মো. আখতারুজ্জামান : [২] চলমান করোনা মহামারীতে ব্যবসা অব্যাহত রাখতে তামাক কোম্পানিগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি, লবিং, অনুদান ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচারসহ বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করছে। শনিবার ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত কোভিড-১৯ ও তামাক কোম্পানি শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রজ্ঞার পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
[৩] জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাককে করোনা সংক্রমণ সহায়কপণ্য হিসেবে চিহ্নিত করলেও দুইটি বহুজাতিক তামাক কোম্পানি করোনা মহামারীর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে সিগারেট উৎপাদন, বিপণন ও তামাক পাতা ক্রয় অব্যাহত রাখার জন্য অনুমতিপত্র আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির নামে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করলে যা তাদের ব্যবসাকে প্রমোট করছে। সেই সঙ্গে ব্রান্ড ইমেজ প্রচারের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেইজে লাইভ টকশোতের অংশগ্রহণ, করোনায় ধূমপায়ীদের ক্ষতি কম এজাতীয় ভ্রান্ত তথ্য প্রচার ইত্যাদি অব্যাহত রেখেছে কোম্পানিগুলো।
[৪] আরও জানানো হয়, তরুণ সমাজকে টার্গেট করে ভ্যাপিং ব্যবসায়ীরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে তরুণদের ভ্যাপিং পণ্যে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। ওয়েবিনারে অংশ নেয়া তামাকবিরোধী সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ জানান তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার সুযোগ থাকায় সরকারের নীতিপ্রণেতাদের সাথে অপ্রয়োজনীয় যোগাযোগ তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক নীতি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে থাকে।
[৫] ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, অবিলম্বে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে তামাক কোম্পানির সকল সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তারা। একইসাথে ওয়েবিনারে ই-সিগারেটসহ সকল ভ্যাপিং এবং হিটেড তামাকপণ্যের উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধের আহবান জানানো হয়। এছাড়া সিগারেটের মতো বিষাক্তপণ্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকায় থাকাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেন বক্তারা। তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ১৯৫৬ সালের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে তামাকপণ্যকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার দাবি জানান।
[৬] ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখেন, ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের বাংলাদেশ কান্ট্রি এডভাইজার মো. শফিকুল ইসলাম, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের মুখ্য পরামর্শক ড. মো. শরিফুল আলম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটিয়ের প্রজেক্ট ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ইপিডেমিওলজি এন্ড রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :