তপু সরকার: [২] ৩ জুলাই সোমবার দুপুরে শেরপুর শহরের পৌরসভার পরিত্যাক্ত পুরাতন ভবনে ৪ কিশোর মিলে এক কোরানে হাফেজকে ৪৭ মিনিট ধরে অমানুষিক মারধর করে। ওই হাফেজের নাম আশিকুর রহমান পাপ্পু (৫)। পিতা-মোহাম্মদ আলী। বাড়ী-সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের কানাশাখোলার বলবাড়ী এলাকায়। নির্দয় প্রহারের ভিডিওটি শেরপুরে ভাইরাল হয়ে যায় মুহুর্তেই। নির্মম এই প্রহারের দৃশ্য দেখে মানুষের আফসোসের শেষ নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ঘৃনার প্রকাশ। গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি টক অফ দ্যা টাউনে পরিণত হয়।
[৩] জানা গেছে শেরপুর শহরের শেরআলী গাজীর পিছনে এক মেয়েকে ভালবাসে ওই হাফেজের বন্ধ শুভ। মেয়েটিকে হাফেজও পছন্দ করে। কোন এক সময় হাফেজ মেয়েটির মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা দেয়। বিষয়টি প্রেমিক শুভ জানতে পেরে ওই হাফেজের উপর ক্ষিপ্ত হয়। নানা সূত্র জানিয়েছে প্রেমিকার কাছে হিরো সাজতেই ওই যুবককে প্রহার করে আবার প্রহারের ভিডিও প্রেমিকার কাছে পাঠায় প্রেমিক শুভ। ঔখান থেকেই কোন ভাবে ভিডিওটি ফাঁস হয়ে গেলে নজরে আসে পুলিশের।
[৪] ঘটনার দিন রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় চারজন অভিযুক্তকে। গ্রেপ্তার কৃতরা হলো শহরের বটতলা এলাকার গোলাম মাহবুবের ছেলে সিয়াম (১৬),আমিনুল ইসলাম বাবুলের ছেলে শুভ (১৬),বেলাল হোসেনের ছেলে আরমান (১৫),সবুজ মিয়ার ছেলে নাহিদ (১৬),সুজন মিয়ার ছেলে সাজেদুল ইসলাম নাসিম (১৭)। অভিযুক্তরা সকলেই স্কুল পড়ুয়া। ভিকটিম বলেছে তাকে ৪৭ মিনিট এভাবে পিটিয়েছে। অনেক বড় ভিডিও কেটেছেটে ৮মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ভিডিও প্রেমিকার কাছে পাঠানো হয়।
[৫] এই ভিডিওতে দেখা গেছে অভিযুক্ত কিশোর গ্যাং ষ্টাররা প্রহার করতে করতে একজন ক্লান্ত হয়ে গেলে আরেক জন পিটিয়েছে। লাল পাঞ্জাবি পড়া শুভর ডানহান সিয়াম হাত দিয়ে মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে গেলে প্যান্টে থাকা বেল্ট খুলে চাবুক বানিয়ে জমিদারি কায়দায় পিটিয়েছে পাপ্পুকে। ছেলেটি বারবার হাত জোড় করে পা ধরে ক্ষমা চাইলেও ক্ষিপ্ত তরুণদের মন গলেনি। বলা হয় কান ধরে উঠবস করতে হাফেজ পাপ্পু অসহায়ের মত তাই করে।
[৬] তারপরও ব্যাল্ট দিয়ে ইচ্ছা মত চাপকানো হয় পাপ্পুকে। এক পর্যায়ে সবাই ক্লান্ত হয়ে গেলে, কোথায়ও বললে মেরো ফেলা হবে এমন শর্তে পাপ্পুকে রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়া হয়। জান বাচাঁতে পাপ্পু নানা বাড়ীতে গিয়ে পালায়। শরীরে অসংখ্য ক্ষত দেখে গতকাল নানা বাড়ীর লোকজন পাপ্পুকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। ভর্তির আগ পর্যন্ত পাপ্পুর অভিভাবকরা কিছুই জানতে পারেনি।
[৭] অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিল্লাল হোসেন জানিয়েছেন, ঘটনা জানার সাথে সাথে ৪ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আদালতে দেওয়া হয়েছে। আদালত চারজনকেই কারাগারে পাঠিয়েছে ।
[৮] শেরপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন বলেছেন কিশোর অপরাধ বাড়ছে। এদের দমাতে পরিবার সমাজ জনপ্রতিনিধি ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। সম্পাদনা: সাদেক আলী