শাহানা হুদা : ১৯৭৮/৭৯ সালের দিকে আব্বাকে তার পরিচিত এক ভদ্রলোক বার্মা থেকে বেশ চকচকে, জবরজং রঙের, সিল্ক টাইপের একটি লুঙ্গি এনে দিলো । তখনকার দিনে আজকালকার মত এত মানুষ বিদেশে যেত না । কাজেই এরকম একটা উপহার পেয়ে আব্বাতো দারুণ খুশি । ছোটদের মত টানা কিছুদিন ঐ লুঙ্গিটিই ধুয়ে ধুয়ে পরলো।
সে না হয় পরলো, কিন্তু অসুবিধাটা হলো সেই লুঙ্গি এবং লুঙ্গিকে কেন্দ্র করে আলোচনা পর্বটি। বাসায় যেই আসতো তাকেই আব্বা লুঙ্গিটা দেখাতো এবং বার্মার কাপড়, ব্যবসা ইত্যাদি প্রসঙ্গে কিছু না কিছু একটা আলোচনা হতোই । ব্যাপারটা বাসার লোকদের কাছে রীতিমত অত্যাচারের পর্যায়ে পৌঁছুলো। আব্বা এররকম একটা উদ্ভট জবরজং লুঙ্গি পরে বসে আছে, এটাই ছিল আমার কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর অনুভূতি।
প্রায় বছরখানেক পরার পর লুঙ্গিটি এখানে-ওখানে ছিঁড়ে গেল । আমরা ভাবলাম যাক এবার মনেহয় এর পাট চুকবে। কিছুদিন এই লুঙ্গি পরাটা বন্ধ থাকলো। একদিন আমাদের বাসায় চাকরির ট্রেনিং সূত্রে হাজির হলো আমার খালাতো বোন লুসি আপা, যে ছিল সেলাই বিদ্যায় খুব পটিয়সী। ব্যস আব্বার মাথায় আবার নতুন করে ঐ লুঙ্গির চিন্তা এল, এটা দিয়ে আর কী কী হতে পারে ?
এবার লুসি আপার উপর দায়িত্ব পড়লো লুঙ্গিটা দিয়ে আব্বাকে টুপি বানিয়ে দেয়ার। প্রথমে লুসি আপা বেশ থতমত খেলেও বুঝতে পারলো যে খালুর এই কাজ তাকে করতেই হবে, নতুবা নিস্তার নাই । সেই লুঙ্গি থেকে প্রায় ৪/৫ টা টুপি বানানো হল । তারপর আরো বেশ কিছুদিন যাবত আব্বা সেই লুঙ্গি থেকে বানানো টুপি একনাগাড়ে পরে বেড়ালো । প্রথম প্রথম বেশ অস্বস্তি হলেও, আমরা ক্রমেই এই লুঙ্গি টুপির ব্যাপারটাতেও অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম।
ফেসবুক থেকে