খোকন আহম্মেদ : [২] লকডাউন শিথিলের পর স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা সংক্রমনের রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত বরিশাল জেলায় প্রতিদিনই নতুন করোনা রোগি শনাক্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যারমধ্যে চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, স্বাস্থ্যকর্মী, র্যাব ও পুলিশ সদস্য এবং ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ রয়েছেন।
[৩] বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত জেলায় নতুন করে শনাক্ত হওয়া ৬০ জনসহ মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৭ জনে। যারমধ্যে বরিশাল মহানগরী ও সদর উপজেলায় করোনা শনাক্ত হওয়া রোগির সংখ্যা ৮৫০ জন। মোট আক্রান্তের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত রয়েছেন ১৪১ জন। এছাড়া করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় ১৫ জন ব্যক্তি মারা যাওয়ার তথ্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে থাকলেও উপসর্গ নিয়ে মৃত রোগিদের সঠিক কোন হিসেব পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি নতুন করে আটজন সুস্থ্যতা লাভ করার মধ্যদিয়ে জেলায় করোনা থেকে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭৭ জন ব্যক্তি।
[৪] জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেল সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট শনাক্তদের মধ্যে ২৭৬ জন নারী ও ৭৮১ জন পুরুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সে হিসেবে নারীদের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি পুরুষের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর মোট শনাক্তদের মধ্যে শূন্য থেকে ২০ বছর পর্যন্ত ৫৬ জন, ২০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত ৮০৯ জন এবং পঞ্চাশোর্ধ ১৯০ জন ব্যক্তি রয়েছেন। সে হিসেবে সব চেয়ে বেশি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে রয়েছে। যা ২০ বছরের নীচের রোগীর চেয়ে ১৪ গুণের বেশি এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্বের রোগীদের চেয়ে চার গুণের বেশি।
[৫] বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ছয় জেলায় বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৭৯৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ৪৭১ জন এবং মারা গেছেন ৩৫ জন। আর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন মাত্র ২৯৬ জন ব্যক্তি। সেই হিসেবে করোনায় আক্রান্ত ৮২ শতাংশ রোগিরা হাসপাতালের দ্বারস্থ হননি।
[৬] অভিযোগ রয়েছে, লকডাউন শিথিলের পর আক্রান্তদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বরিশালে করোনায় নতুন শনাক্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর ওই রোগির সাথে যোগাযোগ করে তাকে নিয়মনীতি ও চিকিৎসাপত্র বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব তারা পালন করছেন। তবে আক্রান্ত রোগিদের বাসায় থাকা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রশাসনের।
[৭] স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে পর্যাপ্ত জনবল না দেয়া হলে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যহত হবে। তবে জেলা প্রশাসক এসএস অজিয়র রহমানের দাবি, যে সকল এলাকায় রোগি শনাক্ত হচ্ছে সেখানেই লকডাউন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
[৮] করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের স্বাস্থ্যবিধি না মানা প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক রোগির স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসন থেকে লকডাউন ঘোষণা করেই তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। অথচ যেসব পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে, সেইসব পরিবারের সদস্যদের খাবার কিংবা আক্রান্ত রোগির ব্যবহৃত মালামাল এবং ওষুধ রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে আর কেউ খোঁজ রাখেনা। তাই তাদের বাধ্য হয়েই বাহিরে যেতে হচ্ছে। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