সাগর মল্লিক, ফকিরহাট প্রতিনিধি : [২] বাগেরহাটের ফকিরহাটে পানিতে ভাসমান পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও সবজি চাষ বেশ জনপ্রিয় বেশ কয়েক বছর ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার বিলাঞ্চলে গত কয়েকবছর ধরে ভাসমান বেডে সবজি চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুধু উদ্যোগ থেমে নেই এরইমধ্যে সফলতাও পেয়েছেন অনেকেই। জলাবদ্ধ এলাকায় বেড বা ধাপে সবজির চাষ করে এলাকায় সবজির চাহিদা মিটিয়ে স্বল্প সময়ে এই প্রকল্পে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ থাকায় উপজেলার চাষিদের উৎসাহিত করে এই চাষের সম্প্রসারণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ফকিরহাট কৃষি বিভাগ।
[৩] ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলার বেশিরভাগ জমিতে কৃষকেরা জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন। শুধু সবজি চাষ নই,সকজী চাষের পাশাপাশি আমন ধানের চাষ ও করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার চাষিদের আত্মকর্মসংস্থান ও পরিবারের আয়ের সুযোগ করে দিতে ২০১৩ সাল থেকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধিনে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে ‘বন্যা ও জলাবদ্ধ প্রবণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন অতিযোজন কৌশল হিসেবে ভাসমান সবজি ও মসলা উৎপাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প’ গ্রহণ করেন। ওই প্রকল্পের আওতায় রাজিহার ইউনিয়নের বাশাইল গ্রামে চাষি সমন্বয়ে একটি সমিতির মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণদান, বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ, বেড তৈরির খরচ ও বিভিন্ন কৃষি উপকরণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কয়েক বছর আগে থেকেই ফকিরহাট উপজেলার অনেক চাষিই বেড বা ধাপে সবজি উৎপাদন করে আসছিলেন। বিভিন্ন সহায়তা পাওয়ার পরে তাদের সঙ্গে অন্য এলাকার চাষিদেরও বেডে সবজি ও মসলা চাষে আগ্রহ বেড়েছে। বর্তমানে ফকিরহাট উপজেলায় ৫হেক্টর বেডে সবজি ও মসলা চাষ হচ্ছে।
[৪] উপজেলার সদর ইউনিয়নের চাষি রজব আলী গাজী জানান, আমি ৩বছর ধরে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ করে আসছি। বর্তমানে ৮ টি বেডে লাল শাক,কলমি শাক, ঢেড়স, মিষ্টি কোমড়া, লাউ ও হলুদের চাষ করছি। প্রথম দিকে কিছুটা সংকোচবোধ করেছিলাম কিন্তু উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বর্তমানে অনেকটাই সাবলম্বি।
[৫] অপর চাষি লখপুর ইউনিয়নের জয়দেব বিশ্বাস জানান, প্রত্যেকটি ভাসমান ধাপে চার বার চারা উৎপাদন করা যায়। প্রথমবার একমাস পরিচর্যার পর চারাগুলো বিক্রি করলেও পরবর্তীতে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই পুনরায় চারা বিক্রি করা যায়। আমার বর্তমানে ৬টি বেডে সবজি চাষ করছি। বন্যা বা অতিবৃষ্টি হলে এই পদ্ধতিতে চাষ করলে কোন ক্ষতি হয় না।
[৬] ফকিরহাট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তন্ময় দত্ত বলেন, গত তিন বছরে ভাসমান বেডে সবজি চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের সহায়তা ও উদ্ভুদ্ধকরণ করছি। আমাদের পার্শ্ববর্তী জেলা গোপালগঞ্জ সেখানে ফকিরহাটে কৃষকদের নিয়ে প্রযুক্তি দেখিয়েছি। যার ফলে এ অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে আগের থেকে বেশি আগ্রহ দেখা গিয়েছে।
[৭] ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ নাসরুল মিল্লাত জানান, ধাপের ওপর সবজি চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর তাদের বিনামূল্যে বীজ, সারসহ বিভিন্ন উপকরণ দেয়া হয়। উপজেলায় মোট ৫০ জন চাষিদের এই প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিলো। এখন ৫০ জনের বাইরে অনেকে নিজ উদ্যোগে বেডে চারা উৎপাদন করছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে বিভিন্ন জাতের সবজির চারা চাষের কার্যক্রম শুরু করা হয়। চাষিরা এ সময় বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কচুরিপানার বড় বড় দলকে একত্রিত করে রাখেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তাতে পচন ধরে। পচন ধরা কচুরিপানাই ধাপ হয়। প্রতিটি ধাপেই পর্যাপ্ত জৈবসারের কারণে সবজির চারাগুলো অত্যন্ত উর্বর হয়। বিশেষ করে ভাসমান বেডে সবজি চাষ আমাদের চলমান প্রক্রিয়া । আশা রাখি খুব দ্রুত আমরা এ অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে আরো প্রশিক্ষণ ও সহায়তার মাধ্যমে ভাসমান বেডে চাষাবাদ করতে আগ্রহী করাতে পারবো। সম্পাদনা : হ্যাপি