রাশিদ রিয়াজ : হযরত মুহাম্মদ (সা) এর একজন বিশিষ্ট এবং প্রবীণ সাহাবি জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আল আনসারী (রা)। রাসুল(সা) এর মৃত্যুর পরেও বহুদিন তিনি বেঁচে ছিলেন। ইমাম হোসেনের পক্ষে যুদ্ধের প্রবল ইচ্ছা থাকার পরেও অন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এবং বার্ধকে নিপতিত হওয়ায় তিনি কারবালায় ইমাম হোসেনের সাথী হতে পারেননি। যখন তিনি জানলেন ইমাম হোসেন তার অনুসারীদের নিয়ে কারবালার প্রান্তরে শহীদ হয়েছেন তখন তিনি শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন এবং তার দাস আতিয়া ইবনে সা’দকে নিয়ে কারবালার পথে যাত্রা শুরু করেন। এবং ইমাম হোসেনের এর শাহাদাতের চল্লিশতম দিনে কারবালার প্রান্তরে এসে পোঁছান। কাকতালীয়ভাবে তার কিছুদিন আগেই ইমাম হোসেনের পরিবারের নারীগণ এবং ইমাম হোসেনের একমাত্র জীবিত সন্তান ইমাম জয়নুল আবেদীন (যাদেরকে কারবালার প্রান্তর থেকে আটক করা হয়) দামেষ্কে ইয়াজিদের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। এবং ইমাম হোসেনের চল্লিশার দিনে তারাও কারবালার প্রান্তরে উপস্থিত হন।
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আল আনসারী (রা) কারবালার প্রত্যক্ষদর্শী ইমাম হোসেনের সন্তান ইমাম জয়নুল আবেদীন এর কাছ থেকে কারবালার ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শুনলেন। এ ঘটনা বর্ণনার সময় তিনি, ইমাম জায়নুল আবেদীন এবং নবী(সা) এর পরিবারের নারীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এবং ইমাম হোসেনের কবর জেয়ারত করেন।
ইমাম জায়নুল আবেদীন, নবী(সা) এর আহলে বায়েতের (বংশধারা) সদস্য হিসেবে শিয়া এবং সুন্নী উভয় ধারার মুসলমানের নিকটেই আকাশসম সম্মানের অধিকারী। মূলত রাসুলের সাহাবি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আল আনসারী (রা) এর কাজ, ইমাম জায়নুল আবেদীনের নির্দেশ এবং পরবর্তী জমানায় রাসূলের বংশধারা এবং তাবেঈন ও তাবাতাবেঈনগণের পালিত রীতি অনুসারে ইমাম হোসেন এর চল্লিশা উপলক্ষে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নাজাফ হয়ে কারবালার পথে পদযাত্রা করাকেই আরবাঈন হিসেবে গন্য করা হয়।
আরবাঈন পদযাত্রার সমসাময়িক রাজনৈতিক তাৎপর্য কোন অংশে কম নয়। সাবেক স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনের সময়ে ইরাকে প্রকাশ্যে হজরত ইমাম হোসেনের কবর জিয়ারত করতে যাওয়া, পবিত্র আশুরা পালন করা কিংবা আরবাঈনের পদযাত্রা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিলো। কাউকে এর কোনো একটি করার দায়ে আটক করা হলে নিষ্ঠুরভাবে তাকে হত্যা করা হতো। কার্যত যুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক প্রতীক হিসেবে ইমাম হোসেনের ত্যাগ মুসলমানদের মনে বিরাজ করে। প্রত্যেক যুগেই ন্যায়বান মুসলমানদের জন্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিকল-ভাঙ্গার প্রতীক হয়ে রয়েছেন। তা সে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা সামাজিক শোষণের বিরুদ্ধেই হোক, জীবন যাপনের পাশাপাশি তারা তাদের অন্তরের অন্তস্থলে ইমাম হোসেনের জন্যে ভালবাসা ও তার কবর জিয়ারতের ইচ্ছা মনে মনে পালন করেন। সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ইরাকের শিয়া জনগোষ্ঠি সুন্নিদের সাথে আরবাঈনের পদযাত্রাকে পুনর্জীবিত করেন। আর তারই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন জঙ্গিদের হুমকি, হামলা ও আগ্রাসনকে পাত্তা না দিয়ে বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসেন হযরত ইমাম হোসেনের প্রেমিকগণ।
