দেশ রূপান্তর : নির্বাচনে জিততে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রয়োজন হয় র্যাব-পুলিশের আর বিএনপির প্রয়োজন জনগণ- এমন মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, নির্বাচন কমিশনসহ সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার। আমরা জানি এ সরকার একটি ফ্যাসিবাদী সরকার।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নীলফামারী শিল্পকলা অডিটরিয়ামে জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব বলেন।
তিনি বলেন, র্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে অতীতের নির্বাচনের ফলাফল নিজের করেছে, তেমনি এবারের ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের ফলাফলও নিজেদের করবে তারা। তাই বলে কি আমরা মুখ বুজে বসে থাকব? না বসে থাকব না। আমাদের জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য, ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার রক্ষার জন্য রুখে দাঁড়াতে হবে।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে বিএনপির অংশ নিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছে সাধারণ মানুষর। এটাই আমাদের বিজয়। সরকারের অত্যাচারে যেখানে আমরা মাঠে নামতে পারছি না, চলতে পারছি না। পুলিশ বাধা দেয়। নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা বেরিয়ে আসছি, আমাদের নেত্রীর মুক্তির কথা বলতে পারছি, ধানের শীষের বিজয়ের কথা বলতে পারছি। এই বিজয়কে যদি আমরা সুসংগঠিত করতে পারি তা হলে তাদের পরাজিত করা সম্ভব।’
নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির দরকার হয় মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা জনগণের পাশে থাকি, সে জন্য জনগণ আমাদের চায় এবং আমার বারবার ক্ষমতায় আসি। আমাদের নির্বাচন করতে র্যাব, পুলিশ বিজিবিসহ অন্যান্য বাহিনীর দরকার হয় না। আমাদের দরকার হয় জনগণের আর জনগণ মাধ্যমেই আমরা জয়ী হয়ে সরকার গঠন করি। আর আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে থাকে না বলেই নির্বাচন করতে তাদের দরকার হয় র্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ অন্যান্য বাহিনীর’।
সংবাদমাধ্যমকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘১৯৭২ সালের আওয়ামী লীগ আইনজারি করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করেছিল। তখন সাংবাদিকরা চাইলেই সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করতে পারত না। এখনও সাংবাদিকরা আছেন, কিন্তু তাদের কোনো ক্ষমতা নেই। কারণ বর্তমান সরকার ভিন্নভাবে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে। সাংবাদিকরা চাইলেও সব বলতে পারবে না, লিখতে পারবে না, এমনকি প্রকৃত সত্য প্রকাশ করতেও পারে না। লিখতে কিংবা বলতে গেলেই তাদের ওপর ভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে’।
শীতার্ত মানুষের পাশে না থেকে ঢাকায় বসে নালিশের রাজনীতি করছেন মির্জা ফখরুল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরর সম্প্রতি দেওয়া এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব ভুলে যাচ্ছেন, শীতার্ত মানুষকে শীতবস্ত্র দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের, বিরোধী দলের নয়। কারণ আপনারা জনগণের দায়িত্ব নিয়েছেন। জনগণের সমস্ত দায়িত্ব আপনার সরকারের। তারপরও বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি শীতার্ত মানুষের মাঝে আগের মতো এবারও শীতবস্ত্র বিতরণ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও শীতার্ত এবং অসহায় মানুষের পাশে থেকে তাদের কষ্ট লাঘবে থাকবে বিএনপি’।
জেলা বিএনপির আহ্বায় আলমগীর সরকারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব জহুরুল আলমের সঞ্চালনায় সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ, নীলফামারী সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রাহেদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক কাজী আক্তারুজ্জামান, পৌর বিএনপির সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আল মাসুদ চৌধুরী,জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মরূফ পারভেজ প্রিন্স প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় অধিবেশনে আলমগীর সরকারকে সভাপতি ও জহুরুল আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা বিএনপির কমিটি ১৫১ সদস্যের দ্বি-বার্ষিক কমিটি ঘোষণা করেন।