শিরোনাম
◈ সরকারি দপ্তরগুলোতে গাড়ি কেনা ও বিদেশ সফরে কড়াকড়ি: কৃচ্ছ্রনীতির অংশ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা ◈ ২১ বছর বয়স হলেই স্টার্ট-আপ লোনের সুযোগ, সুদ মাত্র ৪%: বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা ◈ ঢাকায় একটি চায়না টাউন প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে: আশিক চৌধুরী ◈ তিন বোর্ডে বৃহস্পতিবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত ◈ এসএসসির ফল নিয়ে যে বার্তা দিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা ◈ সৈক‌তের কা‌ছে দু:খ প্রকাশ ক‌রে‌ছেন ‌বি‌সি‌বির প্রধান নির্বাচক  ◈ ভারত সরকারকে আম উপহার পাঠাল বাংলাদেশ ◈ পুলিশের ঊর্ধ্বতন ১৬ কর্মকর্তা বদলি ◈ কল রেকর্ড ট্রেলার মাত্র, অনেক কিছু এখনো বাকি, অপেক্ষায় থাকুন: তাজুল ইসলাম ◈ জাতীয় নির্বাচনের সব প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা : প্রেস সচিব

প্রকাশিত : ০১ অক্টোবর, ২০২০, ১১:০৫ দুপুর
আপডেট : ০১ অক্টোবর, ২০২০, ১১:০৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আসিফুজ্জামান পৃথিল: বিদেশ নীতিতে পরিবর্তন বোঝার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার বাণিজ্য

আসিফুজ্জামান পৃথিল: বিদেশ নীতিতে পরিবর্তন আসছে, এটা বোঝার জন্য সামরিক সম্পর্ক ও সামরিক কেনাকাটা যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার হলো বাণিজ্য। বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্পষ্ট করে দেয় আপনার কোমড় কতোটা শক্ত। আপনি কোনদিকে ঝুঁকছেন। আদৌ কারও দিকে ঝুঁকছেন কি? বাংলাদেশের বিদেশ সংক্রান্ত নীতিতে বড় বাঁকবদলের ঘ্রাণ সেদিনই মিলেছিলো, যেদিন বাংলাদেশ মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর, সে প্রকল্প সন্নিবেশিত বড় একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র আর সেখানে তৈরি হতে যাওয়া এশিয়ার ২য় বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির দায়িত্ব যখন জাপানকে দেয়। এই সিদ্ধান্তের পেছনে কিছু চমৎকারিত্ব আর বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাপার অবশ্যই আছে।

কলকাতা একটি মৃত বন্দর। গাঙ্গেয় মোহনার যে কোনও বন্দর মারা যাবে, ঢাকা পড়বে পলির আস্তরণে, সুন্দরবন তাকে পলি-জলে গ্রাস করবে এটা অলিখিত সত্যবচন। চালনার ক্ষেত্রে এাঁ একটা ইস্যু ছিলো, কলকাতার ক্ষেত্রে। মংলা ছোট বন্দর। এই ঝড়ঝাপ্টায় তার আসলে কিছুই এসে যায় না। ভারত বাংলাদেশের কাছে যে বন্দর সুবিধা চাচ্ছিল, তা কলকাতা বন্দরের পরিপূরক হিসেবেই। এর বাইরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পন্য পাঠানোর চাহিদা তো ছিলোই। বাংলাদেশ সে চাহিদা পূরণ করেছে মংলা বন্দর দিয়ে। যেটিকে বেশি চাপ দিলে ভবিতব্য হবে কলকাতার মতোই। এাঁ ছিলো অসাধারণ এক স্ট্যাটিজিক প্ল্যান। শেষ পর্যন্ত কাস্টমার হিসেবে ভারতকে চট্টগ্রামে আসতে হয়েছে। কারণ আপনি আগরতলা, ইম্ফল, ডিমাপুরে যাবেন বাগেরহাটের বাদাবন পেড়িয়ে, এটা অবাস্তব পরিকল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়।

