সাজিয়া আক্তার : কোনো অশুভ বা বিপদের আশঙ্কা অথবা বেদনার অনুভূতি সম্পর্কে অত্যধিক অগ্রীম চিন্তা করে মানসিক অস্বস্তিবোধ থেকে সৃষ্টি হয় ভয় বা ভীতির। ভয় নামক এ অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত নয়, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। মানুষ তো বটেই, সমগ্র সৃষ্টিজগতের সব প্রাণির অন্তরেই ভয় নামক এ অনুভূতি রয়েছে।
অজানা কোনো পরিস্থিতিতে কিংবা যখন আমাদের নিরাপত্তাবোধ হুমকির মুখে পড়ে তখন আমাদের সে চিন্তায় আমাদের শারীরিক এবং মানসিক কিছু পরিবর্তন ঘটে। এ পরিবর্তনসমূহের মাধ্যমেই মানুষ পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক হয় এবং নিজের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে পারে।
ভয়ের দরুণ শরীরে শারীরিক এবং মানসিক দুই ধরনের পরিবর্তন ঘটে। শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে- মাথা ব্যথা, মাথার ভেতর হালকা মনে হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, ঘাড় ব্যথা, মুখ শুকিয়ে আসা বা পিপাসা লাগা, কাঁপুনি হওয়া, হাত-পা ঠান্ডা অথবা অবশ হয়ে আসা, বুক ধড়ফড় করা, হৃৎস্পন্দন দ্রুত হওয়া, শ্বাসকষ্ট, প্রস্রাব আটকে যাওয়া, পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা, পেটের ভেতর অস্বস্তিভাব, ঘুমের ব্যাঘাত ইত্যাদি। আর মানসিক পরিবর্তনগুলোর মধ্যে রয়েছে- মনোযোগে ব্যাঘাত, সিদ্ধান্তহীনতা, অনিশ্চয়তার আশঙ্কা, মৃত্যুভয়, স্মরণশক্তি হ্রাস, অকারণেই বিরক্ত বোধ করা, শব্দের প্রতি অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা, অস্থিরতাসহ প্রভৃতি নানা উপসর্গ।
শরীরের সিমপ্যাথেটিক স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র, হরমোন, বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক যৌগের মাধ্যমে এ পরিবর্তনসমূহ পরিলক্ষিত হয়। মস্তিষ্ক থেকে নিঃসৃত এন্ডোরফিন, ডোপামিন, অক্সিটোসিনের মত কিছু হরমোন এবং নিউরো বার্তাবহসহ এড্রেনালিন গ্রন্থি এবং স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে নিঃসৃত এড্রেনালিন ও নর-এড্রেনালিন জাতীয় রাসায়নিক বার্তাবহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভয়ের দরুণ উদ্ভুত ‘ফ্লাইট’ এবং ‘ফাইট’ রেসপন্সে সাহায্য করে। ফ্লাইট রেসপন্স হচ্ছে ভয়ের বিষয় থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা এবং ফাইট রেসপন্স হচ্ছে ভয় আনয়নকারী ক্ষতিকর বিষয় বা বস্তুকে মোকাবেলা করে তাকে পরাজিত করতে চাওয়ার প্রবণতা। কার্যকর ও সঠিক সমন্বয় সাধনের জন্য ভয় নামক অনুভূতি থেকে উদ্ভুত এ দুই ধরনের প্রতিক্রিয়াই আমাদের জন্য জরুরি।
ভয়ের অনুভূতি যখন নির্দিষ্ট সীমারেখা অতিক্রম করে যায়, তখন উৎপন্ন হয় অস্বাভাবিক ভীতি বা ভয়রোগ বা ফোবিয়া। এটি এক ধরনের উদ্বিগ্নতা তৈরি করে এবং ক্রমে ক্রমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তোলে। অল্প মাত্রার ভয় চারপাশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের সজাগ রাখে ও আমাদের কার্যকারিতা বাড়ায়, যেমন- একজন ছাত্র যদি পরের দিন অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষা নিয়ে নিরুদ্বিগ্ন থাকে, তাহলে তখন পরীক্ষার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সে কিন্তু আর নেবে না। সমস্যা হয় তখনই; যখন অকারণে ভয়ের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় অথবা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখা যায় অথবা দুই রকম ব্যাপারই একই সাথে ঘটে।
এ ধরনের বিভিন্ন ফোবিয়া থেকে মুক্তি পেতে সাইকোথেরাপি, কগনেটিভ বিহেভিয়রাল থেরাপি প্রভৃতির শরণাপন্ন হওয়া যায়। তীব্র ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবনেরও প্রয়োজন পড়ে।
আপনার মতামত লিখুন :