মারুফ কামাল খান: আবদুল মান্নান ভুঁইয়া যখন বিএনপির মহাসচিব ছিলেন তখন ঘরোয়া কথাবার্তায় প্রায়ই অভিযোগ করতেন যে, এ দলের নেতা-কর্মীরা বই-টই পড়ে না। এমনকি তিনি এ পর্যন্ত বলতেন যে, শয়তানগুলা মাসুদ রানার বই-টইও পড়ে না।
বই পড়ে না বুঝলাম, কিন্তু মাসুদ রানার কথা ভুঁইয়া সাহেব কেন বলতেন তা তখন বুঝতাম না। পরে চিন্তা করে বের করেছি।
উনাদের কালের তরুণেরা শরৎচন্দ্র পড়তেন। একটু সাহিত্যমনারা বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ-নজরুল ইত্যাদি পড়তেন। রাজনীতি যারা করতেন এবং যারা একটু প্রগতিশীল ছিলেন তারা ছোটদের রাজনীতি, ছোটদের অর্থনীতি - এ-সমস্ত বই-টই পড়ে শুরু করতেন। এই মেইনস্ট্রিমের বাইরে আবুলআলা মওদুদীর পলিটিক্যাল লিটারেচার পড়া তরুণদের ছোট্ট একটা গোষ্ঠীও ছিল।
উনারা পরিণত বয়সে এসে দেখেছেন যে, তাদের পরের প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের একাডেমিক বই-পুস্তকের বাইরে মূল পাঠ শুরুই হয় রহস্য সিরিজ মাসুদ রানা পড়ে। মান্নান ভুঁইয়া সাহেবদের ভাবনা সেই দেখাতেই এসে আটকে ছিল।
ব্যতিক্রম বাদ দিলে আজকের দিনে নতুন প্রজন্মের তরুণদের গড়পড়তা প্রবণতাই হচ্ছে পাঠ-বিমুখতা। এর বদলে ইন্টারনেটের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে তারা। এই নেট-এর জগতে ইনফরমেশন যেমন আছে তার চেয়েও বেশি আছে ডিসইনফরমেশন ও মিসইনফরমেশন। আছে হোয়াক্স, গুজব, নানান রকম ছদ্মবেশি বিজ্ঞাপন ম্যাটেরিয়াল ও প্রোপাগান্ডা। আজকের তরুণেরা তথ্য ও জ্ঞানের পাশাপাশি সেগুলোও আত্মস্থ করছে। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পরষ্পরবিরোধী তথ্যে তারা বিভ্রান্ত হচ্ছে, কিংকর্তব্যবিমুঢ় হচ্ছে এবং প্র্যাকটিক্যাল ফিল্ডে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে। নেশায় বুঁদ হয়ে আটকা পড়ে থাকছে অন্তর্জালে।
প্রতিবাদ, সক্রিয়তা ও দ্রোহের চরিত্র হারিয়ে ফেলা এই তারুণ্যের নিষ্ক্রিয়তার কারণে আমাদের সমাজে মাসুদ রানা পড়ে বেড়ে ওঠা জেনারেশনই মূলতঃ ম্যাটার করছে এখন পর্যন্ত। এই জেনারেশনের চিন্তা অনেকটাই রহস্যকেন্দ্রিক ও ষড়যন্ত্রগন্ধী।
রহস্যাভিযান ও গোয়েন্দাকর্মকে এই জেনারেশন নায়কোচিত বলে মনে করে। এই জেনারেশনের রাজনীতিভাবনা, দেশপ্রেমের আদল, প্রাতিষ্ঠানিকতার অবয়ব, বিশ্লেষণের ধরণ, দৃষ্টিভঙ্গি, ইতিহাসচর্চা, নেতৃত্বের প্যাটার্ন সব কিছুই মাসুদ রানা পড়া চিন্তাপ্রসূত।
মাসুদ রানার প্রভাববলয় ও আবহ থেকে আসলেই এখন বেরুনো দরকার। ফেসবুক থেকে