তবে ভারত চাচ্ছিলো বাংলাদেশে নিজস্ব বন্দর সুবিধা। ইরানের চবাহার গভীর সমুদ্রবন্দরে প্রতিশ্রুতি পূরণে সক্ষম হয়নি ভারত। প্রায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিলো ভারত একটি গভীর সমুদ্র বন্দর, এ সংক্রান্ত অন্যান্য বিশাল কর্মযজ্ঞ, পাইপলাইন ইত্যাদি নির্মান ও সামাল দেবার মতো ম্যাচিউরিটি অর্জন করতে পারেনি। তাদের ব্যবসায়ীদের বিশেষত প্রাইভেট সেক্টরের মুনাফামুখীতা, মানে শুধুই মুনাফামুখীতা হোস্ট কান্ট্রিকে কখনই কোনও ফায়দা এনে দেবার মতো পলিসি তৈরিতে সক্ষম নয়। পায়রা বন্দর ইস্যুতে পরে আসি, কারণ পায়রা তখনও প্যাক্টর না। বাংলাদেশ তখন নিজেদের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর সোনাদিয়ায় করবে এটি নিশ্চিতই ছিলো। এবং এই কাজ পাবে চীন, তাও পুরোপুরি নিশ্চিত। কিন্তু ভারত এতে আগ্রহ দেখাচ্ছিলো বারবার। চীনকে বাংলাদেশ কাজটা দেয়নি। আদতে সোনাদিয়ার কাজ কাউকেই দেয়নি। সোনাদিয়ায় কখনও বন্দর তৈরিই হবে না।

এটা আসলে বাংলাদেশের জন্য অসাধারণ কূটনৈতিক চাল বলা চলে। সেই বন্দর প্রকল্প নিয়ে আসা হলো তুলনামূলকভাবে অনেক বড় দ্বীপ মহেশখালিতে। এখানে প্রাকৃতিক হারবার আছে। ড্রেজিং ছাড়াই মাতারবাড়ি চ্যানেলের গভীরতা ২৪ মিটারেরও বেশি। জাপানের এই অঞ্চলে একটা বন্দর প্রয়োজন ছিলো। কাজটা জাপান পেলো। শুধু বন্দর নয়, সেখানে নির্মিত হচ্ছে এশিয়ার ২য় বৃহত্তম স্পেশাল ইকোনমিক জোন। এবার এই জোন নিয়ে শুরু হলো নতুন আন্তর্জাতিক রাজনীতি।

বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক অদ্ভূত খেলা শুরু করলেন। তিনি চীনা পণ্যের উপর শুল্কারোপ শুরু করলেন। চীনও পাল্টা মার্কিন পন্যের উপর প্রতিশোধমূলক শুল্কারোপ শুরু করলো। কিন্তু চীনে কি শুধু চীনা পণ্য তৈরি হয়। চীনকে ধরা যেতে বিদেশী বিনিয়োগের শ্রেষ্ঠতম হাব। চীনা কারখানায় যেসব পণ্য তৈনি হয় তার একটি অংশ বিদেশি। দরা যাক, অ্যাপল তার আইফোন বানাবে। আইফোনের চিপসেট তৈরি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। বাকি প্রতিটা জিনিস তৈরি হয় চীনে। এরপর আমেরিকান কোম্পানি অ্যাপেলের আইফোন যুক্তরাষ্ট্রে আসে কিংবা বিশ্বের অন্যান্য স্থানে যায়। পন্যটি অবশ্যই আমেরিকান, তবে তাতে লেখা থাকে মেড ইন চায়না। কারণ চীনের ব্যবসা নীতি সহজ, কর কম, শ্রমিক পাওয়া যায়, শ্রমিক খরচ কম, বিদ্যুতের দাম বা অন্যান্য জ্বালানির দাম কম। চীন থেকে পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক ঝুঁকি নেই। চীনের বেশ কয়েকটি শক্তিশালী বন্দর আছে।

শুধু মার্কিন নয় জাপানি বা অন্য যে কোনও পশ্চিমা দেশের জন্য এই কথাটি সত্য। এই দেশগুলো এখন প্রোডাকশন ব্যবসা থেকে সরে সার্ভিসের দিকে ঝুঁকেছে। প্রোডাকশান তো বন্ধ করা যায় না। এই ব্যবসাটা থার্ড কান্ট্রিতে করে নেয়া হচ্ছে। শুধু সেই ব্যবসা সক্রান্ত সার্ভিস ক্টের পরিচালিত হচ্ছে মাদার কান্ট্রি থেকে। ডিজাইন অ্যান্ড ডেভলপমেন্টও হচ্ছে মাদার কান্ট্রিতেই। ট্রাম্পের এই কথিত যুদ্ধ এসব কোম্পানিকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। আমেরিকানদের আমেরিকান গাড়ি কিনতে হচ্ছে অতিরিক্ত শুল্ক দিয়ে। চাপানের সমস্যা আরেকটু জটিল। দক্ষিণ চীন সাগরের পরিস্থিতি দ্রুত ঘোলাটে গয়ে আসছে। জাপান চীনে ব্যবসা না রাখার নীতি নিয়েছে। কয়েকদিন আগে তাদের সরকার ঘোষণা দিয়েছে, কোনও কোম্পানি চীন থেকে যদি বাংলাদেশে বিনিয়োগ সরিয়ে আনে, তবে তাদের বিশেষ ভর্তুকি দেয়া হবে।

