আর রাজী
সূচনা : করোনা ওরফে কোভিড-১৯ দুর্যোগের অবসান সহসা হতে যাচ্ছেÑ আজ পর্যন্ত বিজ্ঞজনদের কেউ তা বলেননি। বরং মহামারি পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, বিশ্বে খাদ্য সংকট হবেইÑ এমন ভবিষ্যদ্বাণী করছেন অনেকেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে আরও অন্তত সাত সপ্তাহ বন্ধ থাকতে যাচ্ছে তা স্পষ্ট প্রায়। পরিস্থিতির দাবি অচিন্তনীয় ভয়ানকও হতে পারে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট অনেকেরই কিছু ভূমিকা রাখার আগ্রহ প্রবল হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্টদের বিবেচনার জন্য নিচের খসড়া প্রস্তাবটি উত্থাপন করছি।
মূল ভাবনা : বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্রাহী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বা তাদের নিয়ে একটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠত হবে। তারা অনলাইন প্লাটফর্মে ‘কেন্দ্রীয় ভূমিকায়’ থাকবেন। যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বা শিক্ষক সমিতি বা অন্য যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব কিংবা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বা একাধিক বিভাগ কেন্দ্রীয় সমন্বয়ের দায়িত্ব নিতে পারে। যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়, যেকোনো সুবিধাজনক অঞ্চল নিয়েও কাজ করতে পারে। কিংবা অন্য যেকোনো ইচ্ছুক ও সক্ষম প্রতিষ্ঠান/সংগঠন এই উদ্যোগ নিতে পারে। আইপি প্রতিষ্ঠান, টেলকো, (অনলাইন) সংবাদ প্রতিষ্ঠান ও/বা এনজিওসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের সরাসরি সহায়তাও নেওয়া বা পাওয়া যেতে পারে। এই কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের কাজ হবে : এক. নগর-মহানগর ও উপজেলাসমূহের প্রতিটির জন্য আগ্রাহী (অন্তত এক হাজার) বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষককে চিহ্নিত করা, শিক্ষকদের ভূমিকার সংক্ষিপ্ত রূপরেখা চূড়ান্ত করা এবং এই সহায়তা কার্যক্রমে অংশ নিতে তাদের আমন্ত্রণ জানানো। দুই. দেশের নগর, মহানগর, পৌরসভাসহ সব ইউনিয়নের প্রতিটি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে/মহাবিদ্যালয়ে অনার্স-মাস্টার্স পড়া আগ্রাহী শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনভিত্তিক নেটওয়ার্কের আওতায় আনা।
তিন. কেন্দ্রের কাছে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশকারী শিক্ষার্থীদের সবাইকে যার যার এলাকা ও/বা অতি নিকটবর্তী এলাকা (ওয়ার্ড/ইউপি)র জন্য সুনির্দিষ্ট কাজের ভিত্তিতে নানা দলে বিভক্ত করে দেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলার দেখভালের দায়িত্বে থাকা এক বা একাধিক শিক্ষককে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া। চার. উপজেলার দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিদিন সারাদেশের চিত্র সমন্বয় করে অনলাইনে প্রকাশ করা/মিডিয়াকে অবহিত করা। পাঁচ. সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব, জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাসহ প্রয়োজনীয় সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতামূলক যোগাযোগ রক্ষা করা, যেকোনো সমস্যা সম্পর্কে (সুনির্দিষ্টভাবে) তাদের অবহিত করা এবং সমস্যার সুরাহা নিশ্চিত করা।ছয়. শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সহায়তায় প্রয়োজনীয় অ্যাপ, ওয়েবসাইট ইত্যাদি তৈরি করে ব্যবহার করা। সাত. স্বেচ্ছাসেবকদের সুরক্ষা সামগ্রীর চাহিদা, তথ্যের চাহিদা, নানা পরামর্শের চাহিদা ইত্যাদি পূরণ করা।
নেটওয়ার্কভুক্ত শিক্ষার্থীদের কাজ যা হতে পারে : শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দল থাকবে এবং এই দলগুলোর কাজ হবে : ১. যার যার এলাকায় সরকারি যে ত্রাণ কার্যক্রম চলছে/চলবে তা তথ্য বাতায়ন, স্থানীয় সাংবাদিক, ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরেজমিনে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং তাদের পর্যবেক্ষণের ফলাফল থানা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রকে/উপজেলার দায়িত্বে থাকা শিক্ষককে অনলাইনে লিখিতভাবে অবহিত করা। ২. সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের ত্রাণ চাহিদা সাধ্যমতো অবহিত হওয়া এবং তা থানা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রকে/উপজেলার দায়িত্বে থাকা শিক্ষককে অনলাইনে লিখিতভাবে (সুনির্দিষ্ট তথ্য) জানানো। ৩. নিজ নিজ এলাকায় মানুষকে কোভিড সংক্রমণ বিষয়ে সচেতন করা। ৪. কোভিড আক্রান্তদের সার্বিক বিষয়াদি দেখভাল করা। লাশ দাফন, সৎকারের ব্যবস্থাদি নিশ্চিতে সহায়তা করা। ৫. কোভিড আক্রান্তদের পরিবারকে মানসিক সহায়তা দেওয়াসহ অন্যানা সংস্থার সহযোগিতা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখা। ৬. সরকারি বিভিন্ন সাহায্য/নানা কার্ড/ঋণ কার্যক্রম বিষয়ে এলাকার প্রযোজ্য মানুষদের অবহিত করা এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা করা।
৭. ইন্টারনেট অ্যাপ, কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সহায়তা নিয়ে কৃষকদের চাহিদা মোতাবেক পরামর্শ দেওয়া। ৮. কৃষিপণ্যের বাজারজাত করণে যোগাযোগ, পরামর্শ এবং আর যা যা সহায়তা দরকার তা দেওয়া। ৯. এলাকায় জীবাণু নাশ, পরিষ্কার পরিচ্ছনতা ও পরিবেশ রক্ষায় সাধ্যমতো কাজ করা। ১০. কেন্দ্রের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করা এবং আরও অন্যান্য যা কিছু করা সম্ভব বলে মনে হয় তা করা। এইটি খুবই একটি প্রাথমিক প্রস্তাব। আগ্রহীরা এমন একটি কর্মযজ্ঞের কথা চিন্তা করতে পারেন। সব কিছু হয়তো করা যাবে না, আবার অনেক কিছুই হয়তো করা যাবে। সবাইকে হয়তো পাওয়া যাবে না, আবার অনেককেই পাওয়া যাবে। স্মরণ করা যেতে পারে ছয় সপ্তাহ আগেও এ পৃথিবীতে যা অবাস্তব বলে মনে হতো আজ সেসব বাস্তব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :