মুজতবা হাকিম প্লেটো: মুসলিমলিগার মুজিব আর বাঙালি জাতীয়তাবাদী বঙ্গবন্ধু সব চরিত্র দেখে আমার কাছে কখনো কখনো অন্য এক চরিত্র ঝলকে ওঠে। রাজনৈতিক মতাদর্শগুলোর মোড়কে তাকে যেভাবে আঁকা হয়-তার থেকে তিনি কিছুটা আলাদা। ইদানিং খুব বেশি করে ব্যক্তি বন্দনা হচ্ছে। এটা ভালোবাসার প্রকাশ নয়। এটা মূলত তার রাজনীতিকে পাশ কাটানোর ফন্দি। সেটা শেখ হাসিনাকে ঘিরেও হচ্ছে। শেখ মুজিবের রাজনৈতিক সংগ্রামকে ধারণ করায় তার দলেরও একটা অংশের সমস্যা থাকায় এমনটা হচ্ছে। প্রবল ব্যক্তি পূজা দিয়ে রাজনৈতিক সংগ্রামটাকে পায়ে দলে দিতে চান তারা।
শত্রু-মিত্রর যাবতীয় তথ্য-উপাত্তগুলো যদি একসাথে দেখেন তাহলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে। তিনি সংগ্রাম করেছেন, দাবি আদায় করেছেন। এ নেতার চেতনা বিদ্বেষ প্রধান ছিলো না। আবার কোনো দিকে বাড়তি ঝুঁকে পড়ায়ও ছিল দারুণ কুণ্ঠা। এর প্রভাব বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি গঠনে তার ভূমিকায় আমরা পরতে পরতে দেখতে পাব। রাষ্ট্র পরিচালনায় দেশি-বিদেশি টানাপোড়েনে অনেক কিছুই করতে হয়-যা হয়ত ব্যক্তিনেতার আকাক্সক্ষা সীমার বাইরে। রাষ্ট্রগঠনে তাকে ঘিরে অনেক মিথ্যাচারও রটানো হয়েছে। সচেতনভাবে এসব ব্যাপার দূরে ঠেলে বিচার করলে তার ব্যক্তিগত তাগিদটা হয়তো উঠে আসবে। খুবই প্রত্যন্ত গ্রাম্য অঞ্চল থেকে উঠে আসার পরও এই নেতার সহজাত প্রবনতায় ‘লোকাল পলিটিক্স’ প্রাধান্য পায়নি।
তার রাজনীতিতে যে ‘দাবড়ানি’ দেওয়ার ব্যাপার ছিল, সেটা খুব স্পষ্ট। তার আত্মজীবনীতে পুরান ঢাকার কোনো এক মস্তানের প্রসঙ্গে সেটা বলেও গেছেন। কিন্তু সেই দাবড় দেওয়াটা যতটা দৈহিক তত মানসিক নয়- যে কারণে বিদ্বেষপ্রবণ নন। তার নব রাষ্ট্রের অঙ্গে অঙ্গে তাই কুটিল হিসেবি বাছ-বিচার চোখে পড়ে কম। এখানেই অন্যদের থেকে তার রাষ্ট্রচিন্তার ফারাক। সেটা যে সফল হয়নি তা সপরিবারে জীবন দিয়ে প্রমাণ পেয়েছেন। কিন্তু আপন আয়নায় আস্থা রেখে সিঁড়ি বেয়ে তার নেমে আসা নিচে নামা নয়, তার বিদ্বেষহীন উচ্চতর চৈতণ্যের প্রকাশ। আগামী কোনোকালে এর গুরুত্ব হয়তো বোঝা যাবে। যদিও বিশ্বরাজনীতি, বড় গণতন্ত্রও রাজনৈতিক জয় লাভে ব্যক্তিহত্যায় মাতে, তা জানলেন সিঁড়ি দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ার সময়। তিনি কখনোই কমিউনিস্ট ছিলেন না। তবে মায়ের প্রতি অনুরাগের মতোই সব বাঙালি ভাতের কষ্টটা অনুভব করতে পারে। সমাজ বিকাশে পুঁজি সঞ্চয়ানের চাইতে সবার মুখে ভাত দেওয়ায়ই ছিলো তার বড় তাগিদ। এখানেই তিনি অন্যদের থেকে আলাদা, (হঠাৎ মনে হল তাই লেখা-গবেষকের মত তথ্য উপাত্ত হাতে নিয়ে লিখিনি। বুকিশ কচলানির বাইরে গিয়ে মানুষটাকে অনুভবের চেষ্টামাত্র)।