শিরোনাম
◈ অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে সাড়া? বিএনপি–জামায়াতের মধ্যে আলোচনা উদ্যোগ ◈ আজ ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ◈ ভয়ানক অভিযোগ জাহানারার, তোলপাড় ক্রিকেটাঙ্গন (ভিডিও) ◈ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও সময়মতো জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতের আহ্বান বিএনপির স্থায়ী কমিটির ◈ কমিশনের মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা, আপ্যায়ন বাবদ ব্যয়  ৪৫ লাখ টাকা ◈ ভার‌তের কা‌ছে পাত্তাই পে‌লো না অস্ট্রেলিয়া, ম‌্যাচ হার‌লো ৪২ রা‌নে ◈ শুল্ক চুক্তির অধীনে মা‌র্কিন উ‌ড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি বিমান কিনছে বাংলাদেশ ◈ টিটিপাড়ায় ৬ লেনের আন্ডারপাস, গাড়ি চলাচল শুরু শিগগিরই (ভিডিও) ◈ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ বার্তা ◈ ভালোবাসার টানে মালিকের সঙ্গে ইতালি যাওয়া হলো না সেই বিড়াল ক্যান্ডির!

প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৮:৪৫ সকাল
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৮:৪৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মোগল জমানাকে অস্বীকার করে কী প্রমাণ করতে চান যোগী ?

ডেস্ক রিপোর্ট: ‘মোগল বাদশাহ্-রা কখনওই ভারতের নায়ক হতে পারেন না’, এই মন্তব্য করে আবার নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী যোগী অদিত্যনাথ।

তাজমহলের শহর আগ্রায় ‘মুঘল থিমে’আধারিত একটি মিউজিয়ামের নাম বদলে মারাঠা নায়ক শিবাজীর নামে রাখার পর তিনি এই মন্তব্য করেন।

মুসলিম শাসনের চিহ্ন আছে, এর আগেও আদিত্যনাথের সরকার রাজ্যে এমন বহু জায়গার নাম পাল্টে দিয়েছে - মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সরাসরি মুঘল শাসকদের আক্রমণ করে বিবৃতি দিয়েছেন। আর ভারতের ইতিহাসবিদরা অনেকেই বলছেন, দেশের সংখ্যালঘু মুসলিমদের কোণঠাসা করার জন্য এটা একটা সুপরিকল্পিত নকশারই অংশ।

বছরচারেক আগে আগ্রায় মোগল আমলের নানা স্মারক ও নিদর্শন নিয়ে একটি মিউজিয়াম তৈরির জন্য শিলান্যাস করেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব।

কিন্তু সোমবার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ওই মোগল মিউজিয়ামের নামকরণ করা হবে দাক্ষিণাত্যের মারাঠা রাজা শিবাজীর নামে - যিনি মুঘলদের বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধ করে গেছেন।

এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ দাবি করেছিলেন, মোগলরা ভারতে হানা দেয়ার আগে হিন্দুদের আর্থিক শক্তি সারা দুনিয়ার মোট অর্থনীতির এক তৃতীয়াংশেরও বেশি ছিল - কিন্তু তার পর থেকেই তা হু হু করে কমতে শুরু করে।

ভারতের ইতিহাস যাকে ‘আকবর দ্য গ্রেট’ নামে চেনে সেই বাদশাহ আকবরও ‘মোটেও কোনো গ্রেট নন’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

রাজপুত নায়ক মহারানা প্রতাপকে উদ্ধৃত করে তিনি গত বছরই বলেছিলেন, ‘বিধর্মী ও বিদেশি মুঘলদের কিছুতেই ভারতের বাদশাহ হিসেবে মানা যায় না’ - এবং দাবি করেছিলেন ‘আকবরের চেয়ে রানা প্রতাপ ছিলেন অনেক বেশি মহান শাসক ও যোদ্ধা’।

এতেই শেষ নয়, আদিত্যনাথ সরকার এলাহাবাদ শহরের নাম পাল্টে রেখেছে প্রয়াগরাজ, তার আমলেই রাজ্যের আইকনিক মুঘলসরাই রেল স্টেশনের নতুন নামকরণ করা হয়েছে বিজেপির তাত্ত্বিক নেতা দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নামে।

