কামরুল হাসান মামুন : যে মাটিতে যেই গাছ ও গাছের ফল হয় সেটা সেই মাটির মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় বলেই বিনা রোপণে আপনাআপনি হয়। আমি আমার বাবার যেই বাড়িতে বড় হয়েছি সেটি প্রায় দুই একরের বেশি জায়গা নিয়ে। সেই বাড়ির একটি অংশজুড়ে ছিলো জঙ্গল। ছোটবেলায় সেটিই ছিলো আমার প্রিয় একটি জায়গা। ওখানে গেলে দেখতে পেতাম নানা রকম পাখি। হলুদ রঙের পাখি যা আকার কিংবা গড়নে অনেকটা ময়না পাখির মতো আমার খুব পছন্দের ছিলো। এছাড়া ওখানে গেলে অনেক লম্বা লেজওয়ালা পাখি দেখতে পেতাম। সেই জঙ্গলে ছিলো অনেক গাব গাছ। এর ফলও আমার খুব প্রিয় ছিলো। আহ! কতোদিন গাব ফল খাই না। গাব গাছের সঙ্গে বাঙালির শরীরের গড়নেরও বেশ মিল। ছোটখাটো কিন্তু শক্ত সামর্থ্য এবং সহজে ভেঙে পড়ে না। গাব ফলের আঠা দিয়ে আমরা ঘুড়ি ওড়ানোর সুতায় মাঞ্জা দিতাম।
সঙ্গে কাছের গুঁড়াও দিতাম যেন প্রতিপক্ষের ঘুড়িকে কাটা যায়। আহ! ছোটবেলার স্মৃতি। ঢাকা শহরে কোথাও গাব গাছ দেখিনি। এই শহরের পার্কে, রাস্তার মাঝের আইল্যান্ডে আমরা এই গাছ লাগাতে পারতাম। আমরা আমাদের ঢাকা শহরের পার্কে ইউক্লিপ্টাস গাছ লাগাই। এটি আমাদের দেশীয় গাছ নয়। তাছাড়া এটি পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। ইউক্যালিপ্টাস গাছ আশপাশের প্রায় দশ ফুট এলাকার ও ভূগর্ভের প্রায় পঞ্চাশ ফুট নিচের পানি শোষণ করে আকাশে উঠিয়ে দেয়। এই গাছ রাতদিন ২৪ ঘণ্টাই পানি শোষণ করে বাতাসে ছাড়ে। এর ফলে মাটিতে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এই গাছের কাঠের গুণাগুণ তেমন ভালো নয়। এ গাছ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এই গাছের আশপাশে অন্য প্রজাতির গাছ জন্মাতে পারে না। এ গাছ মাটিকে শুষ্ক করে ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। আর ইউক্যালিপ্টাস গাছ কেটে ফেললে মাটির উর্বরতা ফিরে আসতে দীর্ঘ সময় লাগে। গাব গাছ, আম গাছ, কাঁঠাল গাছ ইত্যাদি না লাগিয়ে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইউক্লিপটাস গাছ লাগানোর আইডিয়াটা কার ছিলো জানতে খুব মন চায়। ফেসবুক থেকে