রাশিদ রিয়াজ : আশুরা এলে এ বিখ্যাত কবিতার লাইনটি আমাদের মনে ঘুরপাক খায়। আশুরা এলে এর বিশাল আর অনেক তাৎপর্যময় ঘটনা আমাদের চার পাশে ঘুরপাক খায়। পৃথিবী সৃষ্টির পর আশুরার দিনটি শত সহস্রবার ঘুরে ঘুরে এসেছে, আসবে। তাই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার অভাবও হওয়ার কথা নয়। তাৎপর্যময় দিনটি হচ্ছে সেই দিন যেদিন ঘটে যায় কারবালার ময়দানের ঘটনা। চুম্বক অংশটুকু বর্ণনার চেষ্টা করছি :
কারবালার মাঠে একে একে সবাই যখন শাহাদাতের শূরা পান করছিলেন, তখন ইমাম হোসাইন (রা) কেবল একা দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি ইয়াজীদ বাহিনীকে লক্ষ্য করে প্রথমেই জিজ্ঞেস করেন কেন তোমরা আমাকে হত্যা করতে চাও? আমি কি কোন অপরাধ করেছি? এ কথা শুনে ইয়াজিদের সৈন্য বাহিনী বোবার মতো দাঁড়িয়ে রইল। এরপর ইমাম হোসাইন (রা) বললেন আমাকে হত্যা করলে আল্লাহ’র কাছে কী জবাব দেবে তোমরা? কী জবাব দেবে বিচার দিবসে মহানবীর (স) কাছে? এ কথা শুনেও তারা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল। আবার ইমাম বললেন ‘হাল্ মিন্ নাসিরন্ ইয়ানসুরুনা? আমাদের সাহায্য করার মতো কি তোমাদের মাঝে একজনও নেই? এ কথা শুনেও ইয়াজিদের সৈন্যরা বোবার মতো দাঁড়িয়ে রইল। এরপর ইমাম হোসাইন (রা) যে কথাটি বলেছিলেন তা খুবই হৃদয়স্পর্শী বেদনাবিধূর। ইমামের শেষ আহ্বানটি ছিল ‘আলাম্ তাসমাও? আলাইসা ফী কুম মুসলিমু? আমার কথা কি শুনতে পাও না? তোমাদের মাঝে কি মাত্র একজন মুসলমানও নেই?
ইমাম হোসাইন (রা)’র শেষোক্তিটি মাত্র একটি ছোট্ট বাক্য। তবে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে তা হবে খুবই বেদনাবিধূর। প্রকৃত পক্ষে ইমাম হোসাইন (রা) আসল এবং নকলের পার্থক্যটা পরিষ্কার করে দেখিয়ে গেছেন। তাঁকে ও তাঁর সঙ্গী সাথীদের যারা শহীদ করতে এসেছিল, যারা তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল তারা ছিল নকল মুসলমান।
ইমাম জাফর সাদেক (আ.) বলেছেন, “মুসলমানের জন্য প্রতিটি ভূমিই কারবালা আর প্রতিটি দিন হচ্ছে আশুরা।”
‘ভূমি’ বলতে এখানে মানবদেহ আর ‘প্রতিটি দিন’ বলতে প্রতিটি মুহূর্তকেই বুঝানো হয়েছে। কারবালার সেই ভয়াবহ দৃশ্যের কথা একবার মনে করুন! আপনি নিজেই কারবালায় একজন অবরুদ্ধ, ওই সময় আপনার মানসিক অবস্থা চিন্তা করে দেখুন।
একমাত্র আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত, পৃথিবীর কোন মোহ, লোভ, লালসা, হিংসা, স্বার্থপরতা ইত্যাদি আপনাকে কি গ্রাস করতে পারবে? পরম করুনাময় আল্লাহতালার প্রতি আপনার তাকওয়া ও নির্ভরশীলতায় কি কোন তুলনা হয়? এমনি অবস্থায় আপনি হবেন ধীর, স্থির, অচঞ্চল, ও অটল। আপনি হবেন সম্পূর্ণরূপে একজন ‘সেরাতুল মুস্তাকিমের’ পথিক। একটি নিঃশ্বাসও তখন আপনি আল্লাহ্র স্মরণ ব্যতীত গ্রহণ করবেন না। প্রতিটি মুসলমানকেও তার পার্থিব জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ্র তাওয়াক্কালের মধ্যেই কাটাতে হবে। আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে, আল্লাহ্র স্মরণে, আল্লাহরই নির্দেশিত পথে মুসলমানের প্রতিটি কর্ম ও চিন্তা পরিচালিত হতে হবে। এ হচ্ছে মুসলমানদের কারবালার শিক্ষা।
‘কাতলে হুসাইন আসল মে মারগে ইয়াজিদ হ্যায়, ইসলাম জিন্দা হোতা হায় হার কারবালা কে বাদ।’ হুসাইনের নিহত হওয়ার ঘটনা আসলে ইয়াজিদেরই মৃত্যু, ইসলাম প্রতিটি কারবালার পর পুনরুজ্জীবিত হয়। মাওলানা মোহাম্মাদ আলী জওহারের এ উক্তি আমাদের জীবনে বার বার ঘুরে আসে কিন্তু তা থেকে আমরা নিজেকে কতটা সমৃদ্ধ করতে পারি সেখানেই কারবালার তাৎপর্য।
আপনার মতামত লিখুন :