শিরোনাম
◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের

প্রকাশিত : ২৮ জুন, ২০২০, ১১:৫৬ দুপুর
আপডেট : ২৮ জুন, ২০২০, ১১:৫৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] কোন নির্দেশনাই কাজে আসছে না চিকিৎসা ব্যবস্থায়!

মো. তৌহিদ এলাহী : [২] নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে দেশের চিকিৎসা সেক্টর। চিকিৎসারা ভুগছেন করোনা আতঙ্কে। অধিকাংশ সিনিয়র চিকিৎসক না থাকায় সীমিত সংখ্যক জুনিয়র চিকিৎসক দিয়ে নামমাত্র চালু রাখা হয়েছে হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কোভিড-১৯ এবং অন্য সব ধরনের রোগীকে পৃথক পৃথক ইউনিটে চিকিৎসা দেয়ার প্রস্তুতি নেই অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর। ফলে রোগীরা চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে।

গাইনি সমস্যা নিয়ে চারটি হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসকের সিরিয়াল পাননি মগবাজারবাসী সুফিয়া খাতুন। সিরিয়াল মিলেনি বা করোনা সনদ ছাড়া সিরিয়াল দিতে চায়নি। শেষ পর্যন্ত মগবাজারের ইনসাফ বারাকা কিডনি এ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে রবিবার (২৮ জুন) দুপুরে এক চিকিৎসকের সিরিয়াল নিশ্চিত করেছেন।

[৩] শনিবার সকালে ইনসাফ বারাকা জেনারেল হাসপাতালের সামনে সুফিয়া খাতুনের স্বামী মোঃ ইয়াকুব আলী জানান, দেড় সপ্তাহ ধরে এ পর্যন্ত চারটি হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসক খুঁজেছি, পাইনি। দু’টি হাসপাতালে সপ্তাহে একদিন করে চিকিৎসক বসেন বলে শেষ পর্যন্ত পরিচিত লোকের মাধ্যমে ইনসাফ বারাকা হাসপাতালে সিরিয়াল নিশ্চিত করেছি। এই হাসপাতালেও সপ্তাহে একদিনই চেম্বারে চিকিৎসক বসেন বলে জানান মোঃ ইয়াকুব আলী।

[৪] সর্দি, জ্বর, কাশি নিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গিয়েছিলেন পশ্চিম রাজাবাজারের বাসিন্দা জুবায়ের আহমেদ (৩৭)। সর্দি, জ্বর ও কাশির কথা শোনার পর তাকে চিকিৎসক দেখানোর সুযোগ দেয়া হয়নি। মোঃ জুবায়ের জানান, পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালেও আমি একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছি। আশপাশে সরকারী হাসপাতাল না থাকায় শমরিতা হাসপাতাল থেকে বিতাড়িত হয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ডাক্তার দেখানোর সুযোগ না দিয়ে আমাকে সরকারী হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানান মোঃ জুবায়ের আহমেদ।

[৫] দেশে করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত করোনা আতঙ্কে ভুগছে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা সেক্টর। একের পর এক রোগী ফিরিয়ে দেয়ার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের জন্য বেশ কয়েকটি নির্দেশনা প্রদান করেছে। কিন্তু নির্দেশনাসমূহ কার্যকর হয়নি।

গত ২৪ মে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের করোনা প্রতিরোধ স্বাস্থ্য মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব মোঃ মাইদুল ইসলাম প্রধান স্বাক্ষরিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে দেশের সকল হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসার পাশাপাশি নন-কোভিড রোগীদেরও চিকিৎসা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৩টি জোরালো নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

[৬] নির্দেশনাগুলো হচ্ছে- সকল বেসরকারী হাসপাতাল/ ক্লিনিকসমূহে সন্দেহভাজন কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকতে হবে।

দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার এবং অন্য জটিল রোগের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে।

এছাড়া যারা দীর্ঘদিন ধরে ডায়ালাইসিস করছেন, কোভিড-১৯ হাসপাতাল থেকে ডায়ালাইসিসের জন্য স্থানান্তর করা হয়েছে এবং হৃদরোগ ও অন্যান্য জটিল রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত না হলে তাদের চিকিৎসা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল ওই চিঠিতে।

[৭] এভাবে গত ৩০ এপ্রিল পাঠানো স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, সরকারী হোক বা বেসরকারি- যে কোন হাসপাতালে করোনা সন্দেহভাজন রোগী এলে তা স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানাতে হবে। সরকারী বা বেসরকারী হাসপাতালে কোন মুমূর্ষু রোগী কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত বলে যদি সন্দেহ হয়, কোন কারণে ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো যদি সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে রোগীকে অপেক্ষমাণ রেখে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের চারটি নম্বরের যে কোনটিতে ফোন করে ওই রোগীর চিকিৎসা বা ভর্তি-সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ নিতে হবে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

[৭] এপ্রিলের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে আরেকটি এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা আমলে নিচ্ছে না হাসপাতালগুলো।

[৮] আইইডিসিআর’র উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ মুশতাক হোসেন বলেন, চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা যারা দিচ্ছেন তাদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল এ সমস্যার সমাধান হবে। একইসঙ্গে যারা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ রয়েছে তাদের উচিত হবে প্রতিটি সেকশনের সবার কাজ সুনির্দিষ্টভাবে ভাগ করে দেয়া। দরকার হলে যেসব হাসপাতালে টেস্ট হচ্ছে সেখানে পাঠাবে অথবা সেসব সেন্টার থেকে এসে স্যাম্পল নিয়ে যেতে হবে। এভাবে করলে চিকিৎসা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা হচ্ছে সেটা কেটে যাবে। কিন্তু এ অবস্থার শেষ হতে হবে এর কোন বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও রোগীদের আস্থা অর্জন করতে হবে।

[৯] সরকারী হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি না নেয়া বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগত রোগীদের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সম্প্রতি সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। হাসপাতালে আগত রোগীকে করোনা আক্রান্ত বলে সন্দেহ হলেও তাকে তাৎক্ষণিক বিদায় করে দেয়া যাবে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে রোগী কোন হাসপাতাল যদি কাউকে সন্দেহজনক মনে করে তখন সে হাসপাতাল থেকেই নমুনা সংগ্রহ করবে। যদি রোগী পজিটিভ হন তাহলে তাকে ‘করোনা হাসপাতালে’ পাঠানো হবে, আর যদি না হয় তাহলে সেখানেই তাকে চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়