আরবাঈন ও ইমাম হোসেনের শাহাদাতের ঘটনায় শোক প্রকাশ শিয়া মুসলমানদের কাছে ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত হলেও আরবাঈন উপলক্ষে কারবালায় ছুটে আসেন অসংখ্য সুন্নি মুসলমান, খ্রিস্টান-ভ্যাটিকানের প্রতিনিধি, হিন্দু, ইয়াজেদি, জোরেস্ট্রিয়ান, সাবেয়িন, অধার্মিক, আস্তিক কিংবা নাস্তিকরা। যারা ধর্মীয় চেতনায় না হলেও অ্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের আদর্শের প্রশ্নে ইমাম হোসেইনকে ভালবাসেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সালের আরবাঈন পর্যন্ত প্রতি বছরই ‘বাৎসরিক সর্ববৃহৎ শান্তিপূর্ণ মিলনমেলা’ হিসেবে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজর কেড়েছে। ২০০৮ সালে প্রায় নব্বই লাখ মানুষ এতে অংশ নেয়। ২০০৯ সালে তা এক কোটি ছাড়িয়ে যায়। ২০১৩ সাল নাগাদ তা দু’কোটি পেরিয়ে যায়। জঙ্গি গোষ্ঠী আইসিসের উত্থান এবং শিয়াদের উপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পরেও ২০১৪ সালে টেলিগ্রাফের হিসাবানুসারে এক কোটি নব্বই লাখ এবং ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে আনুমানিক এক কোটি সত্তর লাখ মানুষ এতে অংশ নেয়। বিভিন্ন স্থানে আরবাঈনে আগতদের ওপর বোমা হামলার ঘটনাও ঘটে। ইরাক সরকারের হিসেবে ২০১৬ সালে ইমাম হোসেনের কবরে জিয়ারতকারীর সংখ্যা ছিলো কমপক্ষে দু’কোটি বিশ লাখ। এরপর তা দু’কোটি ছাব্বিশ লাখ ছাড়িয়ে যায়।
হাফিংটনপোস্টে প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ মাহদি আল মুদাররেসি আরবাঈনের পদযাত্রায় অংশ নেয়ার পর বলেন ‘নারী-পুরুষ এবং শিশুদের পদযাত্রা-যেন তুষারধ্বসের মতো এগিয়ে যাচ্ছে। কালো চাদরে ঢাকা নারীদের অবস্থান-দিগন্তের একমাথা থেকে আরেক মাথা অবধি বিস্তৃত।’ তার আরবাঈন শীর্ষক কলাম (World's Biggest Pilgrimage Now Underway, And Why You've Never Heard of it!) যেটি কিনা ব্যাপক আলোড়ন সৃস্টি করে, তাতে জানা যায় যে, বসরা থেকে কারবালা পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৪২৫ মাইল পথ -দু’সপ্তাহের প্রচেষ্টায় পায়ে হেঁটে পার করেন অনেক শোকযাত্রী।
[ লিংকটি হচ্ছে, https://www.huffingtonpost.co.uk/sayed-mahdi-almodarresi/arbaeen-pilgrimage_b_6203756.html?guccounter=1]
যেভাবে কারবালার পথ ধরেন জিয়ারতকারীরা
মাহদি আল মুদাররেসি তার কলামে লিখেছেন , ‘জিয়ারতকারীদের যাত্রাপথে সেবার জন্য অন্যতম দৃষ্টান্ত হলো অস্থায়ী রান্নাঘর যুক্ত হাজার হাজার তাবু (মাওয়াকিব)। এগুলো পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীগণ জিয়ারতকারীদের খেদমতের জন্যে করে থাকেন। তাবুগুলোতে জিয়ারতকারীগণ দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় প্রায় সকল সামগ্রী উপহার হিসেবে পান। স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে শুরু করে বিশ্রামের স্থান, বিদেশে ফোন-যোগাযোগের সুবিধা, বাচ্চাদের ডায়াপার সবই থাকে। ৪’শ মাইল যাত্রাপথে জিয়ারতকারীদের তেমন কিছু বহন করতে হয় না। বিভিন্ন এলকার বাসিন্দারা জিয়ারতকারীদের খাদ্য নেয়ার জন্যে আবেদন জানাতে থাকেন। রাস্তার মোড়ে মোড়ে যাত্রীকে পথ আলগে ধরেন এলাকাবাসী