ডেস্ক রিপোর্ট : [২] করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা যতই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে, ততই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ভূমিকা। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাই দৃশ্যপটে নেই। দলের সাধারন সম্পাদকসহ দু-একজন নেতাকে টুকটাক কিছু বক্তৃতা/ বিবৃতির মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। এই মুহুর্তে তাঁদের যে ধরণের ভূমিকা সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করেছিল, সেই ধরণের ভূমিকায় তাঁদেরকে দেখা যায়নি, বরং অধিকাংশ নেতা সাইডলাইনে বসে আছেন এবং দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে সাধারণ মানুষ মনে করে।
[৩]এর মধ্যেই তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতার বিরুদ্ধে চাল-চুরি, ত্রাণ চুরিসহ নানা রকম অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কঠোর ভাবে হুশিয়ারি দিয়েছেন যে, দুর্নীতিবাজদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবেনা। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ৭ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ ৩৫ জন জনপ্রতিনিধিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বরখাস্ত করেছে। এছাড়াও একাধিক আওয়ামী লীগের নেতার বিরুদ্ধে ত্রাণ আত্মসাৎ, অব্যবস্থাপনা, অনিয়মসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। আর এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতেই সম্ভবত আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাঁর মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তিনি জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রতিটি জেলার জন্য মন্ত্রী বা এমপিদের নয়, বরং সচিবদের দায়িত্ব দিয়েছেন এবং ত্রাণ বিতরণে যেন কোন দলীয় পক্ষপাতিত্ব না হয়, সে ব্যাপারে কঠর বার্তা দিয়েছেন।
[৪]মহামারী করোনা মোকাবিলায় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা মাঠে থাকলেও বেশিরভাগ রাজনৈতিক নেতাই হোম কোয়ারেন্টাইনের নামে নিজ নিজ এলাকার জনগণ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। যে কারণে সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে রাজনীতিকদের অংশগ্রহণ প্রায় নেই বললেই চলে। কাজ করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা (ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বার)। তারা হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন।
[৫]অবশ্য নিজ উদ্যোগে অনেকেই অসহায় মানুষকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। অঘোষিত লকডাউনে সারা দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও অসহায়-কর্মহীন মানুষদের মধ্যে সরকারি ত্রাণ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রতিটি জেলায় একজন সচিবকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। এই নির্দেশনা মেনেই দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবরা ইতোমধ্যে নিজ নিজ জেলায় অবস্থান করছেন। কেউ কেউ ঢাকায় বসে দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলাগুলোর প্রশাসক, পুলিশ ও সিভিল সার্জনের সঙ্গে কো-অর্ডিনেট করছেন। আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন দায়িত্ব পালনের।
[৬]সমন্বয়ের দায়িত্ব কিভাবে পালন করছেন জানতে চাইলে ঝালকাঠি জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিরুজ্জামান বলেন, ‘এটা একটা সিস্টেমের বিষয়। এ মহাদুর্যোগের সময় আমরা স্থানীয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি ফোনে। সরকারের নির্দেশনামতো প্রতিনিয়ত খেয়াল রাখছি যে, আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলায় কোনো ধরনের সমস্যা যেন না হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি এ সপ্তাহে ঝালকাঠি যাব। সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে করণীয়গুলো বাস্তবায়ন করব।’ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনেই সচিবদের কার্যক্রম চলছে বলেও তিনি জানান।
