শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি: কী পাচ্ছে বাংলাদেশ, কী হারাতে পারে? ◈ রাতেই সোহরাওয়ার্দীতে জড়ো হচ্ছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা (ভিডিও) ◈ চাপাতি হাতে ব্যাগ ছিনিয়ে পুলিশের সামনেই হেঁটে গেলো ছিনতাইকারী, ভিডিও ভাইরাল ◈ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ভারতের বৃহত্তম তেল শোধনাগার নায়ারা রিফাইনারির ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা ◈ রাতের আকাশে ভেসে উঠলো ‘নাটক কম করো পিও’ (ভিডিও) ◈ জটিল ভয়ানক যে রোগে আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! ◈ কুড়িগ্রামে চাঁদা দাবি করা জামায়াতের সেই নেতা সাময়িক বহিষ্কার ◈ বড়াইগ্রামে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে দুই বিষয়ে দুই পরীক্ষার্থী ফেল! ◈ টাঙ্গাইলে পুলিশ হেফাজতে বিএনপি নেতার রহস্যজনক মৃত্যু ◈ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ তলিয়ে দেখা দরকার: শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি

প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল, ২০২০, ০১:২১ রাত
আপডেট : ০২ এপ্রিল, ২০২০, ০১:২১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] আমতলী থানায় আসামির ‘ঝুলান্ত লাশ’, অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না! কিভাবে থানায় হাজতে থাকা ব্যক্তি পুলিশ কর্মকর্তার রুমে গিয়ে আত্মহত্যা করলো

মো: সাগর আকন, বরগুনা প্রতিনিধি: [২] জেলার আমতলীতে থানার মধ্যে এক সন্দেহভাজন আসামির লাশ উদ্ধার নিয়ে রহস্য কাটছে না। নিহতের পরিবার ও পুলিশের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন দাবি করা হচ্ছে। গ্রেফতারের পর কেন তিন দিন আসামিকে থানায় আটকে রাখা হলো, থানায় পুলিশের ২৪ ঘণ্টা উপস্থিতির মধ্যে কীভাবে তিনি একজন কর্মকর্তার রুমে গিয়ে আত্মহত্যা করলেন, আত্মহত্যার সরঞ্জামই কীভাবে জোগাড় করলেন এসব নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

[৩] এ বিষয়ে সদ্য প্রত্যাহার হওয়া বরগুনার আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার বলেন, ‘ইব্রাহিম হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও থানার পরিদর্শক মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ২৪ মার্চ শানু হাওলাদারকে গ্রেফতার করার পরে মামলার অন্যান্য আসামিদের খোঁজ করতে তাকে নিয়ে অভিযানে যায়। খুঁজতে খুঁজতে একদিন লেগে যাওয়ায় ২৫ তারিখ তাকে থানায় হাজির করে আমাকে বলে শানুকে গ্রেফতার করছি, সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে, তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অন্যান্য আসামিদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করায় তাকে নিয়ে থানায় আসতে দেরি হয়েছে। এসময় মনোরঞ্জন আমাকে জানায় ২৬ তারিখ শানু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবে।’

[৪] তিনি আরও বলেন, ‘২৫ তারিখ রাতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি। জিজ্ঞাসাবাদে সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী-তালতলী সার্কেল) সৈয়দ রবিউল ইসলাম স্যার, মনোরঞ্জন মিস্ত্রি, এসআই সফিউল, শাহাবুলসহ আরও কয়েকজন এসআই ছিলেন। তাকে যে হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদে সে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে। কীভাবে কী হয়েছে, কে কে জড়িত ছিল জানিয়েছে।’

