ইসলামী ডেস্ক : আল্লাহতায়ালা মানুষকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন ভালো-মন্দের পরীক্ষার জন্য। ভালো কাজের জন্য থাকবে চিরস্থায়ী পুরস্কার ও মন্দের জন্য থাকবে চিরস্থায়ী শাস্তি। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য দুনিয়ায় পাঠানো হয় মানুষ ও জিনকে। দুনিয়ায় ভালো কর্মের জন্য মুমিনদের পুরস্কারস্বরূপ জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আর মন্দকর্মের জন্য কাফেরদের চিরস্থায়ী ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
নয়নাভিরাম জান্নাতে সর্বপ্রথম কে প্রবেশ করবে? এ বিষয়ে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজায় টোকা দেব।’ অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘আমি জান্নাতের দরজায় এসে দরজা খুলতে বলব। তখন দারোয়ান বলবে, কে তুমি? আমি বলব, মোহাম্মদ। তখন সে বলবে, হ্যাঁ, আপনার ব্যাপারে আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন আপনার আগে কারও জন্য জান্নাতের দরজা না খুলি।’ (মুসলিম)।
আমাদের প্রিয়নবী (সা.) কেবল নিজে প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন না। বরং সঙ্গে নিজের উম্মতকেও নেবেন। পৃথিবীতে রাসুল (সা.)-এর উম্মত সর্বশেষ হলেও তারাই সবার আগে জান্নাতে যাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করবে। এটি উম্মতে মোহাম্মদির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘দুনিয়ায় সর্বশেষ আসা আমরাই সর্বপ্রথম হব। মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম আমরাই জান্নাতে প্রবেশ করব। অন্যরা আমাদের কিতাব পেয়েছে। আর আমরা সবার পরে কিতাব পেয়েছি।’ (বোখারি, মুসলিম ও নাসায়ি)।
উম্মতে মোহাম্মদির মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন আবু বকর (রা.)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল ইরশাদ করেছেন, ‘জিবরাইল এসে আমার হাত ধরে জান্নাতের দরজা দেখাল, যে দরজা দিয়ে আমার উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন আবু বকর (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমিও আপনার সঙ্গে থাকব যেন জান্নাতের দরজা দেখতে পারি। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘হে আবু বকর, শুনে রাখো, আমার উম্মাতের মধ্যে সর্বপ্রথম তুমি জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (আবু দাউদ ৪৬৫২)
আর সর্বপ্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে দুনিয়ায় তাদের অবস্থা সম্পর্কে রাসুল (সা.) আমাদের জানিয়েছেন। আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা কি জানো, আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে কারা প্রবেশ করবে?’ সবাই বলল, আল্লাহ ও তার রাসুল ভালো জানেন। তিনি বললেন, ‘আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে দরিদ্র্য মুহাজিররা। যাদের মাধ্যমে সীমান্তের প্রহরা নিশ্চিত করা হয়। তাদের মাধ্যমে যেকোনো বিপদ-আপদ দূর করা হয়। এমনভাবে তাদের মৃত্যু হয় যে আশা-আকাক্সক্ষাগুলো তাদের অন্তরের ভেতরেই রয়ে যায়। তারা তা পূরণ করতে পারে না। আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের বলবেন, তাদের কাছে যাও, তাদের সালাম প্রদান করো। ফেরেশতারা বলবে, হে আমাদের রব, আমরা তো আপনার আসমানের বাসিন্দা, আপনার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবন। আপনি আমাদের বলছেন, তাদের কাছে গিয়ে সালাম প্রদান করি? আল্লাহ বলবেন, তারা আমার বান্দা, আমার ইবাদত করেছে, আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করেনি। তাদের এমন অবস্থায় মৃত্যু হয় যে প্রয়োজনের কথা তার মনে রয়ে যায়। তা আর পূরণের সামর্থ্য হয় না। অতঃপর ফেরেশতারা তাদের কাছে যাবে। সব দরজা দিয়ে প্রবেশ করে তাদের সালাম জানাবে। বলবে, ধৈর্য ধারণের ফল হিসেবে তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমাদের শেষ ঠিকানা কতই উত্তম।’ (আহমাদ ৬৫৭০)
অপর হাদিসে দারিদ্র্য মুহাজিররা ধনীদের ৪০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশের কথা বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, এক দিন আমি মসজিদে বসে ছিলাম। দারিদ্র্য মুহাজিরদের একটি দলও মসজিদে বসা ছিল। এমন সময় রাসুল (সা.) এসে তাদের কাছে বসে বললেন, ‘দরিদ্র্য মুহাজিররা সুসংবাদ গ্রহণ করুক। তাদের চেহারা উজ্জ্বল হোক। কারণ তারা ধনীদের ৪০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি দেখলাম, তাদের রং পরিবর্তন হয়ে উজ্জ্বল হয়ে গেল। আমারও আশা জাগল, আমি যদি তাদের মধ্যে হতাম!’ (দারেমি, ২৭২১)
জান্নাতে প্রবেশ করে তাদের অবস্থা কেমন হবে তারও বর্ণনা রাসুল (সা.) আমাদের জানিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল বর্ণের হবে। তারপরের দলটি হবে আকাশের সবচেয়ে বেশি আলো সম্পন্ন তারকার মতো। তাদের থুতু থাকবে না। প্র¯্রাব ও পায়খানা হবে না। সেখানে তাদের পাত্রগুলো স্বর্ণের হবে। চিরুনি হবে স্বর্ণ ও রুপার তৈরি। মেশক হবে তাদের ঘাম। তাদের সবার সঙ্গে দুজন করে স্ত্রী থাকবে। অতিশয় লাবণ্যময় হওয়ায় মাংসের ওপর থেকে তাদের হাড়ের মগজ দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ ও বিদ্বেষ থাকবে না। সবার অন্তর একজন ব্যক্তির অন্তরের মতো হবে। সবাই সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করবে।’ (মুসলিম ২৮৩৪)
সূত্র : দেশ রূপান্তর