কেনো এতো সদয় আচরণ? মনে রাখা দরকার, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একে অন্যের পরিপূরক। কেউ আদতে কাউকে দয়া দেখায় না। উত্তর ভারত মহাসাগরে ৩টা বন্দর মুক্তোর মালার মতো দাঁড়িয়ে আছে। চবাহার, গোয়াদর আর পায়রা। আরএদের নিচে পেন্ডেন্ট এর মতো ঝুলছে হাম্বানটোটা। হাম্বানটোটা আর গোয়াদর চীনের নিয়ন্ত্রণে। চবাহারের দায়িত্বগুলো ভারতীয় কোম্পানিগুলোর হাত ধেকে ধীরে ধীরে চীনা কোম্পানির হাতে চলে যাচ্ছে। পায়রার নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও পায়রা তৈরি করছে চীন। সিঙ্গাপুর সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। হংকংয়ের নিয়ন্ত্রণ যে কোনও সময় নিয়ে নেবে চীন। এই ৪ বন্দর হবে ভবিষ্যত পৃথিবীর ভাগ্য নিয়ন্তা। যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে চীনের হাতে। তবে রাজনৈতিক কারণে ইরান, পাকিস্তান নিরাপদ নয়, লঙ্কার ভৌগলিক সীমাবদ্ধতা আছে। পায়রা হলো পাওয়ার পয়েন্ট। এটাকে ট্যাকেল করতে একটা বন্দর দরকার ছিলো পশ্চিমাদের। এবারও এগিয়ে এলো বাংলাদেশ। সিঙ্গাপুরের স্থান অধিগ্রহণে প্রস্তুত মহেষখালি-মাতারবাড়িও। তবে পায়রার গুরুত্ব কমছে না। এাঁই সম্ভবত বাংলাদেশের ক’টনৈতিক বিজয়। দুটি বিনোয়েগের ক্ষেত্র ছাড়া থাকলো দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির জন্য।

পেঁয়াজ নিয়ে যে কেলেঙ্কারি এ বছরও শুরু হতে যাচ্ছিলো, তা ঠেকানো গেছে। বাংলাদেশ বিকল্প বাজার যে রয়েছে তা দেখিয়ে দিয়ে ভারতকে একটা জবাব দিতে চেয়েছিলো। এটি স্পষ্ট বাংলাদেশ এক্ষেত্রে খুব সম্ভবত আর ভারতমুখী হতে চাইবে না। চাল নিয়ে এর আগে ভারত সমস্যা তৈরি করায় বাংলাদেশ উৎপাদন বাড়িয়েছিলো। ভারতে আমরা এখন বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করি। তবুও দুই দেশের ঘাটতি বিশাল।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধে পরাজিত শক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই। বিজয়ী শক্তি বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। তবে চীন সাগরের ভিয়েতনাম নয়, বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই লাভের পরিমাণও বেশি। মাতারবাড়ির কথা বলেছি। বলা হয়নি মীরসরাইয়ের কথা। এশিয়ার ২য় বৃহত্তম বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল মাতারবাড়িতে। প্রথমটা কোথায়? প্রথমটা মীরসরাইতে। ৩য়টা কোথায়? ৩য়টা হতে যাচ্ছে পটুয়াখালী আর বরগুনায়। বিশাল বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি ছাড়াতো এটা হচ্ছে না। জাপানের প্রায় সব অটোমোবাইল কোম্পানি বাংলাদেশে চলে আসছে। বেশ কিছু ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠানও জায়গা খুঁজছে। মীরসরাই এতো বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে, যে এর জন্য আলাদা বন্দর লাগবে। সেটিও হতে হবে বেশ গভীরও। চট্টগ্রাম পাশে থাকলেও এখানে হচ্ছে একটি বেসরকারী বন্দর। যা শুধু মীরসরাইয়ের পন্যই রপ্তানি করবে, মীরসরাইয়ের কারখানাগুলোর কাঁচামালই আমদানি করবে।

বাণিজ্যযুদ্ধ একটি সুযোগ এনেছিলো। বাংলাদেশ এখানেও স্পষ্ট করেছে সে নীতি বদলেছে। এক্ষেত্রেও বলবো এই নীতি বদলানো সুদূরপ্রসারী ব্যাপার। এখনই এটি ভালো নাকি মন্দ তা বলার জায়গা নেই। তবে বদল হওয়ার প্রয়োজন ছিলো, নিশ্চয়ই ছিলো। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়