এই এখানে নদীর উপরে করা নতুন ব্রিজের ধারে
যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যডোবা দেখছে আমারই আত্মজা,
কিশোরী উচ্ছলতায় খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে বিনা
কারণে, নদীর কলতানের সাথে গাইছে গুনগুনিয়ে,
অপাপবিদ্ধ মুগ্ধতায় পিছু নিয়েছে নীল প্রজাপতির,
একদিন তার মায়ের হৃদয়ের দুকূল ছাপানো বিস্ময়
হয়ে এক সত্যবান যুবক এসে হাত ধরেছিলে তার।
তারপর যা কিছু ঘটনা, সে ছিল অনুপম ছোটগল্প,
মিলনের সানাই নয় বিরহের বাঁশিই যেখানে সত্য।
হাড়িধোয়া নদীর তীরে শেষবার দেখেছিলাম তাকে
বিচ্ছেদের লগ্ন শুরুর সেই বিরহী গোধূলি বেলায়
কমলা বিষন্নতা গড়িয়ে পড়েছিল ধুসর সন্ধ্যার বুকে।
একপাশে সাপের শরীর নিয়ে চিৎশোয়া রেললাইন,
ট্রেনটা আসার কথা মাগরেবের আজানের কিছু পরে,
দুদিন আগে যখন গ্রাম জুড়ে কানাকানি হয়েছে শুরু
সব ঠিকঠাক, পরানের অধিক তার, চলে যাবে দূরে
ভৈরবের পুল পেরিয়ে আশুগঞ্জের সার কারখানায়,
সেখানেই বড় চাকুরে বাবুর সাজানো গোছানো ঘরে।
টিনের দোচালায় লতানো হলুদ কুমড়ো ফুলের
মুচমুচে বড়া, ঘরের পিছনে ডোবার তেলাপিয়া মাছ,
এককানি ক্ষেতে যত্নে বেড়ে উঠা পিয়াজকলির সাথে
কচি শিমের তরকারি, মাটির মেঝেতে পাতা খেজুর
পাটিতে সুখের ঘরকন্না, দুজনের দেখা স্বপ্নেগুলো
মেথিকান্দা স্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে চলে যেতে থাকে
তার সক্ষমতার সীমানা ছাড়িয়ে উত্তরের এক শহরে।
তখনই শপথ করে, এই এখানেই হাড়িধোয়া নদীর
তীর ঘেঁষে চলা রেললাইনেই ভালবাসার ইতিকথা
বলে শূন্যে মেলাবে তাদের ব্যথিত বিদেহী আত্মারা।
উন্মত্ত যৌবনা হাড়িধোয়ার তীরে করতলের মিলন
সুখ শেষবারের মত অনুভবে নিতে নিতে নির্বাক
যুবক হঠাৎই মন বদলায়-“ঘরে ফিরে যাও তুমি”।
সাঁঝের গম্ভীর নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে জলে পতনের শব্দ
আবছা আলোয় দেখা ঘূর্ণি স্রোতে প্রিয় অবয়ব,
চোখের উপর কালো পর্দা। শ্রাবণের তুমুল বৃষ্টি
ধারায় মিশে যায় বুকের বাদল, বোবা চিৎকারে
প্রিয় নাম জপমালা করে ঘরে ফিরেছিল মেয়েটি।
“দেখেছো মা ঘূর্ণিপাকে কেমন করে হারিয়ে যায়
খড়কুটোগুলো”। মেয়ের ডাকে বর্তমানে ফেরে
মিসেস কামাল ওরফে জরী। স্রোতে ভাসিয়ে দেয়
বুকের দীর্ঘশ্বাসগুলো। চোখ বুজে অনুভব করে
কোন এক দুঃখী যুবকের করতলের শেষের স্পর্শ।