মাহবুবুর রহমান : [২] নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন নোয়াখালীর হাতিয়া উপকূলের জলাভূমি থেকে ‘গ্লাইসেরা শেখমুজিবি’ (Glycera sheikhmujibi) নামে আরেকটি নতুন পলিকীট প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন। বুধবার সকালে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি এই তথ্য প্রকাশ করেন।
[৩] তার এ গবেষণায় সঙ্গী হিসেবে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পলিকীট বিজ্ঞানী ড. প্যাট হ্যাচিংস। Glycera sheikhmujibi আবিষ্কারের পূর্বেও তিনি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে নেফটাইস বাংলাদেশি (Nephtys bangladeshi), নিউমানিয়া নোবিপ্রবিয়া (Neumania nobiprobia) ও অ্যারেনুরাস স্মিটি (Arrenurus smiti), এবং ব্রুনাইয়ের সমুদ্র এলাকা থেকে ভিক্টোরিয়োপিসা ব্রুনেইয়েনসিস (Victoriopisa bruneiensis) নামের আরো চারটি নতুন অমেরুদণ্ডী প্রজাতি আবিষ্কার করে বিশ্ব বিজ্ঞানমঞ্চে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।
[৪] প্রানিজগতের এনেলিদা ( Annelida) পর্বের অন্তর্ভুক্ত এই হাল্কা গোলাপী বর্ণের অত্যন্ত ক্ষুদ্র ও নলাকৃতির নতুন প্রজাতির নামকরন করেছেন বাংলাদেশের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী ও বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে।
[৫] তার এ আবিষ্কৃত ৪২ মিঃমিঃ দৈর্ঘ্যের পলিকীটটি সর্বমোট ১৫৮ টি খন্ডে খন্ডিত এবং দেহের মধ্যভাগে ২.২ মিঃমিঃ প্রস্থ। এই ক্ষুদ্রাকৃতি প্রানীর অন্যতম সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হলো এর একটি ঘন্টাকৃতির দীর্ঘায়িত চোষক মুখ রয়েছে যা নলাকার ও নমনীয় এবং প্যাপিলা দ্বারা আবৃত কিন্তু কোন চোখ থাকেনা। চোষকের প্রান্তিক অংশে চারটি কালো হুকের মত চোয়াল রয়েছে। চোষকে তিন ধরনের প্যাপিলা থাকে। চোষকের দুই জোড়া চোয়াল শক্ত ত্রিকোণাকৃতির এইলেরনের সাথে যুক্ত থাকে।এছাড়া দেহের মধ্যখানে সমান আকারের অঙ্গুালাকৃতির লোব বিদ্যমান।
[৬] Glycera sheikhmujibi প্রজাতিটি বঙ্গোপসাগরে বসবাসকারী গ্লাইসেরা গণের ১১ টি প্রজাতির একটি এবং বাংলাদেশের উপকূলের দ্বিতীয় আবিষ্কৃত প্রজাতি।
[৭] তিনি এটি সংগ্রহ করেন হাতিয়ার নিকটবর্তী মেঘনা নদীর মোহনা থেকে। পলিকীটের নতুন এই প্রজাতিটি সাধারণত লোনা কর্দমাক্ত জলাশয়ের তলদেশের মাটিতে বসবাস করে এবং মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই ছাড়া জীবজগতের প্রতিটি প্রানি খাদ্যর জন্য একে অপরের উপর নির্ভরশীল তাই খাদ্যচক্রে এরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা মাটিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গর্ত করে উপকূলের জলাভূমি অঞ্চলের পুষ্টি ও অক্সিজেন আদান-প্রদান করে তলদেশের উর্বরতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
[৮] এ বিষয়ে গবেষক দলের অন্যতম নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. বেলাল জানান, বাংলাদেশের পলিকীট জীববৈচিত্র নিয়ে আমি গত পাঁচ বছর পৃথিবীর বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ড. প্যাট হ্যাচিং এর সাথে যৌথভাবে গবেষণা করেছি। গবেষণার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের নোয়াখালী উপকুলীয় অঞ্চল থেকে সংগৃহীত কিছু পলিকীট নমূনা সনাক্ত করতে গিয়ে দেখতে পাই আবিষ্কৃত প্রজাতিটি বৈশিষ্টের দিক থেকে Glycera গণভূক্ত অন্যান্য স্বীকৃত ৮০ টি প্রজাতি থেকে আলাদা। অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম রিসার্চ ইন্সটিটিউটে সংরক্ষিত এই গণভূক্ত আরো বেশ কিছু নমূনার সাথেও তূলনা করা হয়। চুড়ান্তভাবে নতুন প্রজাতি হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অত্যাধুনিক Scanning Electron Microscope (SEM) প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয়।
[৯] গত চার বছর ধরে পৃথিবীর বিভন্ন দেশে এই গণ নিয়ে যেসব বিজ্ঞানী গবেষণা করেন তাদের সাথে আলোচনা করা হয় এবং অভিজ্ঞ মতামত নেয়া হয়। পরে ড. প্যাট হ্যাচিংস সহ এই প্রজাতিটির স্বীকৃতি লাভের জন্য গবেষণার ফলাফল সুইজারল্যান্ড থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক ট্যাক্সনমিক জার্নাল ‘DIVERSITY’ তে পাঠানো হয়। গত ২৬ মে, ২০২০ তারিখে “Glycera sheikhmujibi n. sp. (Annelida: Polychaeta: Glyceridae): A New Species of Glyceridae from the Saltmarsh of Bangladesh’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। একই দিনে বিশ্ব স্বীকৃত ডাটাবেইজ ‘Zoobank’ এ অন্তর্ভূক্ত হওয়ার মাধ্যমে প্রজাতিটি নতুন হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে।‘ সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