শিরোনাম
◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১০ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির ◈ কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, আইনের শাসনে জীবনযাপন করি: ড. ইউনূস ◈ মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ঢাকা ফিরছিলেন রফিক, পথে প্রাণ গেল সবার ◈ স্থায়ী জামিন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছি: ড. ইউনূসের আইনজীবী

প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারী, ২০২০, ০৫:৫৮ সকাল
আপডেট : ২৬ জানুয়ারী, ২০২০, ০৫:৫৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কবে চালু হবে স্পষ্ট অক্ষরে প্রেসক্রিপশন?

ডেস্ক রিপোর্ট  : উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)-এর বিজ্ঞপ্তির পরও বদলায়নি দেশের চিকিৎসকদের দেওয়া প্রেসক্রিপশনের চিত্র। এখন তারা অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন। এরফলে অনেক সময়ই ওষুধবিক্রেতারা ওষুধ নাম পড়তে পারছেন না। ফলে রোগীরাও যথাযথ ওষুধ কিনতে না পেরে বিপাকে পড়ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাতে লেখা অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশনের কারণে অনেক সময় ভুল ওষুধ সেবনে রোগীর মৃত্যুও ঘটে। রোগীর স্বজনরা বলছেন, আদালতের নির্দেশের পরও চিকিৎসকরা স্পষ্ট অক্ষরে প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন না। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কবে নাগাদ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী স্পষ্ট অক্ষরে প্রেসক্রিপশন মিলবে বলেও তারা প্রশ্ন তুলেছেন।

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মী মাকসুদ উন নবী। প্রেসক্রিপশনের ছবি দিয়ে তিনি লিখেছেন, তার মায়ের জন্য চিকিৎসক ওই প্রেসক্রিপশনটি হাতে লিখে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজে ও পশ্চিম রামপুরায় অবস্থিত ওষুধের দোকানের বিক্রেতারা সেটি পড়ে কিছুই বুঝতে পারেননি। পরে ফার্মেসিতে থাকা কয়েকজন বিক্রেতা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ওষুধের নাম উদ্ধার করতে পেরেছেন।

মাকসুদ উন নবীর মতো অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন রোগীর স্বজন ও ওষুধ বিক্রেতা। মগবাজার ডাক্তারগলিতে অবস্থিত নোয়াখালী ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতা রায়হান আলী বলেন, ‘প্রায় ১৭ বছর ধরে ফার্মেসিতে কাজ করছি। মাঝে-মধ্যেই এমন সব প্রেসক্রিপশন হাতে আসে, তাতে কী লেখা রয়েছে, কিছুই বুঝতে পারি না। এমনও হয়েছে, একটি প্রেসক্রিপশনের লেখা বুঝতে গিয়ে এত সময় যায়, তখন অন্য ক্রেতারা বিরক্ত হয়ে দোকান থেকে চলে যান। তাই এখন আর কোনও প্রেসক্রিপশন বুঝতে না পারলে ক্রেতাকে যত দ্রুত পারি, কৌশলে বিদায় করি। একজনের জন্য তো আমি তিনজনের কাছে বেচা বন্ধ করতে পারি না।’

মগবাজার ওয়ারল্যাসের রমনা ফার্মেসিতে গিয়েও পাওয়া যায় একই অভিযোগ। ফার্মেসি মালিক গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘মাঝে মাঝে এমন সব প্রেসক্রিপশন হাতে আসে, সেগুলো তার মতো অভিজ্ঞ মানুষও বুঝতে পারেন না।’ তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগে হাইকোর্ট নির্দেশনা দেন, বড় হাতের অক্ষরে ভালো করে প্রেসক্রিপশন লেখার জন্য। এরপর কিছুদিন সেটা মেনে চলতে দেখা গেছে, কিন্তু এখন আবার আগের অবস্থাতে ফিরে গেছেন চিকিৎসকরা।’

গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘মনিটরিংয়ে অভাব সবকিছুতে। যার কারণে কোনও নির্দেশনা আসলে বেশিদিন চলতে পারে না।’

আবার শরীয়তপুরে অবস্থিত ‘মের্সাস জনসেবা ফার্মেসি’র মালিক এস এম আলমগীর বাহার বলেন, ‘ঢাকার অবস্থা কী, সেটা জানি না। কিন্তু শরীয়তপুরের মতো মফস্বলে প্রেসক্রিপশন নিয়ে ভীষণ বিপদে পড়তে হয়। বেশিরভাগই গ্রাম থেকে আসা রোগীরা অসহায়ের মতো বসে থাকেন ফার্মেসিতে। না বোঝেন তারা কিছু, না বুঝি আমরা। এমনও হয়েছে চিকিৎসককে ফোন করে ওষুধের নাম জেনে তারপর ওষুধ দিয়েছি।’

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি স্পষ্ট অক্ষরে এবং বড় বা ছাপার অক্ষরে পড়ার উপযোগী করে প্রেসক্রিপশন দিতে চিকিৎসকদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সার্কুলার জারি করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, ওই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিএমডিসি-এর এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। কিন্তু এ সংক্রান্ত নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।

অস্পষ্ট অক্ষরে প্রেসক্রিপশন

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও বায়ো মেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ‘‘একই রকম দেখতে একাধিক ওষুধ রয়েছে। এমন ওষুধকে ‘লুক এলাইক’ বলা হয়। আবার বানান একইরকম নয় কিন্তু শুনতে একইরকম, এমন ওষুধকে বলা হয় ‘সাউন্ড এলাইক’। লুই এলাইক ও সাউন্ড এলাইক ওষুধের জন্য হাতের লেখা স্পষ্ট হওয়া বাধ্যতামূলক। না হলে ওষুধ ভুল হবে। আর ভুল ওষুধের কারণে রোগীর ক্ষতি হয়।’’

তবে, বিষয়টিকে বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে চিকিৎসকদের হাতের লেখা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। তবে, অন্যান্য দেশে এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়, কিন্তু আমাদের দেশে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সেভাবে দৃশ্যমান নয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও সক্রিয় হতে হবে।’

প্রায় একই অভিমত জানালেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘একটি ওষুধের সঙ্গে একটি ‘এস’, বা একটা ‘বি’ বা একটা ‘এ’-তেই অনেক তফাৎ হয়ে যায়। আর একটা বর্ণের জন্য মারাত্মক সমস্যা হয়। এগুলো চিকিৎসকরা না বুঝলে কারা বুঝবেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন করে দেশের ৬৪ জেলার বিএমএ শাখাসহ সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালককে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হবে।’’

ডা. এহতেশামুল হক আরও বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনার পর কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। অনেকে কম্পিউটারেও প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন। এটি ভালো দিক। আবার কেউ কেউ হাতে লিখছেন, কিন্তু সেগুলা অস্পষ্ট। আমরা আজই বিএমএ-এর পক্ষ থেকে আবারও পদক্ষেপ নেবো।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘হাই কোর্টের নির্দেশনার পর সব চিকিৎসককে এই বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। প্রয়োজন হলে আবারও দেওয়া হবে।’ নির্দেশ সবাইকে মানতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়