ইমাম-ভক্তরা। দাওয়াত নিতে রীতিমত পীড়াপীড়ি করেন। কোথাও দেখা যায় ক্লান্ত-শ্রান্ত যাত্রীর পা-ম্যাসেজ করে দেন স্বেচ্ছাসেবকরা। এরপর তারা পথযাত্রীকে বিশ্রাম নিতে অনুরোধ করবেন, যতক্ষণ তারা (যাত্রীর) জামা-কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে ইস্ত্রি পর্যন্ত করেন। একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ইসলামের শিক্ষা সম্পর্কে জানতে চাইলে, কতিপয় নরপশু-জঙ্গির দিকে নজর না দিয়ে বরং আরবাঈন উপলক্ষে নিঃস্বার্থ ত্যাগের দিকে মনোযোগ দেয়াই ভাল।
ইরাক একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ এবং এখনো পুনর্বাসন শেষ হয়নি। রয়েছে কর্মসংস্থানের অভাব। দারিদ্র্য ও যুদ্ধপীড়িত ইরাকিরা নিজেরা না খেয়ে কিংবা অর্ধাহারে থাকে অথচ আরবাঈন উপলক্ষে ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র বিক্রি করে সারাবিশ^ থেকে থেকে আসা ইমাম হোসেনের জিয়ারতকারীদের সেবা করে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে। খাবার ছাড়াও ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পের ব্যবস্থা করেন ইরাকিরা।
আরবাঈন উপলক্ষে কারবালা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন কেউ নাযাফ শহর থেকে। এ শহরটি থেকে কারবালার দূরত্ব ৫৫ মাইল। আর কেউ যাত্রা শুরু করেন বসরা থেকে। সেখান থেকে কারবালা ৪২৫ মাইল। কেনো এই কোটি মানুষ কিসের আকর্ষণে কারবালায় ছুটে যান? দুনিয়াবি কোনো কিছু পাবার জন্যে নয়। হৃদয়ে ইমাম হোসেন। কোনো ব্যবসার ধান্ধা নয়। শিশুদের কাঁধে নিয়ে, প্রতিবন্ধী সন্তান হুইল চেয়ারে এতটা দূর পথ পাড়ি দিয়ে থাকে। বয়স্কা নারীরাও। অথচ এটি কোনো তীর্থযাত্রা কিংবা অবশ্যপালনীয় ধর্মীয় আচার নয়! এর কারণ হচ্ছে কারবালা হচ্ছে দুনিয়াবী সকল অন্যায়, অসাম্য, অবিচার-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতি পদক্ষেপে নিজের সীমিত শক্তি দিয়ে প্রবলভাবে রুখে দাঁড়ানো। সমবেত প্রচেষ্টায় অংশ নেয়া। এটি শিয়া কিংবা সুন্নির পছন্দ অপছন্দের বিষয় নয়. নয় মুসলমান নয় বরং হোসেনের প্রতি সমগ্র মানবতার সাড়া। কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতের আগ মুহূর্তে ইয়াজিদি সেনাদের ইমাম হোসেন কি বলেছিলেন তা যেনো আমরা কখনো ভুলে না যাই। তিনি বলেছিলেন, ‘পরিশেষে তুমি যদি কোনো ধর্মেই বিশ্বাসী না হও, কিংবা পরকালের অস্তিত্বে অবিশ্বাস করো, তাহলেও অন্তত জুলুম করা ও ঔদ্ধত্য প্রদর্শন থেকে বিরত থাকো।’ এ কারণেই ভারতের পদ্মভূষণ পাওয়া সাহিত্যিক জস মালিহাবাদি বলেছেন, ‘মানবতাকে জাগ্রত করার পর সবাই হোসেনকে নিজের বলে দাবি করবে।’
আগামী আরবাঈন কবে হবে তার জন্যেও অনেকে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। এনিয়ে বেশকিছু অনলাইনও রয়েছে। একটি অনলাইনে আরবি মাসের ২০ সফর আগামী বছরগুলোতে কবে নাগাদ হতে পারে তা দিয়ে দিয়েছে। যেমন আগামী বছর ২০২১ সালে সম্ভাব্য তারিখ হচ্ছে ২৭ সেপ্টেম্বর ও ২০২২ সালে হতে পারে ১৭ সেপ্টেম্বর। আগাম জানিয়ে দেয়া হয় আরবাঈনের সময় তাপমাত্রা কেমন থাকবে। এবার একটি অনলাইনে বলে দেয়া হয় ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে তাপমাত্রা। কারণ নাজাফ ও কারবালার চারপাশে মরুভূমির পরিবেশ। সেখানকার মহাসড়কের চারপাশে উষ্ণ হাওয়া বিরাজ করে। কোথায় কোথায় কোন মোড়ে বিশ্রামের ব্যবস্থা আছে তাও আগে ভাগে বলে দেয়া