দেবদুলাল মুন্না: নেদারল্যান্ডসের রাজার পক্ষ থেকে নাইটহুড ‘অফিসার ইন দ্য অর্ডার অব অরেঞ্জ-নাসাউ’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন ইমেরিটাস স্যার ফজলে হাসান আবেদ। দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারী ও শিশু উন্নয়নে তার ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ এই খেতাব দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় স্যার ফজলে আবেদের গুলশানের বাসায় রাজা কিং উইলেম আলেকজান্ডার অব দ্য নেদারল্যান্ডসের পক্ষে দেশটির রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভেরওয়েইজ এই খেতাবের মর্যাদাসূচক পরিচয়চিহ্ন হস্তান্তর করেন।
এদিকে স্যার ফজলে হাসান আবেদ ইতোমধ্যে একটি চিঠিতে লিখেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৫ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে ব্র্যাক, সেটাই তার প্রত্যাশা। খেতাব প্রাপ্তি উপলক্ষ্যে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে খুব শিগগিরই তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন ব্র্যাকের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকতা মাহবুব কবীর। ব্র্যাকে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আফসান চৌধুরী। আফসান চৌধুরী গতকাল একটি চমকপ্রদ তথ্য জানান ,ফজলে হাসান আবেদের বাবা’র চাচাও অবিভক্ত ভারতে নাইট উপাধি পেয়েছিলেন। তবে উনার নাম আফসান চৌধুরী স্মরণ করতে পারেননি।
আফসান চৌধুরী বলেন, ‘ ফজলে হাসান আবেদের পরিবারে আগে নাইট খেতাব পাওয়া মানুষ রয়েছেন। আবেদ ভাই (ফজলে হাসান আবেদ) বৃটেনে পড়াশোনা করেছেন। ছাত্রাবস্থায় বৃটেনে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দেশের বাইরে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারতেন। কিন্তু দেশের প্রান্তিক মানুষের পক্ষে কাজ করার জন্য দেশে ফিরেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই তিনি সিলেটের শাল্লায় যুদ্ধে বিধ্বস্ত এলাকায় গিয়ে মানুষের হাহাকার দেখে প্রথম সিদ্ধান্ত নেন তাদের জন্য কিছু করার। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিটি (ব্র্যাক) প্রতিষ্ঠা করেন। সেবছরই অক্সফাম-জিবি প্রায় দুই লক্ষ পাউন্ড দিয়েছিল। সেই অর্থ দিয়ে ব্র্যাক অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নেয়। পরে অবশ্য ১৯৭৩ সালে যখন উন্নয়ন সংস্থা হিসাবে ব্র্যাক কার্যক্রম শুরু করে, তখন তার নামের বিস্তারিত পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি। তবে সংক্ষিপ্ত নাম ব্র্যাকই থাকে। মুক্তিযুদ্ধ একটা আমাদের জাতীয় জীবনে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। সেসময় আবেদ ভাই অনুভব করেন নারীর ক্ষমতায়ন দরকার। স্বাধীনতাত্তোর পরিস্থিতিতে দুঃস্থ মানুষকে সেবা দেয়ার মতো অবস্থা রাষ্ট্রের ছিল না। সেটা তারা পূরণ করেছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে, শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণের হার খুব কম ছিল। ব্র্যাক সেখানে অগ্রণী ভুমিকা রেখেছে। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে এই নারীদের সরাসরি তারা অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত করেছে।’
ব্র্যাক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বের ১২টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে। বিশ্বের অন্যতম বড় বেসরকারি সংস্থা বলে মনে করা হয় সংস্থাটিকে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১১ কোটি ৩০লাখ মানুষকে সেবা দিচ্ছে। কর্মী সংখ্যা রয়েছে ৯০ হাজার ৬৯৩জন।দেশের বাইরে কাজ করার জন্য তৈরি হয়েছে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের। ২০০২ সালে আফগানিস্তানে কাজ করার মাধ্যমে দেশের বাইরে কর্মকাণ্ড শুরু হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও কাজ করছে মিয়ানমার নেপাল, রুয়ান্ডা হাইতি, উগান্ডা, তানজানিয়া, লাইবেরিয়া, সাউথ সুদান, সিয়েরা লিওন, আফগানিস্তান ও ফিলিপিন্সে।