নজরুল কবির: হেফাজতে ইসলাম নামক মৌলবাদী যে সংগঠনটি রয়েছে, তার আমীর ছিলেন শাহ আহমদ শফী। চট্টগ্রামের হাটহাজারী কওমি মাদ্রসার মহাপরিচালক ছিলেন। মৃত্যুর প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পূর্বে তাঁরই অনুসারী ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে তাঁকে অপসারণ করে শূরা কমিটি। এই ব্যক্তি কতটা সাম্প্রদায়িক, নারী বিদ্বেষী, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও মানবতাবিরোধী ছিলেন, তা এদেশের প্রায় প্রতিটি মুক্তমনা সচেতন মানুষই জানেন। তবে মনে হয় পুরোটা জানে না আমদের কতিপয় গণমাধ্যম কর্মীরা।
এই ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর ভোটের রাজনীতির অংকের হিসেব মেলাতে ব্যস্ত ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিগত দেউলিয়াত্ব দেখতে যেমন তার পাননি, তেমনি গণমাধ্যম কর্মীদের ‘কথিত’ শীর্ষ নেতারাও পাননি। এই ব্যক্তির জানাজার সংবাদ সংগ্রহের জন্য অফিসের দেওয়া দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত ছিলেন চট্টগ্রামে রিপোর্টার ও চিত্রগ্রাহকরা। সে সময় ইসলামের হেফাজতের কথিত দাবিদাররা বাধা দেন গণমাধ্যম কর্মিদের। লাঞ্ছিত করেন। ছিনিয়ে নেন তাঁদের অফিসিয়াল পরিচয় পত্র। ঘটনাটি ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ এর।
এরপর বারবার তা ফেরত চাইলেও তা দেননি চিহ্নিত ওই সন্ত্রাসী চক্র। চট্টগ্রামের ক্রিয়াশীল সাংবাদিক সংগঠনের তরুণ নেতৃত্বরা প্রতিবাদ-বিক্ষোভ-বিবৃতি দেন। কাজ হয় না। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সহায়তা চাওয়া হয়। তারা যোগাযোগ করে লাভ হয় না। পরে যখন ভুক্তভোগীরা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন হাটহাজারী থানা পুলিশের মাধ্যমে সন্ত্রাসী চক্র এ কয়টি পরিচয় পত্র ফেরত দেয়। আমার মনে পড়ে গেলো ২০০৪-২০০৫ সালের কথা। আমি তখন চ্যানেল আইতে। কুমিল্লায় গ্রেফতার হওয়া এক জঙ্গির জবানবন্দী গ্রহণ করি আমি। তাঁর ভাষ্যমতে, সে ময়মনসিংহের ভালুকায় এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রসায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ নেয়। যায় মধ্যে একে-৪৭ চালানোর ট্রেনিংও ছিলো এবং সে-ই জানায়, হরকাতুল জিহাদ ভেঙে কীভাবে তামিরাতে দ্বীন নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনের জন্ম হয়। সে জানায় আহমদ শফী তথা বড় হুজুর কীভাবে বয়ান করেন জঙ্গি তৎপরতায় তথা জিহাদে অংশ নিতে হবে। ওই জঙ্গির বক্তব্যের সূত্র ধরে আমি সিরিজ অনুসন্ধানী রিপোর্ট করি। যা চ্যানেল আইতে প্রচার হয়।
প্রথমবারের মতো হাটহাজারী মাদ্রসায় প্রবেশ করে সে সময় টিভি ক্যামেরা। কীভাবে তা পরে একসময় বলবো। প্রমাণ করতে সক্ষম হই চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা মীর নাসিরের ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে এবং এই শফি হুজুুরের সহায়তায় কীভাবে জঙ্গি প্রশিক্ষণ হয়। শফী হুজুর সে সময় সাক্ষাৎকারে এক পর্যায়ে স্বীকার করেন ক্যামেরার সামনে, তিনি জিহাদের জন্য ছাত্রদের তালিম দেন। সেসব গল্প হয়তো অন্য সময় বলবো।
শুধু এতোটুকু বলি, হাটহাজারী মাদ্রাসার পাশাপাশি ভালুকায় জঙ্গি প্রশিক্ষণের বিষয়টিও প্রমাণ হয়। পরে হরকাতুল জেহাদের মুফতি হান্নানের অন্যতম সহযোগী ও তামিরাতে দ্বীন জঙ্গী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আব্দুর রউফকে র্যাব গ্রেপ্তার করে সাতক্ষীরা থেকে দলবল-সহ। ওই আব্দুর রউফ এবং তাঁর সহযোগীরা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামি এবং বর্তমানে এই মামলায় রউফ মৃত্যুদণ্ডের সাজা নিয়ে জেলে আছে। অন্যদিকে শফি হুজুরের দোয়া নিয়েছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতারা। ঢাকায় কোনো কোনো গণমাধ্যম কর্মীকে দেখেছি তার মৃত্যুতে শোকের মাতম করতে। ফলে গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে আমি যেমন আয়নায় নিজের মুখটি দেখে নিলাম, আপনারাও একটিবার দেখে নিন, প্লিজ। ফেসবুক থেকে