[৭]এদিকে চলমান করোনা সংকট মোকাবিলায় অসহায়, হতদরিদ্র ও গরিব মানুষের জন্য সরকার খাদ্যসামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা করেছে। প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ত্রাণ বিতরণ করার। কিন্তু প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে দেখা গেলেও বিভিন্ন দলের শীর্ষ রাজনীতিকদের তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। অনেক এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্যদেরও দেখা পাচ্ছে না জনগণ। বর্তমানে জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পুলিশ, র্যাব ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সত্ত্বেও বেশিরভাগ এলাকায়ই ত্রাণকাজে সক্রিয়ভাবে এখনো নামতে দেখা যায়নি রাজনৈতিক নেতাদের। তারা কোয়ারেন্টাইনের দোহাই দিয়ে নিজ নিজ এলাকা থেকে অনেকটা স্বেচ্ছানির্বাসনে রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে মাঠে রয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
[৮]দেশের এই ক্রান্তিকালে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, মহানগর, জেলা, উপজেলা ও স্থানীয় পর্যায়ের বেশিরভাগ নেতাকেই কাছে পাচ্ছে না জনসাধারণ। তারা নিজেরাই হোম কোয়ারেন্টাইনের নামে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখছেন। দলীয়ভাবে সরকারের ত্রাণ বিতরণে অংশ নিতে তেমন দেখা না গেলেও অনেকে নিজ অর্থায়নে ত্রাণ বিতরণ করছেন।
[৯]অসহায়, হতদরিদ্র, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আগামী কয়েক মাসের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। তাদের জন্য বিনামূল্যে খাবার এবং ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ অনেকখানি বাস্তবায়নের পথে। করোনা সংকটের প্রথম দিকে সরকারের পক্ষ থেকে জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়ার পর পরই বেশ কিছু স্থানে ব্যাপক অনিয়ম দেখা যায়। অসহায়দের ত্রাণ অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিদের গুদামে পাওয়া যায়।
এর পরই প্রধানমন্ত্রী অসহায়, হতদরিদ্র ও নিস্ন আয়ের মানুষের ত্রাণ নিশ্চিত করতে প্রতিটি জেলার জন্য একজন সচিবকে ত্রাণ কার্যক্রম তত্তাবধানের দায়িত্ব দেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ৬৪ সচিব জেলার সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় করে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার কাজ তত্ত্বাবধান ও পরিবীক্ষণ ইতোমধ্যেই শুরু করেছেন।
[১০]ফেনী জেলার দায়িত্ব পাওয়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, গত বৃহস্পতিবার তিনি সমন্বয় সভা ও বৈঠক করেছেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে। সবকিছু সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করছেন তিনি। কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক সমাধান হবে বলেও তিনি জানান।
[১১]অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে দায়িত্ব দেয়ার পর থেকে রাজনৈতিক নেতাদের মূল্যায়ন অনেকটাই কমে গেছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিজেকে ‘প্রমাণ’ করার জন্য নিজেরাই ত্রাণ বিতরণের কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত হচ্ছেন। একেবারে না পারতে রাজনৈতিক নেতাদের ত্রাণ বিতরণে সুযোগ দিচ্ছেন।
[১৩]আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বর্তমানে সামাজিক দূরত্বের দিকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। আমরা ঘরে বসে, সামাজিক দূরত্ব ঠিক রেখেই কাজ করছি। আমাদের যখন প্রয়োজন হবে তখন মাঠে নেমেও কাজ করব। তেমন সব ধরনের প্রস্তুতিও আমাদের আছে। তৃণমূল নেতা-কর্মীদেরও নির্দেশনা দেয়া আছে, আমরা মাঠে নামলে তারাও নেমে পড়বে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাদের দায়িত্ব আগে থেকেই ভাগ করে দেওয়া আছে। তার আলোকে সাংগঠনিক তৎপরতা, ত্রাণ বিতরণ, গণমানুষের সচেতনতা, মানুষকে সাহসী করে গড়ে তোলা এই কাজগুলো সব জায়গাতেই চলছে।’
[১৪]আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তৃণমূলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলার চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান সরকারি ত্রাণ বিতরণ করেন। এ ছাড়া রাজনৈতিকভাবে আমাদের দলীয় নেতা-কর্মী এবং এলাকার নামকরা স্কুল-কলেজগুলোর শিক্ষক, মসজিদের ইমাম অর্থাৎ আমাদের সুশীল সমাজের যারা আছেন তাদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। তারা রাজনৈতিক ত্রাণ বিতরণ করেন। সরকারি ত্রাণকাজেও অংশ নিচ্ছেন যাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারি ত্রাণে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ না থাকলেও দলীয় ত্রাণ বিতরণের জন্য তাদের বলা হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। সত্র- মানবকণ্ঠ ও বাংলাইনসাইডার