কামাল হোসেন : [২] রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বাবার সামনেই ৮৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা দাদী মুলুকজান বিবিকে পিটিয়ে আহত করেছে নাতি মাসুদ শেখ (৩০)। সে উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সোহরাব শেখের ছেলে। এসময় বৃদ্ধার আরেক ছেলে নান্নু শেখকেও মারপিট করা হয়।
[৩] এ ঘটনায় সোমবার সকালে নান্নু শেখ বাদী হয়ে বড় ভাই সোহরাব শেখকে প্রধান আসামী করে ৭ জনের বিরুদ্ধে গোয়ালন্দঘাট থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ অভিযুক্ত মাসুদ শেখকে গ্রেফতার করেছে। আহত বৃদ্ধা মুলুকজান বিবিকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়।
[৪] মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামীলীগ নেতা সোহরাব হোসেনের সাথে ও তার অন্যন্যা ভাইদের দীর্ঘদিন ধরে জমি-জমা নিয়ে দ্ব›দ্ব চলে আসছিল। এর জের ধরে গত শুক্রবার দুপুরে সোহরাবের নেতৃত্বে ছোটভাই নান্নুকে মারপিট করা হয়। তাকে রক্ষা করতে এসে বৃদ্ধা মুলুকজান মারপিটের শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন।
[৫] হামলায় সোহরাব শেখ নিজে ছাড়াও তার অপর ভাই মুন্নাফ শেখ ও তাদের ছেলেরা অংশ নেয়। মারপিটের এক পর্যায়ে নান্নু প্রতিবেশী নৈমদ্দি শেখের ঘরে পালিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। সোহরাব ও তার লোকজন সেখানে গিয়ে বাড়ীর দরজা ভেঙ্গে পুনরায় নান্নুকে মারপিটর করে। এ সময় বৃদ্ধ মা নান্নুকে রক্ষার জন্য ওই ঘরের দরজা আগলে দাঁড়ায়। তখন সোহরাবের ছেলে মাসুদ, মেয়ে সীমা, মুন্নাফের ছেলে হিরু ওই বৃদ্ধা দাদীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর তাদের হাতে থাকা কাঠের বাঠাম দিয়ে বৃদ্ধাকে মারপিট করে। এতে ওই বৃদ্ধা আহত হলে তাকে গোয়ালন্দ হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। নান্নুকেও প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
[৬] মারপিটের শিকার নান্নু শেখ জানান, প্রায় ৭ মাস আগে তিনি তার নিজস্ব জায়গার উপর ঘর তুলতে গেলে তার বড় ভাই সোহরাব বাধা দেয়। এরপর থেকে সেখানে পড়ে থেকে ২৭ বস্তা সিমেন্ট, বালু কাঠসহ অন্যন্যা জিনিস নষ্ট হচ্ছে। এরপর শুক্রবার অন্য জায়গায় ঘর তোলার চেষ্টা করলেও বড়ভাই সোহরাব, তার ছেলে মুন্নাফ, মাসুদ, হিরুসহ ৭/৮জন এসে আমাকে মারপিট করে। বৃদ্ধ মা আমাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে এলে তাকেও মারপিট করে তারা।
[৭] বৃদ্ধা মুলুকজান বিবি অভিযোগ করে বলেন, তার বড় দুই ছেলে সোহরাব ও মুন্নাফ এবং তাদের ছেলেরা লাঠি সোঠা নিয়ে আমার ছোট ছেলে নান্নুকে মারপিট করতে থাকে। সে প্রতিবেশীর এক বাড়ীতে পালিয়ে যায়। কিন্তু ওরা সেখানেও তাকে মারতে যায়। তখন আমি ঠেকাতে গেলে হিরু, মুন্নাফ ও সীমা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে কাঠের বাটাম দিয়ে আঘাত করে।
[৮] আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব শেখ মারপিটের ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, আমার মা একজন চরম মিথ্যাবাদী। ওই দিন কোন মারপিটের ঘটনা ঘটে নাই। তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলেন, আমার মা তার ছোট ছেলেকে গোপনে জমি লিখে দিয়েছে। এ ঘটনার মিমাংসার চেষ্টা করাতে আমার অপরাধ হয়েছে।
[৯] গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান জানান, বৃদ্ধা মুলুকজান বিবিকে নির্মম ভাবে মারপিট করা হয়েছে। যার ক্ষত ওই বৃদ্ধার শরীরে দৃশ্যমান রয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের অভিযুক্ত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।