কাজী হানিয়াম মারিয়া : কয়েকজন স্টুডেন্টকে কল করেছিলাম একটি ব্যাপারে কথা বলার জন্য। বেশ কয়েকবার কল করার পর পাইনি। ঘণ্টাখানির পর কল ধরার পর বললো, ম্যাম মাঠে খেলতে গিয়েছিলাম, বাইরে হাঁটতে গিয়েছিলাম। আমি এতোই অবাক হয়েছি যে কেন জিজ্ঞেস করতেও বেশ অনেকক্ষণ সময় লেগেছে। বাসায় থাকতে অস্থির লাগে তাই একটু ঘুরে আসা। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয় যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্রের কাছে আমরা একটু দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি। করাটাই স্বাভাবিক। বাড়িতে গিয়ে তোমাদের সচেতন আচরণ তোমাদের জ্ঞানের প্রতিফলন দেখায়। উচিত ছিলো নিজের বাড়ির পাশাপাশি প্রতিবেশীদেরও করোনার বিস্তার কীভাবে রোধ করা যায় সে বিষয়ে সচেতন করা। যদি কোনো স্বেচ্ছাসেবী হতে আমি গর্বিত বোধ করতাম আমাদের ছাত্ররা ভালো কাজ করছে। করোনা আরম্ভের প্রথমদিকে অনেক স্টুডেন্টদের স্ট্যাটাস দেখেছি যে তারা স্বেচ্ছাসেবী হতে চায়। বাইরে ঘোরাফেরার পরিবর্তে যদি ঘরে বসে থাকতে তাহলেই এক অর্থে তোমরা স্বেচ্ছাসেবী হতে।
অন্তত তোমার দ্বারা কমিউনিটি বিস্তার হচ্ছে না। এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি সেবা তুমি কি করতে পারতে? ১৮ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ এবং হলও ভ্যাকেন্ট করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের কমিউনিটি বিস্তার যেন কম হয় তাই সবাইকে বাড়িতে থাকার এবং সব রকম সামাজিক মেলামেশা কম করার উপর অনুরোধ করা হয়েছে। সরকার সঠিক সময়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। কিন্তু আমরা এটাতে আনন্দ করছি, ভাইরাসের ভয়াবহতা বুঝতেই পারছি না। যাদের দিন আনে দিন খাওয়ার তাদের যদি হেল্প করা যেতো তাহলে বিস্তার কমানো যেতো। আমাদের দেশ কেন, উন্নত দেশও রিস্ক ম্যানেজমেন্টে পুরোপুরি সক্ষম নয়। অনেকে নিজের জীবদ্দশায় এ রকম দুর্গতি প্রথমবার দেখছে। মার্কেট খোলা হয়েছে সীমিত পরিসরে শুধু ক্ষুদ্র আয়ের জনগোষ্ঠীর স্বার্থে। বড় শপিংমলগুলো যখন খুলবে না বলে সিদ্ধান্ত নিলো, সেখানে আড়ং খোলা রাখা এবং মানুষের ঢল করোনার বিস্তার আরও বাড়িয়ে দিলো। আড়ং কেন তাদের ব্যবসা অনলাইনে করলো না? এতো বড় একটা এনজিওর কাছ থেকে কি একটু দায়িত্বশীল আচরণ আশা করা যায় না। আমাদের ব্যবসায়ীদের এখন অনলাইনে ব্যবসার কথা ভাবা উচিত।
কারণ এই অবস্থা আরও অনেকদিন থাকবে। মার্কেট যারা ঘুরছেন, বিভিন্ন কাপড় বা জিনিস ধরে ধরে দেখছেন তাদের কী একবারও মাথায় আসেনি আপনি ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারেন? আমাদের অনেক ডাক্তার রোগীর সেবা করতে করতে ইনফেক্টেড। কেউ কেউ শহীদ হয়েছেন আমাদের দেখতে দেখতে। যারা ইনফেক্টেড তারা আবার পরবর্তী কয়েকদিন আইসোলেটেড থাকবেন। এভাবে আমাদের কর্তব্যরত ডাক্তারের সংখ্যাও কিন্তু কমছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আপনার অসংযত আচরণে আপনি ইনফেক্টেড হলে কেন কোনো ডাক্তার আপনাকে সেবা দিতে বাধ্য থাকবে? এতো প্রচারণার পরও আপনার অসতর্কতার দায় কেন ডাক্তাররা নেবে? ঈদ শুধু কয়েকজনের জন্য নয়। ঈদের আনন্দ ওই জামাকাপড়ে বন্দি করে ফেলবেন না। আপনার এক কাপড়ের পরিবর্তে কারও ঘরে যদি ৩ দিনের খাবার দিতে পারেন সেটাও কিন্তু আনন্দ।
অন্যকে না দিতে ইচ্ছা হয়, নিজের জন্য রাখুন। ঘরে বসে থেকে অর্থনীতির যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে সেটার ঘা যে আপনার ঘাড়ে পড়বে না তা কিন্তু নিশ্চিত নয়। সুতরাং নিজের প্রয়োজনেও লাগতে পারে। প্রতিটি যুদ্ধে আমাদের অনেক কিছু হারাতে হয়। এই যে আমাদের মাঝ থেকে এতো গুণী ব্যক্তি হারিয়ে যাচ্ছেন, ভেবে দেখেছেন কী তাদের শূন্যস্থান কীভাবে পূরণ হবে? আপনার/আমার না হয় প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। কিন্তু আমাদের জন্য পরিবারের বা চলার পথের বয়স্ক মানুষ বা কম প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন কেউ যদি অকালে হারিয়ে যায় তখন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন? আপনার যদি মনে হয় আপনাকে করোনা ছুঁতে পারবে না, তাহলে আপনি ভুল। একই পরিবারের একজন মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার এবং ওই পরিবারের ১৭ বছরের একটি মেয়ে মারা গেছে। পরিবারটা অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম এবং চিকিৎসক পরিবার ছিলো। তারপরও মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। এ রকম অনিয়ন্ত্রিতভাবে চললে আপনার নম্বর আসতেও আর বেশি দেরি হবে না। ফেসবুক থেকে