রাশিদ রিয়াজ : আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে কোভিডে এ লোকসানের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রার মানে স্থায়ী ক্ষতি সৃষ্টি করবে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক বিশ্ব অর্থনীতির এ পর্যবেক্ষণ সংস্থাটি বলছে কোভিড মহামারীতে মৃতের সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়ে যাবার পর অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি এখন দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে বলে আইএমএফ’র পর্যবেক্ষণে বলা হয়। সংস্থাটির শীর্ষ অর্থনীতিবিদ গীতা গোপিনাথ বলেন কোভিড সংকট থেকে পুনরুদ্ধারের বিষয়টি ক্রমশ দীর্ঘস্থায়ী, অসম ও অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। কোভিড মন্দায় লোকসানের পরিমান আগামী দশকের মাঝামাঝি ২৮ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে যা মার্কিন অর্থনীতির চেয়ে আকারে বড়।
গীতা গোপিনাথ বলেন সকল দেশের জীবন যাত্রার মান কোভিড মন্দায় নেমে যাওয়ার কারণে এসব দেশের উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই সংকট বিনিয়োগকে অনিশ্চিত করে তুলেছে, অর্থনীতির ভারসাম্যে সমস্যা তৈরি করেছে যাতে মানবসম্পদ অব্যবহৃত হয়ে পড়বে এবং শ্রমবাজারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তা নিরাময়ে যথেষ্ট সময় লাগবে। এ সংকট মোকাবেলায় সকল দেশকেই দীর্ঘ সময় অসম ও অনিশ্চিত সময় মধ্যে দিয়ে যেতে হবে যা থাকবে অবিরাম প্রবণ। সংকটময় বন্ধুর এ পথ হবে অনিশ্চয়তার মেঘলা আকাশে ঢাকা। ভ্যাকসিন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর এর গতি প্রকৃতি অনেকটাই নির্ভরশীল এবং তা আরো খারাপ হতে পারে যদি ভাইরাসের প্রকোপ ফের নতুন করে বৃদ্ধি পায়। এসব বিবেচনায় আইএমফ বলছে বিশ্ব অর্থনীতি এবার সঙ্কুচিত হবে ৪.৪ শতাংশ। তবে গত জুনে আইএমএফ আশঙ্কা করে বলেছিল বিশ্ব অর্থনীতি এব বছর সঙ্কুচিত হবে ৫.২ শতাংশ। তবে আশঙ্কা অনুযায়ী দ্বিতীয় প্রান্তিকে লকডাউন আংশিক প্রত্যাহারে অর্থনীতির ক্ষতি ঈষৎ কম হয়েছে।
আইএমএফ মনে করে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের মন্দা আগের আশঙ্কার মতো অতটা তীব্র ছিল না। বিশ্বজুড়ে লকডাউন প্রত্যাহারের কারণে প্রত্যাশার চেয়ে বরং অর্থনীতির বেশ কিছুটা পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এ বছর শেষে যদি বিশ্ব অর্থনীতি ৪.৪ শতাংশ সঙ্কুচিত হওয়ার মানে হচ্ছে ১৯৩০ সালের মহামন্দায় পরিস্থিতিতে ফিরে যাওয়া। একই সঙ্গে আইএমএফ সতর্ক করে বলছে অর্থনীতির পুরুরুদ্ধার আগের ধারণার চেয়ে বরং সামান্য ধীর গতিতে হচ্ছে। ফের ইউরোপ ও আমেরিকায় নতুন করে কোভিডের প্রকোপ বেড়ে যাওয়া ও লকডাউন আরোপে পরিস্থিতি আরো সঙ্গীন হতে পারে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর এ্যান্ড্রু বেইলি একই ধরনের আশঙ্কা করে বলছেন লক্ষ্যমাত্রা এখনো অনেক দূরেই অবস্থান করছে। অথচ গত মার্চে লকডাউন প্রত্যাহারের পর ব্রিটেনের অর্থনীতি ভালভাবেই ঘুড়ে দাঁড়াতে শুরু করে। কিন্তু দেশটিতে দ্বিতীয় মাত্রার ভাইরাস প্রাদুর্ভাব সবার মনে ভীতি সঞ্চার করেছে। আইএমএফ ফ্রান্সের মতই ব্রিটেনের অর্থনীতি এবছর ৯.৮ শতাংশ সঙ্কুচিত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। এর আগে গত জুনে ব্রিটেনের অর্থনীতির আকার হ্রাস পায় ১০.২ শতাংশ। তবে এ বছর ব্রিটেনের অর্থনীতির আকার ৮.৩ শতাংশের বেশি হ্রাস পাবে না বলেও ভিন্ন মত রয়েছে।
জি-সেভেন গ্রুপের মধ্যে একমাত্র ইতালির অর্থনীতির অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ। আগামীবছর ব্রিটেনের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হবে ৫.৯ শতাংশ। ইউরোপের দেশগুলোর চেয়ে বেশি হারে। তাই আইএমএফ বলছে পারিবারিক আয় ও ব্যবাসা উন্নয়নে বিভিন্ন দেশের অভূতপূব্য আর্থিক ও নিয়ামক পদক্ষেপ না থাকলে জীবন ও জীবিকা বাঁচতে এবং আর্থিক বিপর্যয় রোধ সম্ভব নাও হতে পারে। কোভিড মন্দায় শুরু থেকে যেসব দেশ এ ধরনের পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে সম্মিলিত চেষ্টা শুরু করেছে সেসব দেশ ফলও পেতে শুরু করেছে বলে জানায় আইএমএফ।