ভেঙে ফেলা বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে মহাধূমধামে।

ভারতের নামী ঐতিহাসিক ও ‘দ্য মুঘলস অব ইন্ডিয়া’ বইয়ের লেখক হরবনস মুখিয়া বলছিলেন, মুঘলদের উত্তরাধিকার অগ্রাহ্য করার এই সচেতন চেষ্টার মধ্যে দিয়ে আসলে মুসলিমদেরই অপরাধী সাজানোর চেষ্টা করছে বিজেপি।

অধ্যাপক মুখিয়ার কথায়, ‘যে কোনো মেজরিটারিয়ান শক্তির ঠিক এই উদ্দেশ্যটাই থাকে, দেশের সংখ্যালঘুদের অপরাধী সাজাও, তাদের রাক্ষস প্রতিপন্ন করো!’

‘ইতিহাসে এ জিনিস আমরা বারবার ঘটতে দেখেছি, সংখ্যালঘুদের শত্রু বানানো হয়েছে এবং ‘দ্য আদার’ হিসেবে প্রান্তিক করে তোলা হয়েছে।

‘এজন্যই ভারতের শাসকরা আজ মুঘলদের ইতিহাসে ফিরে গিয়ে বলার চেষ্টা করছেন মুসলিমরা বরাবরই আসলে এরকম, তারা লুণ্ঠনকারী, তারা ভিনদেশি, তারা এই, তারা ওই এবং তারাই সেই ‘দ্য আদার’!’

এর আগে আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের বিরুদ্ধে ও ১৯৩০র দশকে জার্মানিতে ইহুদীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের চেষ্টা কিছুটা সফল হয়েছিল বলেও জানাচ্ছেন অধ্যাপক মুখিয়া।

আর জেএনইউ-র অধ্যাপক ও নেহরু মিউজিয়ামের সাবেক প্রধান ইতিহাসবিদ মৃদুলা মুখার্জির কথায়, এই যে মুঘল-ঘেঁষা নামগুলো বদলে দেয়া কিংবা ইতিহাস থেকে মুসলিম শাসকদের মুছে ফেলার চেষ্টা, এটা আসলে এক ধরনের ‘এভ্রিডে কমিউনালিজম’ বা দৈনন্দিন সাম্প্রদায়িকতা।

‘আসলে এই যে ‘হিন্দুত্ব প্রোজেক্ট’ বা হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, সেটা তো সঙ্ঘের ঘোষিত এজেন্ডার মধ্যেই পড়ে। তারা তো খোলাখুলিই বলে যে তারা হিন্দুরাষ্ট্র তৈরি করতে চায়।’

‘আর সেই এজেন্ডা বাস্তবায়নের মধ্যে যে গভীর একটা অ্যান্টি-মুসলিম বায়াস বা প্রবল মুসলিম-বিদ্বেষ আছে সেটা তো অস্বীকার করা যায় না’, বলছিলেন অধ্যাপক মুখার্জি।

‘এই যে দুম করে এলাহাবাদ শহরের নাম বদলে দিল, কিংবা মুঘলসরাই স্টেশনের নাম রাখল বিজেপি-জনসঙ্ঘের তাত্ত্বিক নেতার নামে - এই ধরনের পদক্ষেপ কিন্তু তারা নিতেই থাকবে।’

‘যেটাকে আমরা বলতে পারি ‘এভরিডে কমিউনালিজম’ বা রোজকার সাম্প্রদায়িকতা!’, বলছিলেন মৃদুলা মুখার্জি।

উত্তরপ্রদেশ সরকার অবশ্য এই ধরনের সমালোচনায় আদৌ বিচলিত, এমন কোনো লক্ষণ দেখায়নি।

বরং বিজেপি নেতারা জোর গলায় বলছেন, ভারতে মাত্র পাঁচ-ছশো বছরের মুসলিম শাসনের বাইরেও এ দেশের একটা গৌরবময় হিন্দু ইতিহাস আছে - সেটা তুলে ধরাটাই বেশি জরুরি।

সূত্র : বিবিসি, নয়া দিগন্ত

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়