শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৫ দুপুর
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কালো ধোঁয়ার কারণে বাড়ছে হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি

বণিকবার্তা : বাতাসে অতিসূক্ষ্ণ বস্তুকণা বাড়িয়ে দিচ্ছে কালো ধোঁয়া। এ কালো ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে মূলত যানবাহনের জ্বালানি থেকে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে কঠিন বর্জ্য পোড়ানোর ফলেও কালো ধোঁয়া মিশছে বাতাসে। শিল্প-কারখানার কালো ধোঁয়া এর মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার কারণে বাতাসে বাড়ছে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অতিসূক্ষ্ণ বস্তুকণার উপস্থিতি, যা প্রকোপ বাড়াচ্ছে শ্বাসকষ্টজনিত রোগের।

গবেষণার তথ্য বলছে, দেশে অসংক্রামক রোগের কারণে অকালমৃত্যুর ১০ শতাংশ হচ্ছে প্রত্যক্ষভাবে কালো ধোঁয়ার কারণে সৃষ্ট শ্বাসকষ্টজনিত রোগে। বছরে প্রায় ৮ লাখ ৫৬ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে অসংক্রামক রোগে। এর ১০ শতাংশ হিসাবে কালো ধোঁয়ার কারণে মারা যাচ্ছে ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ। হূদরোগ ও ক্যান্সারের মতো রোগেরও ঝুঁকি বাড়ছে এই ধোয়ার কারণে।

বাতাসে কালো ধোঁয়ার উপস্থিতি ও এর প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা করেছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। প্রতিষ্ঠানটির রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মিতালী পারভীনের গবেষণা প্রতিবেদনটি গতকাল ‘বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালমানাক-২০১৯’-এর সমাপনী দিনে উপস্থাপন করা হয়।

গবেষণার অংশ হিসেবে চলতি বছরের মে-জুনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৪ হাজার ৩০০ জনের ওপর জরিপ চালায় বিআইডিএস। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৬৯১ জনকে তিন মাস বা তার বেশি সময় ধরে অসুস্থতায় ভুগতে দেখা গেছে। এসব মানুষের মধ্যে কালো ধোঁয়ার কারণে আক্রান্ত প্রায় ১১ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে শাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৮ শতাংশ, অ্যাজমায় ২ দশমিক ৩ ও ফুসফুসের (লাং) রোগে আক্রান্ত হয়েছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ।

গবেষক মিতালী পারভীন এর দেয়া তথ্যমতে, বায়ুদূষণের কারণে মানুষের কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও গড় আয়ু কতটুকু কমছে, সেটি দেখার জন্যই গবেষণাটি করা হচ্ছে। মূলত ডিজেল, কেরোসিন কিংবা ফসিল ফুয়েলের ইনকমপ্লিট কম্বাজশনের কারণে কালো ধোঁয়ার উপস্থিতি বাড়ছে। পাশাপাশি বায়োমাস বা কাঠ পোড়ানোর কারণেও এটি বেড়ে যাচ্ছে। যানবাহনের ধোঁয়ার সঙ্গে শীতকালে ইটভাটার ধোঁয়া যুক্ত হওয়ার কারণে এ সময়ে সবচেয়ে বেশি কালো ধোঁয়া তৈরি হয়।

বায়ুদূষণের অন্যতম উপাদান পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২.৫। ২০০৫ সালে এটির সহনীয় মাত্রা নির্ধারণের জন্য ন্যাশনাল অ্যাম্বিয়েন্ট এয়ার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ডস (এনএএকিউএস) নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশের পিএম ২.৫-এর বার্ষিক সহনীয় মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১৫ মাইক্রোগ্রাম। তবে ২৪ ঘণ্টার জন্য ৬৫ মাইক্রোগ্রাম থাকতে পারে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এ মাত্রা আরো কম হওয়া দরকার। তাদের সহনীয় মাত্রা বার্ষিকভাবে প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম ও ২৪ ঘণ্টার জন্য ২৫ মাইক্রোগ্রাম।

কিন্তু বাংলাদেশে এটির উপস্থিতি আরো বেশি। ২০১২ থেকে ২০১৯ সালের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, কখনো কখনো তা ৩০০ মাইক্রোগ্রাম ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের বেশির ভাগ সময় এর মাত্রা ছিল ২০০ মাইক্রোগ্রামের ওপর। এর কারণে বায়ুদূষণজনিত শাসকষ্ট রোগের প্রাদর্ভাব বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রত্যাশিত গড় আয়ু থেকে ২২ মাসের বেশি কমে যাচ্ছে।

জানা গেছে, বাতাসে কালো ধোঁয়ার পরিমাপ করা হয়েছে মূলত রাজধানী ও তার আশপাশের সাতটি এলাকায়। এগুলো হলো সংসদ ভবন, ফার্মগেটের বিএআরসি, দারুসসালাম, লালবাগ, রাজারবাড়ী, তেজগাঁও, টঙ্গী এলাকা। এর মধ্যে সংসদ ভবন, ফার্মগেটের বিএআরসি, দারুসসালাম এলাকায় গড়ে প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫-এর মাত্রা ছিল ১১৭ মাইক্রোগ্রাম। এছাড়া লালবাগে ৮৮, রাজারবাগে ৭৭, তেজগাঁওয়ে ৯৩ ও টঙ্গীতে ১০১ মাইক্রোগ্রাম। এসব এলাকায় সবচেয়ে কম থাকে জুলাই মাসে এবং সর্বোচ্চ থাকে ডিসেম্বরে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কালো ধোঁয়ার উপস্থিতি শীতের সময় বেশি দেখা যাচ্ছে। মূলত ইটভাটা ও যানবাহনের ধোঁয়া শিশু ও বয়স্কদের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠছে। শিশুদের ফুসফুসের কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে। পূর্ণমাত্রায় কাজ করছে না তাদের ফুসফুস। তবে দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) জিয়াউল হক। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্য অনেক শহরেই বায়ুদূষণ ঢাকার চেয়ে বেশি। তবে ঢাকায়ও বায়ুদূষণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এ দূষণ কমিয়ে আনতে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অনুলিখন : তন্নীমা আক্তার, সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়