হয়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গরম পড়ে। এসময় অধিকাংশ মানুষ পদযাত্রা এড়িয়ে চলে। তাই রাতে পদযাত্রা করে ফের ভোররাতে শুরু করার কথা বলা হয়। কোথায় কখন নামাজের সময় সূচি তাও অনলাইনগুলোতে উল্লেখ করে দেয়া থাকে। যাতে মানুষ সে অনুযায়ী পদযাত্রায় বিরতি দিয়ে নামাজ আদায় ও কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে ফের রওনা হতে পারে। গাইডরা যাবতীয় বিষয়ে অবহিত করে থাকেন। হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে অনেকে যোগাযোগ করে অনেকে আগাম তথ্য জেনে নেন। যাত্রাপথে প্রতি ৫০ মিটার পর একটি খুঁটি বসানো থাকে তার মানে প্রতি ১ কিলোমিটারে ২০টি খুঁটি বসানে থাকে। মোটামুটি ২৩ থেকে ২৭ ঘন্টা সময় লাগে আরবাঈনের যাত্রায়। তারমানে তিন থেকে চারদিন। ২০ সফরকে লক্ষ্য করে ১৫তম সফরে রওনা দেন অনেকে। হাতে ২/১দিন সময় রিজার্ভ রাখেন। নারী, পুরুষ, অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দল বেধে রওনা হন।
অনেকে শুরু করেন হযরত আলী (রাঃ) মাজার থেকে। সেখান থেকে ৫’শ মিটার আগালেই ওয়াদি-উস-সালাম কবরস্থান। তারপর কিছুটা ডানে আগালেই মহাসড়ক পড়ে। মহাসড়কে উঠে একটু বায়ে আগালেই দেখা যায় শত সহস্র মানুষ ছুটছেন কারাবালার পথে। সেই জনস্রোতে মিশে যায় কারাবালাগামীরা। এভাবে ৭০ কিমি পথ পাড়ি দিলেই পড়ে হারাম অব হযরত আব্বাস (আ.সা.) এর মাজার (খুঁটি নম্বর ১৪৫২)।
আবার দ্বিতীয় পথ হিসেবে অনেকে কুফা মসজিদ থেকে যাত্রা শুরু করেন। আরেকটি পথ রয়েছে মসজিদ-ই-শেলার পিছন দিক থেকে। এ সড়কটি নাজাফ-কারবালা মহাসড়কের পাশাপাশি। কিছুটা তাপমাত্রা কম থাকে সেখানে। কারণ পাশেই ফোরাত নদী। এ পথে পাড়ি দিতে হয় ৯৮.১ কিলোমিটার। কুফা থেকে কারবালায় পৌঁছাতে। পথিমধ্যে পড়ে হিন্দিয়া। সাদ্দাম হোসেনের আমলে এ পথটি বেছে নেয়ার কারণ হচ্ছে কেউ পিছু লাগলেই আশে পাশের গ্রামে লুকিয়ে পড়া যায় সহজে। কারণ ধরা পড়লেই ফাঁসিতে লটকানো হত জিয়ারতকারীদের। জিয়ারতকারীরা কারবালার প্রান্তরে রওনা দেয়ার পর বাড়িতে স্বজনরা তার ফিরে না আসা পর্যন্ত দোওয়া করতে থাকেন।
গাইডরা বলে থাকেন আবেগে শরীরের ওপর অত্যাচার না করে যেন দীর্ঘ সময় না হাঁটেন কেউ। শরীর যতটুকু সম্মতি দেয় ততটুকু। প্রথম রাতটিতে অধিক হাঁটা থেকে বিরত রাখতেও পরামর্শ দেন তারা। ফজরের নামাজের দুই ঘন্টা আগে ঘুম থেকে উঠে বিশেষ নফল নামাজ আদায় করে তারপর ফের রওনা দেন সবাই। এ নামাজকে সালাতুল লায়াল বা নামাজে শাব বা শেষ রাতের নফল নামাজ বলা হয়। ফজরের নামাজ শেষে ফ্রেশ হয়ে প্রফুল্ল শরীর ও মন নিয়ে ফের চলা শুরু করেন জিয়ারতকারীরা। সাথে ভারী কোনো জিনিসপত্র বহন না করার পরামর্শ দেন গাইডরা। এভাবে দিন কয়েকের হাঁটার পর কারো কারো পায়ে ফোঁসকা পড়ে যায়। এজন্যে কোনো কোনো তাবুতে চিকিৎসা নিতে হয়। বিশ্রামে বসে ছোট কোরান শরীফ বের করে তেলাওয়াত করেন ্অনেকে। মোবাইলে শুনতে থাকেন কোরানের আয়াত। ১০ বছরের ওপর যাদের বয়স তাদের ৯৯ শতাংশকে দেখাযায় তৃতীয় অথবা চতুর্থ দিনে তারা আরবাঈনের পথ অতিক্রম করে। তাই তাড়াহুড়ো করতে বারণ করেন গাইডরা। ইংরেজি, আরবি, উর্দু ও ফার্সি ভাষা বোঝেন গাইডরা। সাধ্যমত তারা চেষ্টার অপেক্ষায় থাকেন। জুতা, হুইল চেয়ার মেরামতের প্রয়োজন হলে তাও দেখিয়ে দেন গাইডরা। দল বেধে যারা যান তাদের মধ্যে দলছুট কেউ হলে তার আসার অপেক্ষায় অনেকে বিশ্রাম নেন, ফের একসঙ্গে রওনা দেন।