অলক সরকার: আমি ও আমার মতো সকল নিম্ন-মধ্যবিত্ত কিভাবে দিন কাটাবে? আজ ফরেন পলিসির এক প্রতিবেদন পড়ে চমকে উঠলাম। খোদ আমেরিকায় গত মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ে দেশটির ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন।ফরেন পলিসির রিপোর্টে আরও বলা হয়, ফেডারেল রিজার্ভের ঘোষণাটি ঠিক এমন সময়ে এল, যখন লেবার ডিপার্টমেন্টের সবশেষ সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে বেকারভাতা পেতে যুক্তরাষ্ট্রে আবেদন করেছেন ৬৯ লাখের বেশি মানুষ। এর আগের সপ্তাহে আবেদন করেছিলেন ৬৭ লাখ এবং ২১ মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহে আবেদন করেছিলেন ৩৩ লাখ মানুষ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা গিওরগিভা বলেছেন, ১৯২৯ সালে শুরু হয়ে প্রায় এক দশকব্যাপী চলা মহামন্দার পর বিশ্ব এবার সবচয়ে খারাপ বৈশ্বিক জরুরি অবস্থায় পড়তে যাচ্ছে।
তার সব কিছু স্বীকার করে নিচ্ছেন। কতোজন মারা যেতে পারে সে বিষয়েও হোয়াইট হাউজ বলেছে যে মৃতের সংখ্যা দুই লাখের ভেতরে রাখার চেষ্ঠা চলছে।উল্টোদিকে আমাদের দেশে?চুপ থাকুন।দেখতে থাকুন।যদিবা বেঁচে থাকেন তবে প্রশ্ন" দিন" কাটাতে কি প্রয়োজন--এটা তো জানেনই। আমরা নিম্নমধ্যবিত্তরা বড়জোর এক সপ্তাহের রসদ-ঔষধ একসাথে কিনতে,মজুদ রাখতে সক্ষম ; বাদ-বাকী দিন? আমাদের আবার " ইজ্জতবোধ ", " মান-সম্মান " সাংঘাতিক প্রখর! চেহারায়-কাপড়ে-বাজারে যেনো কোনোভাবেই প্রকাশ না পায়----আমাদের কাছে মাল-কড়ি নাই।না, নেভার , কখনোই আমরা বাবতে পারিনি ত্রাণের জন্য আমরা লাইনে দাড়াবো। ওই যে ‘ইজ্জ্বত বড়োই টনটনে’।
ক্ষুধা-পেটে দাঁত কেলিয়ে হেসে উত্তর দিয়ে বুঝাতে প্রাণান্তকর চেষ্টা ----" ভালোই আছি "! আমাদের মধ্যে আবার কিছু প্রকারভেদ রয়েছে , কেউ দোকান থেকে বাকীতে কিনতে গিয়ে প্রথমে দোকানদারের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়তে চেষ্টা করেন--যদিও মোটেও পছন্দ করেন না ঐ দোকানদারকে। কেউ কেউ মর্যালেটি , এথিকস খোঁজেন। এরা সততা'র, সম্পর্কের নতুন ডেফিনেশন তৈরী করে..... " মাল-কড়ি-ই সবকিছু নয় " বলে উপসংহার টানেন। এই নিদানের কালে যেন না খেয়ে নিরব বিপ্লব করছেন।ভাবটা এমনই।
অন্যদিকে এই আমরা রয়েছি মারাত্মক কিছু সমস্যায়, এক শ্রেনীর মানুষ যারা আমাদের মতো সমস্যার অন্তর্ভূক্ত নন্, আমাদের কাছে অবাধে আসতে পারেন । বলেন, ত্রাণ দেন।বলেন, আজ এ দিবস তো কাল ওই দিবস। আজ বা কাল ফুটবল-ক্রিকেট ম্যাচ ( স্বাস্হ্য তো ভালো রাখতে হবে, ইমিউন সিস্টেমই সব ।হাহাহাহা। আরে ভাই, খেলাধূলায় জয়-পরাজয় বড় বিষয় নয়-- অংশগ্রহন করাটাই বড়) ব্লাড ডোনার গ্রুপ তৈরী ,সামাজিক দায়িত্ব আছে না, ( লোভ রয়েছে প্রচারপত্রে নামটা ছাপা হবে, নামটা অন্য কেউ না দেখুক --ও পাড়া'র ' রুবি রায় ' দেখলে-ই হলো} ইনিয়ে-বিনিয়ে 'রুবি রায়'দেখেছে কি-না জানতে হবে, আবার রুবি রায় ও বদলে গেছে।ও যেন এই নিদানের কালে সাতকাহনের দীপাবলী। ইজম বদল। কিন্তু যে কোনো ইজমই তো কারাগাররে ভাই সেসবতো আমরা ভুলে যাইনি।ফেসবুকে গোলগল্প হচ্ছে।করোনাকালের ছবি আপলোড করে এক্সপ্রেসন দিচ্ছেন।যেনবা সবাই ডাক্তরও হয়ে উঠেছেন।এডভাইস। বিন্তু আমি বা আপনি যদি হৃদরোগেও মরে যাই তবে টানিয়ে দেওয়া হবে লাল পতাকা।মানে বাড়ি তো হলো লকডাউন। আর করোনা আক্রান্তের ভয়ে থাকবে না লোকজন।
না হাসপাতালে সিট নেই। আমরা বড়োই নিম্ন মধ্যবিত্ত। আমাদের এন্টেনা তো কমই। তাই না?
বাজার বন্ধ। ব্যবসা বন্ধ।সবই। এখন যদি করোনায় আক্রান্ত না ও হই তবে কি খেয়ে বাঁচবো?
ওল্ড মিডলক্লাস ভ্যালুজ? দেশপ্রেম( দেশ কিন্তু শুধু ভৌগলিক না, মানসিকও)? করোনার খবর শুনতে শুনতে প্যারানয়ায় আক্রান্ত হয়ে?
চিকিতসা নেই। খাবার নেই। বসে থাকো। বসে খাকো। ভাবতে থাকো। ভাবতে থাকো। কি যে বলি, বেশি ভাবতে নেই,ভাবলে অসহায় বরং ‘এমন দেশটি কোথাও খঁজে পাবে নাকো তুমি’র দেশে সহানুভুতিকে , ক্ষুধাকে ভোতা করে দাও। সেটিই হবে সহায়।নাকি ভুল বললাম মিনিস্টার?