রকি আহমেদ: [২] বাংলাদেশের প্রায় সব পুস্তক প্রকাশনীর কার্যালয় ও বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে বাংলাবাজারে। রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সদরঘাটে গড়ে উঠা বইয়ের বৃহৎ পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত বাংলাবাজারে গেলে রং বেরং এর বইয়ের স্তুপ, বই কিনতে ক্রেতাদের ভিড়, বই প্রকাশকদের ব্যস্ততা যেন এখানকার চিরচেনা দৃশ্য। দেশের সব প্রান্তে এখান থেকে সরবরাহ করা হয় সহায়ক পাঠ্যপুস্তক ও সৃজনশীল বই। কিন্তু দেশে করোনা মহামারীর কারণে বাংলাবাজারে এমন দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। কিছু কর্মচারী ও ফুটপাতের ব্যবসায়ী ছাড়া ক্রেতাশূন্য বাংলাবাজার যেন তার নিজস্ব রুপ হারিয়েছে।
[৩] জানা যায়, করোনার কারণে এখানে আগের তুলনায় ৮০-৯০ ভাগ বিক্রি নেই। এতে কর্মচারী ছাঁটাই, বেতন কম করা, বই প্রকাশ কমিয়ে দেওয়াসহ টিকে থাকতে নানা পদক্ষেপ নিতে হয়েছে বলে জানান প্রকাশক ও বিক্রেতারা।
[৪] সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, একেবারেই বিক্রি নেই বাংলাবাজারের ফুটপাতে পুরাতন বই বিক্রি করা কয়েকশ পুস্তক বিক্রেতাদের। পুরাতন বই বিক্রেতা মো.শামীম হোসেন বলেন, আগে আমাদের গড়ে ২৫০০-৩০০০ টাকার বই বিক্রি হতো এখন ১০০-২০০ টাকার বই বিক্রি হয়। আবার কোন কোন দিন রুটি কিনে খাওয়ার মতোও বিক্রি হয় না বলে এসময় জানান তিনি।
[৫] একই চিত্র দেশের বড় বড় প্রকাশনী কোম্পানিগুলোর। অনুপম প্রকাশনীর ম্যানেজার মো. শাহিন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের বিক্রি আগের তুলনায় ৭০-৮০% নেই। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা জানাচ্ছে পুরাতন বই পড়ে আছে আর নতুন বইয়ের কোন চাহিদা নেই। এতে আমাদের নতুন বই প্রকাশ তো হচ্ছেই না অন্যদিকে গোডাউনে পড়ে থাকা বই কিভাবে বিক্রি হবে সেই দুশ্চিন্তায় আছি।
[৭] নতুন শিক্ষাবর্ষের আর একুশে বইমেলার জন্য আমরা এইমাস থেকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। কিন্তু করোনার কারণে আমরা এখনও প্রস্তুতি গ্রহণে আশঙ্কায় আছি। তবে সরকার যদি কাগজের উপর ভ্যাট কমায় তাহলে প্রকাশকদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পোষাবে।
[৮] পুথিনিলয় প্রকাশনীর ম্যানেজার প্রশান্ত কুমার রায় বলেন, আমরা কোম্পানি শুধুমাত্র খুলে রেখেছি কিন্তু ব্যবসা বাণিজ্য সব বন্ধ। আমাদের বিক্রি ১০ ভাগের নিচে। তিনি বলেন, বিক্রি না হওয়ায় অনেক বই রিটার্ন এসেছে। এখন সরকার যদি বইয়ের মানবন্টন পরিবর্তন না করে তাহলে রিটার্ন আসা এসব বই কোম্পানিগুলো রিবাইন্ডিং করে চালাতে পারবে।
[৯] এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, করোনার মধ্যে সারাদেশের প্রায় ছাব্বিশ হাজার প্রকাশক ও বিক্রেতাদের পক্ষ থেকে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রণোদনার প্যাকেজ ও কাগজের উপর ভ্যাট কমানো সহ একটি আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এটা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। সব সেক্টর খোলা হলেও শিক্ষানপ্রতিষ্ঠান খুলেনি। তাই আশা করছি সরকার পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতাদের প্রতি সুদৃষ্টি দিবেন।
আপনার মতামত লিখুন :