সুজন কৈরী : [৩] রাজধানীর পল্টন থেকে অবৈধভাবে ভিয়েতনাম গিয়ে আটকে পড়া ২৭ জন এবং ভিয়েতনাম ফেরত ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিককে পাঠানোর সঙ্গে জড়িত পাচারচক্রের মূলহোতাসহ ৩ জনকে আটক করেছে র্যাব। আটকরা হলেন- চক্রের মূলহোতা মো. জামাল উদ্দিন ওরফে সোহাগ (৩৪), মো. কামাল হোসেন (৩৯) এবং মো. জামাল হোসেন (৩৭)। তাদের কাছ থেকে ২৫৪টি বাংলাদেশী পাসপোর্ট, মোবাইল, বিদেশি সিমকার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, চেক বই ও বিপুল সংখ্যক পুলিশ ক্লিয়ারেন্স জব্দ করা হয়।
[৪] চক্রের আরও অন্তত ১০ জনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে র্যাব। তাদের আটকে অভিযান চালানো হচ্ছে এবং ১৩ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের নামে মামলা করার কথা জানিয়েছে র্যাব।
[৫] বৃহস্পতিবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়তক লে. কর্নেল রাকিবুল হাসান বলেন, ভিয়েতনাম ফেরত ১১ জনের অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে ঘটনার সঙ্গে মাশ ক্যারিয়ার সার্ভিস, দি জেকে ওভারসিস লিমিটেড, অ্যাডভেন্ট ওভারসিস লিমিটেড, মেসার্স সন্ধানী ওভারসিস লিমিটেড ও আল নোমান হিউম্যান রিসোর্স লিমিটেডসহ স্থানীয় দালাল এবং ভিয়েতনামে বাংলাদেশি কয়েকজন দালালের জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। এরপর পল্টনের মাশ ক্যারিয়ার সার্ভিস ও দি জেকে ওভারসিস লিমিটেডের অফিস অভিযান চালিয়ে ওই তিনজনকে আটক করা হয়।
[৬] র্যাব অধিনায়ক বলেন, আটকরা একাধিকবার ভিয়েতনামে গিয়ে সেখানকার দালালদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে ভিয়েতনামের দালালরা জানান, সেখানে বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ রয়েছে। এরপর বাংলাদেশি এজেন্সিগুলো সাধারণ মানুষকে প্রলোভন দেখায় যে, সেখানে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার কাজের সুযোগ আছে। ওই প্রলোভনে পরে ভুক্তভোগীরা ভিয়েতনামে যাওয়ার জন্য এজেন্সিগুলোকে চার লাখ করে টাকা দেন। ভুক্তভোগীদের পাসপোর্ট বানিয়ে ভিয়েতনামের দালালদের কাছে পাঠানো হয়। ওই পাসপোর্টগুলোর তথ্য অনুযায়ী সেখানকার দালালেরা ভিয়েতনাম থেকে অফার লেটার তৈরি করে বাংলাদেশের এজেন্সিগুলোতে পাঠানো হলে তা দেখিয়ে ভিয়েতনাম হাই কমিশন থেকে ভিসা সংগ্রহ করে দালাল চক্রটি।
[৭] সাধারণত বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ভিয়েতনাম সরকার এক বছরের জন্য ডিএন ভিসা দিয়ে থাকে। সেজন্য প্রত্যেক অভিবাসীকে দুই হাজার মার্কিন ডলার নিয়ে যেতে বাধ্য করে এজেন্সিগুলো। পরে বাংলাদেশী দালালদের মাধ্যমে তাদের বিএমইটি কার্ড দেয়।
[৮] রকিবুল হাসান বলেন, ভিয়েতনামে প্রবেশের পর সেখানকার দালারেরা এয়ারপোর্ট থেকে লোকজনকে রিসিভ করে পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে আটকে রাখে। পরিবার থেকে টাকাও চাওয়া হয়। কোনো স্থায়ী কাজ না দিয়ে ছোট ছোট কাজ দেয়া হয়। এ পর্যায়ে বাংলাদেশিদের পক্ষে দেশে ফেরত আসা সম্ভব হয় না। তারা ভিয়েতনামে মানবেতর জীবন-যাপন করেন।
[৯] র্যাব কর্মকর্তা বলেন, কুমিল্লার নাজমুল হাসান (২৬) মার্চের মাঝামাঝিতে অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় ৩ এপ্রিল মারা যান। নাজমুলের স্বজনরা স্থানীয় দালাল ও দি জেকে ওভারসিস লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো সহযোগিতা পাননি। গত ২৭ জুন ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটির মুসলিম কলোনীতে নাজমুলের দাফন সম্পন্ন হয়।
[১০] তিনি বলেন, দি জেকে ওভারসিস লিমিটেড ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ডিএন ভিসার মাধ্যমে ১৪ জন বাংলাদেশীকে ভিয়েতনামে পাঠায়। যাদের কারোরই এখন পর্যন্ত কোনো কাজের সুযোগ মেলেনি। যার ফলে এসব শ্রমিক অর্ধাহার-অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। মাশ ক্যারিয়ার সার্ভিসের কোনো নিজস্ব রিক্রুটিং লাইসেন্স নাই, দীর্ঘদিন ধরে অন্যান্য এজেন্সীর লাইসেন্স ব্যবহার করে স্থানীয় পর্যায়ে দালাল নিয়োগের মাধ্যমে ভিয়েতনামে অভিবাসী পাঠিয়ে থাকে।