শোয়েব সর্বনাম: ইলিশমূলক আলোচনা দিয়া দুই দেশের বাঙালিদের চরিত্রগত ফারাক তুলে ধরা হচ্ছে। প্রথমেই বলে রাখি, বাংলাদেশে শুধু ইলিশ না, ইলিশের লগে লগে ঘোরে যে সার্ডিন, সেইটারে ইলিশ বলে চালায়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পিস পিস করে কেটে বিক্রি করা হয়। আমার বন্ধু-বান্ধবরা সেগুলার ছবি তুলে বহু পোস্ট দিছে, ফেসবুকে খুঁজলে পাওয়া যাবে। গরিবদের ইলিশ সংস্থান ব্যবস্থাপনা এই শহরের বাজারগুলাতে আছে। কলকাতায় শুধু বড় ইলিশগুলো গেছে দেখে ওরা সবাই ভাবছে ইলিশ বুঝি ওই রকমই হয়। একা একটা ইলিশ খাওয়ার জন্য ৬০০ গ্রাম ওজনের ডিমছাড়া ইলিশই যথেষ্ট। এই দেশের বাজারগুলোতে ৬-৭০০ গ্রাম ওজনের যে ইলিশ পাওয়া যায় সেগুলো কলকাতার দুই পিসের চেয়েও সস্তা। সমস্যা অন্যখানে। সমস্যা আমাদের অভ্যাসে। পদ্মা-মেঘনা আমাদের বাড়ির পাশে অবস্থিত। সমুদ্রঘেষা দেশ হওয়ার কারণে প্রায় সকল নদীতেই কমবেশি ইলিশের যাতায়াত আছে। বর্ষায় লোকেদের বেশি ক্ষুধা লাগলে জাল নিয়ে নৌকায় উঠে বসতো, অল্প কিছু মাছ ধরে প্রতিবেশীদের দিয়ে টিয়ে বাকিটা নিজেরা খেয়ে ঘুম দিতো।
ইলিশ শুধু মাছ নয়, এই দেশে ইলিশ একটা উৎসব। ইলিশ কাটার ঘ্রাণ নেওয়ার জন্য লোকেরা রান্নাঘরে উবুত হয়ে বসে থাকে। সেখান থেকে কেউ একটা টুকরা ধুয়ে নিয়ে সর্ষে মাখায়ে কলাপাতায় মুড়ে ভাতের মাড় ঝরানোর সময় পাতিলের মুখে দিয়ে রাখে। এই লোকের পিস কিনলে পোষাবে? বাঙালি পারলে ইলিশ কাঁচাই খায়। সন্ধ্যায় টেবিলে হুইস্কির সাথে ইলিশের তেলে মাখা মুড়ি আর ভাজা ইলিশ খেতে গিয়ে মাঝে মধ্যে আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে, মুঘলদের এতো সুস্বাদু সব রেসিপি আছে, অথচ ইলিশ নিয়া তাদের কোনো রেসিপি নেই।
হুমায়ূন আহমেদের ধারণা, দিল্লি গিয়ে থাকতে হইতো ওই মুঘল লোকেদের, মাছ পাবে কই, আশেপাশে নদ নদী নেই। আমার সন্দেহ, ইলিশ মুঘলদের কাছে এমন সুস্বাদু কিছু বলে মনে হয় নাই। ইলিশ উপভোগের এইসকল সাংস্কৃতিক রেসিপি তাদের কেউ বলে দেয়নি। ইলিশ একটা সাংস্কৃতিক খাবার। বাঙালি ইলিশ ভোগ করে না, বাঙালি ইলিশ উপভোগ করে। পিস করে ইলিশ বিক্রির সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এইদেশে সহসা ঘটতেছে না। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :