মনিরুল ইসলাম: [২] জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, সরকারি সকল হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হউক। তিনি অভিযোগ করেন কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ করোনার প্রভাব এখনও দেশে বিদ্যমান। কতদিন করোনা থাকবে কেউ জানে না। তিনি সরকারকে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার দাবী করেন।
[৩] বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
[৪] দেশে করোনা আক্রান্তের হিসাব তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, ‘করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা এমনকি মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন। এক কথায় করোনা রোগের প্রাদুর্ভাব কমেছে বা কমতে শুরু করেছে এমন কোনও লক্ষণ বাস্তবে লক্ষ করছি না। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা সরকারি হাসপাতাল। এরই মাঝে হঠাৎ করে ঘোষণা দিয়ে কিছু সরকারি হাসপাতাল-যেগুলো কোভিড রোগী চিকিৎসা করতো, সেগুলো ননকোভিড চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। এতে করে বেসরকারি হাসপাতলে ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিতে রোগীরা বাধ্য হচ্ছে। চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে সেখানেও অনেকে চিকিৎসা পাচ্ছে না। সিটের জন্য অনেকে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছেন।
[৫] জি এম কাদের বলেন, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু ছাড়া গত্যান্তর থাকছে না। এটাই বাস্তবতা। কোভিড হাসপাতাল বন্ধ করে, ননকোভিডে রূপান্তর করার এই সিদ্ধান্ত রোগী, বিশেষ করে সাধারণ মানুষকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। আমরা চাই, সরকারি সব হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হউক।
[৬] স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি সরকারের অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতির কথা প্রতিদিন খবরে আসছে, আলোচিত হচ্ছে। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা জনগণ জানছে না। দুর্নীতির জন্য সরকারের অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা নেবেন।
[৭] বিচারবহির্ভূত হত্যার পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিএনপির আমলে দেশে বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড শুরু হয়। বিগত এরশাদ সরকারের আমলে কোন বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড হয়নি।এটা বন্ধ করা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, প্রায়ই কোথাও না কোথাও গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকছে। অনেকক্ষেত্রে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার পরও লাশ পাওয়া যাচ্ছে। ভূক্তভোগী পরিবার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যের মধ্যে গরমিল দেখা যাচ্ছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যখন শুরু হয়েছিল তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে একটি বাহিনী-‘যৌথ বাহিনী’ বিএনপির আমলে সৃষ্টি করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আইন করে র্যাব গঠন করা হয়েছিল। তারা এই কাজ করতো। যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হতেন, তারা সমাজবিরোধী ও আইনবিরোধী হিসেবে বিবেচিত হতেন। মামলা জট, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দোষী ব্যক্তিরা বিচার এড়িয়ে যেতে পারতো। সে কারণে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দ্রুততার সঙ্গে বিচার হচ্ছে বলে গ্রহণযোগ্য হতো। সাধারণ মানুষ ততটা খারাপ মনে করতো না।
[৮] সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, অনেক সরকারি বাহিনী দ্বারা নির্দোষ লোককে হত্যা করা হচ্ছে। ব্যক্তিস্বার্থে ভাড়াটিয়া বাহিনী হিসেবে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আসছে, মামলায় প্রমাণ হচ্ছে। মাদকবিরোধী অভিযান, চরমপন্থীদের দমন, সন্ত্রাসী দমন, ধর্মীয় উগ্রপন্থী দমনের নামে পরিচালিত কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা সংগঠিত হয়। এখন রাজনৈতিক কর্মী, বিভিন্ন পেশার কর্মজীবীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রোষের শিকার হয়ে বন্দুকযুদ্ধ, গুমের শিকার হচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।