শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি: কী পাচ্ছে বাংলাদেশ, কী হারাতে পারে? ◈ রাতেই সোহরাওয়ার্দীতে জড়ো হচ্ছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা (ভিডিও) ◈ চাপাতি হাতে ব্যাগ ছিনিয়ে পুলিশের সামনেই হেঁটে গেলো ছিনতাইকারী, ভিডিও ভাইরাল ◈ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ভারতের বৃহত্তম তেল শোধনাগার নায়ারা রিফাইনারির ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা ◈ রাতের আকাশে ভেসে উঠলো ‘নাটক কম করো পিও’ (ভিডিও) ◈ জটিল ভয়ানক যে রোগে আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! ◈ কুড়িগ্রামে চাঁদা দাবি করা জামায়াতের সেই নেতা সাময়িক বহিষ্কার ◈ বড়াইগ্রামে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে দুই বিষয়ে দুই পরীক্ষার্থী ফেল! ◈ টাঙ্গাইলে পুলিশ হেফাজতে বিএনপি নেতার রহস্যজনক মৃত্যু ◈ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ তলিয়ে দেখা দরকার: শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি

প্রকাশিত : ১১ অক্টোবর, ২০২০, ১০:৪০ দুপুর
আপডেট : ১১ অক্টোবর, ২০২০, ১০:৪০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাবলু ভট্টাচার্য্য: প্রয়াণ দিবসে স্মরণ, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ

বাবলু ভট্টাচার্য্য: বাংলা সাহিত্যে অস্তিত্ববাদের পরিচায়ক এবং সাহিত্যের মাধ্যমে ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামির দিকে আঙ্গুল তোলার অগ্রদূত সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ।

‘একটি তুলসী গাছের কাহিনী’ ও ‘লালসালু’র লেখক বলতেই সবাই তাকে বেশি চেনে। একাডেমিক পড়াশোনার খাতিরে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ঝেড়ে মুখস্ত করতে হয় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর কর্মগুলোর পরিচিতি। ‘চাঁদের অমাবস্যা, ‘কাঁদো নদী কাঁদো’র মতো উপন্যাস ও 'বহিপীর', 'তরঙ্গভঙ্গ', 'সুড়ঙ্গ' এর মতো নাটকগুলোর লেখক হিসেবেই তাকে আমরা চিনি।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জন্ম ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট, চট্টগ্রামের ষোলশহরে। তার মা নাসিম আরা খাতুন ছিলেন চট্টগ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী বংশের সন্তান। পিতা সৈয়দ আহমদউল্লাহ ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। তিনি ছিলেন নোয়াখালির অধিবাসী। তবে তার সরকারি চাকরির সুবাদে ময়মনসিংহ, ফেনী, ঢাকা, হুগলী, চূঁচুরা, কৃষ্ণনগর, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ প্রভৃতি জায়গায় ওয়ালীউল্লাহর শৈশব ও শিক্ষাজীবন কেটেছে।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বেড়ে ওঠেন সম্পূর্ণ সেক্যুলার পরিবেশে। পিতার দিক থেকে তিনি একধরনের সুফিবাদী, অসাম্প্রদায়িক ও উদার মানবতাবাদী শিক্ষা পেয়েছিলেন। তার পরিবারে ইসলামী মূল্যবোধ ও মুসলিম শিষ্টাচারের সঙ্গে হিন্দু-মুসলমানের সমন্বয়ধর্মী খাঁটি বাঙালিয়ানার কোনো বিরোধ ছিল না।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যচর্চা ও ছবি আঁকার ঝোঁক ছিল শৈশব থেকেই। ফেনী হাই স্কুল ও চট্টগ্রাম জিলা স্কুলে তিনি পড়াশোনা করেন। পাঠ্যপুস্তকের বাইরেই তার পড়াশোনার আগ্রহ বেশি ছিল, তারপরেও প্রতি ক্লাসেই প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানটি তার অধিকারে থাকতো।

১৯৩৯ সালে কুড়িগ্রাম হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। কলেজের প্রথম বর্ষে থাকতেই ঢাকা কলেজ ম্যাগাজিনে তার প্রথম গল্প ‘সীমাহীন এক নিমেষে’ প্রকাশিত হয়।