[৫] তিনি দাবি করেন, ‘বিস্তারিত জবানবন্দি দেওয়ার পরে তাকে হাজতখানায় রেখে আমি এবং সার্কেল স্যার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মনোরঞ্জন মিস্ত্রিকে নিয়ে নিচে যাই। এরপর সার্কেল স্যার অফিসে চলে গেছেন। আমি থানার তিন তলায় আমার রুমে চলে গেছি। এরপরও মনোরঞ্জন তাকে রাত ৩টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিউটি অফিসার ও সেন্ট্রিকে বলে গেছে হাজতখানায় রেখে সুন্দরভাবে পাহারা দেওয়ার জন্য। মনোরঞ্জন পরে ডিউটি অফিসারকে মোবাইল ফোনে জানান, আসামিকে হাত মুখ ধোয়ার সুযোগ দিয়ে তার রুমে রাখতে। সেই মোতাবেক ওকে হাজতখানা থেকে বের করে ৫টা ৫৪ মিনিটের দিকে ওয়াশ রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। ৫টা ৫৯ মিনিটে ওয়াশ রুম থেকে আসলে তাকে পরিদর্শকের রুমে ঢোকানো হয়। ৬টার সময় নতুন সেন্ট্রিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে পুরনো সেন্ট্রি চলে যায়। নতুন সেন্ট্রি মনির ৬টা ১ মিনিটে জাতীয় পতাকা নিয়ে নিচে টানিয়ে এসে ৬টা ১৪ মিনিটের সময় রুমে ধাক্কা দিয়ে দেখে ভেতর থেকে আটকানো। মনিরের তৎপরতা দেখে অন্য পুলিশ সদস্যরাও এসে দরজা খোলার চেষ্টা করে। ৮-৯ জন পুলিশ সদস্য ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে নিচের ছিটকিনি খুলতে পেরে দেখে ভেতরে লাশ ঝুলছে। তখন এএসআই লিমন ও কনস্টেবল কবির আমাকে ওপরে গিয়ে ৬টা ১৮ মিনিটের দিকে নিয়ে আসে। এরপর একটি কুড়াল দিয়ে ছিটকিনি খোলা হয়। পরে বিষয়টি সবাইকে জানানো হয়েছে।’

[৬] মাত্র ১৮ মিনিটের মধ্যে তিনি মারা গেলেন, সে বিষয়টি কেউ খেয়াল করলেন না এটা কতোটা যৌক্তিক মনে করেন আপনি এমন প্রশ্নের জবাবে সদ্য প্রত্যাহার হওয়া ওসি আবুল বাশার কোনও উত্তর দিতে পারেননি। পরিদর্শকের কক্ষে যে স্থান থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল সেখানকার সব আসবাবপত্র পরিপাটি পাওয়া গেছে। যে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলা হচ্ছে, সে ফ্যানের সঙ্গে রশিই বা কীভাবে টাঙিয়ে ছিলেন, তিনি কোথায় এই রশি পেলেন- জিজ্ঞেস করা হলেও তিনি এরও কোনও উত্তর দিতে পারেননি।

[৭] এবিষয়ে সদস্য সাসপেন্ড হওয়া আমতলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

[৮] সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসান তারিক পলাশ বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৩ এর ২ অনুচ্ছেদ, ফৌজধারি কার্যবিধি আইনের ৬১ ধারা ও পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি) ৩২৪ বিধিতে একজন আসামিকে গ্রেফতারের পর কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখানে বলা হয়েছে কোনও আসামিকে গ্রেফতারের পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে তার অপরাধের বর্ণনাসহ একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠাতে হবে। কোনও পুলিশ কর্মকর্তা যদি এটি না করেন তবে তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধি ভঙ্গ করেছেন এবং পিআরবি সঠিকভাবে পালন করেননি।

[৯] তিনি আরও বলেন, পুলিশি রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি) ৩২৮(ঘ) বিধি অনুযায়ী গ্রেফতারের পর আসামি আত্মহত্যা করতে পারে এমন কোনও বস্তু হাজতখানার মধ্যে থাকতে পারবে না।

[১০] বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, ‘থানার মধ্যে আত্মহত্যার যে বিষয়টি বলা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তারা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

[১১] তিনি আরও বলেন, এঘটনায় আমতলী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশারকে প্রত্যাহার, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও ডিউটি অফিসার মো. আরিফুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

[১২] প্রসঙ্গত, ২৬ মার্চ সকালে বরগুনার আমতলী থানার পরিদর্শকের কক্ষ থেকে সন্দেহভাজন এক আসামি শানু হাওলাদারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এসময় পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় শানুকে ২৩ মার্চ রাতে ধরে নিয়ে এসে ঘুষের দাবিতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ দাবি করে শানু হাওলাদার নিজেই আত্মহত্যা করেছে। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়