ইমরুল শাহেদ : সঙ্গীতশিল্পের ত্রিরত্ন - আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, এন্ড্রু কিশোর এবং আলাউদ্দিন আলী, বিশেষ করে চলচ্চিত্র সঙ্গীতে এই তিন জনের অবদান অপরিসীম। তাদের গানের জন্যও অনেক ছবি বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছে।
এই ত্রিরত্নের সৃজনশীলতার তুল্য এখন পর্যন্ত নতুন কেউ সঙ্গীতাঙ্গনে আসেননি বলেই মনে করেন সঙ্গীত বিশেষজ্ঞরা। একজন চলচ্চিত্রকার আফসোস করেই বললেন তারা কোনো উত্তরসুরী রেখে যাননি। কারো প্রতিভার ভাগীদার কেউ হতে পারেননা এ কথা ঠিক, কিন্তু প্রতিভাকে শাণিত করার অনুপ্রেরণাও কারো মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এন্ড্রু কিশোরের গানটি কাকে দিয়ে গাওয়ানো যাবে কোনো বিকল্প নেই হাতে। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল এবং আলাউদ্দিন আলী শুধু সুর স্রোষ্টাই ছিলেন না, নিজের আবেগকে প্রকাশ করার জন্য তারা কলমও ধরেছেন। বিশেষ করে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের তুলনা ছিলেন তিনি নিজেই। যখন কোনো গীতিকবিকে তিনি উপলব্ধিসঞ্জাত বিষয়টি বুঝাতে না পারতেন, তখন তিনি নিজেই কলম ধরতেন।
এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে যুগান্তকারী গান ‘আমার বুকের মধ্যিখানে’র। এই সুরকারের বসবাস ছিল বাঙ্গালি ইথোজের কেন্দ্রবিন্দুতে। নকল গান, নকল সুর পরিহার করে বাংলা সংস্কৃতি, লোকজ, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, জারি-সারি থেকে নিজের ঘরানা তৈরি করেছেন। সহজাতপ্রবৃত্তিকে শাণিত করে অন্যান্যের মধ্যে বাস করেও হয়ে ওঠেছেন অনন্য। একই কথা আলাউদ্দিন আলীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
তিনি লোকজ ও ধ্রুপদ সঙ্গীতের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন নিজের ঘরানা। এই ঘরানা থেকে তিনি সৃষ্টি করেছেন কালান্তরে পৌঁছে যাওয়ার মতো অসংখ্য গান। বাঙালি জীবনের একটি অংশজুড়ে রয়েছে সঙ্গীত বিনোদন। একজন কৃষক মাঠে হাল চাষ করতে করতে গুনগুন করে গান ধরেন।
নৌকার মাঝি গানের মধ্য দিয়ে বৈঠা চালানোর ক্লন্তি ভুলে যান। আলাউদ্দিন আলী এসব বিষয়গুলো অন্তরে ধারণ করতেন। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ভাবতেন মানুষের প্রেম-বিরহসহ মানবিক সম্পর্ক নিয়ে, আর আলাউদ্দিন আলী ভাবতেন সামগ্রিক জনপদের পদচারণা নিয়ে। বুলবুল এবং আলীর ভাবনাকে সন্তোষজনকভাবে বিমূর্ত করে তুলতেন এন্ড্রু কিশোর। নিজের গায়কী দিয়ে এন্ড্রুও ঈর্ষণীয় স্থান করে নিয়েছেন শ্রোতাদের হৃদয়ে।