১৯৪১ সালে তিনি প্রথম বিভাগে আইএ পাস করেন। এরপর ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে ১৯৪৩ সালে ওয়ালীউল্লাহ ডিসটিঙ্কশনসহ বিএ পাশ করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববদ্যালয়ে অর্থনীতিতে এমএ করার জন্য ভর্তি হন। পিতার মৃত্যুর পরে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় এবং পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব তার ও তার বড় ভাইয়ের উপর এসে পড়ে।

চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তার মামা খান বাহাদুর সিরাজুল ইসলামের সহায়তায় কমরেড পাবলিশার্স নাম একটি প্রকাশনী সংস্থা খোলেন। ১৯৪৫ সালে দৈনিক Statesman-এ সাব-এডিটর হিসেবে যোদ দেন। যদিও ওয়ালীউল্লাহ ভালো ইংরেজি জানতেন, তবু স্টেটসম্যানে ঢোকার পর শুধু বিশুদ্ধ নয়, সাহিত্যগুণসম্পন্ন ইংরেজি লেখার প্রতি তার ঝোঁক আসে।

ইতোমধ্যে গল্পকার হিসেবে ওয়ালীউল্লাহর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। বুলবুল, সওগাত, মোহাম্মদী, অরণি, পূর্বাশা, চতুরঙ্গ প্রভৃতি প্রখ্যাত সাময়িকী ও পত্র-পত্রিকায় তার তার লেখা প্রকাশ পেতে থাকে। পূর্বাশার সম্পাদক সঞ্জয় ভট্টাচার্য ওয়ালীউল্লাহর লেখাতে মুগ্ধ হয়ে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘নয়নচারা’ প্রকাশ করেন।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের কিছুদিন পরে ওয়ালিউল্লাহ স্টেটসম্যানের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের সহকারী বার্তা সম্পাদক হয়ে আসেন। ভোরের প্রথম শিফটে ডিউটি থাকতো তার। তাই সারাদিন বাসায় থাকার দীর্ঘ অবকাশ তিনি পেতেন। এই অবকাশেরই ফসল তার ‘লালসালু’। এটি তিনি লেখা শুরু করেছিলেন ১৯৪৪-৪৫ সালে কলকাতাতে থাকার সময়ই।‘লালসালু’র প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন জয়নুল আবেদীন।

১৯৫১ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ওয়ালীউল্লাহ দিল্লি, সিডনী, জাকার্তা ও লন্ডনে পাকিস্তান দূতাবাসের প্রেস সহদূত (Attache) হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি প্যারিসে পাকিস্তান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ছিলেন এবং ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি ইউনেস্কোর প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৫২ সালে দিল্লি থেকে তিনি বদলী হন অস্ট্রেলিয়াতে। সেখানে তার জীবনে আবির্ভাব ঘটে ফরাসি কন্যা অ্যান মেরির। অ্যান মেরি তার দূর প্রবাসের নিঃসঙ্গতার অনেকটাই দখল করে নেন। ১৯৫৫ সালে অ্যানকে বিয়ে করেন ওয়ালীউল্লাহ। তার স্ত্রী পরবর্তীতে তার ‘লালসালু’ ফরাসি ভাষাতে অনুবাদ করেন। এটি পরে ইংরেজিতে ‘Tree Without Roots’ নামেও অনূদিত হয়।

ওয়ালীউল্লাহর লেখাতে এসেছে ধর্মীয় গোঁড়ামির বেড়াজালে জড়ানো অধঃপতিত সামাজিক জীবন। এসেছে মানুষের জীবন জিজ্ঞাসা। এসেছে কঠিন সময়ের ঘূর্ণিপাকে হারিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক মানব জীবন ও মানবীয় আবেগের কথা।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ১৯৬১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি আদমজী পুরস্কার (১৯৬৫) এবং একুশে পদক (১৯৮৪) লাভ করেন।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর  ফ্রান্সের মিউডনে মৃত্যুবরণ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়