প্রভাষ আমিন: পুরোপুরি আতঙ্ক না হলেও বাঁচতে হলে করোনাকে একটু ভয় পেতেই হবে। একটু ভয় না পেলে মানুষ সতর্ক থাকবে না। কিন্তু করোনার গ্রাফ যখন উর্ধ্বমুখী, সচেতনতার গ্রাফ তখন হাওয়া। জীবন আর জীবিকার লড়াইয়ে জীবিকার জয় হয়েছে। আমাদের জীবন এখন একেবারেই স্বাভাবিক। ‘নিউ নরমাল’এর যে ধারণা তাও নেই বাংলাদেশে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর সবকিছুই খোলা। সবকিছুই এখন চলছে, রাখে আল্লাহ মারে কে স্টাইলে। আল্লাহ যতোদিন হায়াত দিয়েছেন, ততোদিনই বাঁচবো, এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে সবাই জীবিকাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে সফল হলেও সে সাফল্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কোনো অবদান নেই বললেই চলে। বরং উনি মাঝে মাঝে উল্টাপাল্টা কথা বলে জাতিকে বিনোদন দিয়েছেন। তিনি একজন ব্যবসায়ী, বিশেষজ্ঞ নন। কিন্তু তিনি কথা বলেন বিশেষজ্ঞ স্টাইলে। সর্বশেষ তিনি বলেছেন, ‘ভ্যাকসিন আসুক না আসুক করোনা ভাইরাস বাংলাদেশ থেকে এমনিতেই চলে যাবে। ‘তার এই মন্তব্য নিয়ে তোলপাড় গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বিশেষজ্ঞদের সবাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই ধারণার বিরোধিতা করেছেন। এমনি এমনি করোনা চলে যাওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। থাকলে কেউ আর করোনা নিয়ে এতো আতঙ্কে থাকতেন না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাই বলুন, টিকা না আসা পর্যন্ত করোনা নিয়ে স্বস্তিতে থাকার সুযোগ নেই।
তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথায় ভরসা করে আপনি স্ব্যাস্থবিধির হাল ছেড়ে দেবেন না। ব্রিফিং নেই বলে ভাববেন না, করোনাও নেই। বরং করোনার জন্য যা যা স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলুন। করোনাকে হালকাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বা স্বজন হারিয়েছেন; তারা জানেন করোনা কতোটা ভয়ঙ্কর। করোনা থেকে বাঁচতে কী কী করতে হবে, তা আপনারা সবাই জানেন। তবুও আরেকবার মনে করিয়ে দেই। সম্ভব হলে বাসায় থাকুন। বাইরে বের হতে হলে, একটি পরিষ্কার মাস্কে মুখ ও নাক ঢাকুন, চশমায় চোখ ঢাকুন। সম্ভব হলে হাতে গ্লাভস পড়ুন। বাইরে বা অফিসে কোনো জনসমাগমে যাবেন না। আপনার তিন ফুটের মধ্যে যাতে কেউ আসতে না পারে, তা নিশ্চিত করুন। বাসায় ফিরে গোসল করুন এবং পরণের সব কাপড় ধুয়ে ফেলুন। অফিসে বা বাসায় হাত সবসময় পরিষ্কার রাখুন। ভুলেও নাকে, মুখে বা চোখে হাত দেবেন না। মনে রাখবেন, আপসার সবচেয়ে বড় শত্রু আপনার নিজের হাত। কারণ কোনো করোনা বহনকারী আপনার মুখের ওপর হাঁচি কাশি না দিলে করোনা আপনার শরীরে ঢুকতে পারে শুধু আপনার হাতের মাধ্যমে। করোনা মোকাবেলায় গরম পানি খান, মশলা চা খান, ভিটামিন সি খান, পুষ্টিকর খাবার খান।
ভুলেও ঠাণ্ডা পানি, বরফ, ফ্রিজের খাবার বা আইসক্রিম খাবেন না। পরিমিত খাবারের সাথে পরিমিত ঘুমও দরকার। সম্ভব হলে হালকা ব্যায়াম করবেন, বিশেষ করে ফুসফুসের ব্যায়াম। এতো সাবধানতার পরও আপনি আক্রান্ত হতে পারেন। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। পরিচিত কোনো ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। চেষ্টা করুন, বাসায় বসে থেকেই সুস্থ হয়ে যেতে। হাসপাতালে যদি যেতেই হয়, তাহলে কোন হাসপাতালে যাবেন, ঠিক করে রাখুন। এখন করোনার চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। খালি সাবধান থাকতে হবে। আর সময়মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জীবিকাও চলবে, জীবনও বাঁচাতে হবে। আরেকটা কথা, বাসার বয়স্ক এবং অসুস্থ মানুষদের সাবধানে বিচ্ছিন্ন রাখুন। সরকার ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি তুলে নেয়ার পর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। সেটি দিয়েই শেষ করছি লেখাটি- ‘সরকার যতোই লকডাউন তুলে দিক, আপনি ততোই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। মনে রাখবেন আপনি সরকারের কাছে শুধুমাত্র একটি সংখ্যা, কিন্তু আপনার প্রিয়জনদের কাছে আপনিই পুরো পৃথিবী।’ ফেসবুক থেকে