ মিলিয়ন ডলার কর ও জরিমানা দেয়া ছাড়াও গোপনে রাখ ১৮২ মিলিয়ন ডলার ও এর ওপর অর্জিত সুদ ফেরত দিতে রাজি হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি। মার্কিন এটর্নি ডেভিড এ্যান্ডারসন বলেন সত্যি বলতে কখনোই বিলম্ব করা উচিত নয়, স্মিথ গুরুতর অপরাধ করলেও সে সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছে। যার ফলে সে অভিযোগ এড়ানোর সুযোগ পেয়েছে।