দেবদুলাল মুন্না: বাংলা সাহিত্যের লেখক নবনীতা দেব সেন গত বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতায় মারা যান তার ৮১ বছর বয়সে। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। তিনি অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের প্রাক্তন স্ত্রী। বৃহস্পতিবার নবনীতা দেবসেন মারা যাওয়ার পরই নবনীতা ও অমর্ত্য’র সম্পর্ক ভাঙনের জন্য অমর্ত্যসেনকে দায়ী করে ফেসবুকে ট্রল শুরু হয়। অমর্ত্য সেন বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।
শুক্রবার তিনি বিবিসি ও দ্য ওয়াল গণমাধ্যমকে টেলি-সাক্ষাতকারে জানান, তাদের সম্পর্ক ডিভোর্সের পরও ভালো ছিল। যাদবপুর বিশ্বাবিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সূত্রেই দু’জনের আলাপ। সেখানেই গড়ে উঠেছিল সম্পর্ক। তারপর বিয়ে। কিন্তু বিচ্ছেদও হয়ে গিয়েছিল তাঁদের। তিনি জানান, তাদের দুই কন্যা অন্তরা দেব সেন ও নন্দনা দেব সেনের জন্যই নিয়মিত যোগাযোগ ছিল নবনীতাদেবীর সঙ্গে। গত সপ্তাহে তাদের মধ্যে আলাপ হয়েছে। নবনীতার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন। তাদের মেয়ে দুটি মা নবনীতা দেবসেনের কাছে থাকতেন।
তিনি বলেন,‘ নবনীতার লেখা, চিন্তা করার ক্ষমতা, যুক্তিবোধ সবই আমাকে মুগ্ধ করতো। কিন্তু তারপরও সংসার টিকেনি। আমার মেয়ে দুটোর মা হিসেবে আমি এখনও তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তার মৃত্যু আমাকে অনেক স্মৃতিকাতর করছে। আফসোস, শেষ দেখা হলে ভাল লাগত।’
নবনীতা দেবসেনের বাবা ছিলেন কবি নরেন্দ্র দেব। মা রাধারানী দেব। হিন্দুস্থান পার্কে তাঁদের ‘ভালবাসা’ বাড়িতেই ১৯৩৮ সালের জানুয়ারি মাসে জন্ম নবনীতার। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সদ্যজাতর নাম রেখেছিলেন নবনীতা। কবি দম্পতির স্নেহচ্ছায়া আর আদ্যেপান্ত সাহিত্য আর সাংস্কৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছেন নবনীতা। গ্র্যাজুয়েশন করেছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। ১৯৫৮ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন। পরবর্তীতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিসটিংশন নিয়ে আবার এমএ পাশ করেন সাহিত্যের এই কৃতী ছাত্রী। পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পোস্ট ডক্টরেট ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সেসব সময়ের স্মৃতি প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘ আমাদের সেই সময়গুলো ছিল দুর্দান্ত। আমরা একাডেমিক বিষয়গুলোর চিন্তাভাবনাও একে অপরকে শেয়ার করতাম। একসময় আমাদের দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়ে কোলকাতার অনেকেই ইর্ষাকাতর ছিলেন।’
নবনীতা দেব সেনের ১৯৫৯ সালে প্রথম কবিতার বই ‘প্রথম প্রত্যয়’ প্রকাশিত হয়। প্রথম উপন্যাস ১৯৭৬ এ ‘আমি অনুপম’ প্রকাশিত হয়।। ১৯৭৫ থেকে ২০০২ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় অধ্যাপনা করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামুলক সাহিত্য বিভাগে। ইউরোপ ও আমেরিকার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত ছিলেন তিনি। আত্মজীবনী মূলক রম্যরচনা ‘নটী নবনীতা’ বইয়ের জন্যে ১৯৯৯ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান নবনীতা দেবসেন।
আপনার মতামত লিখুন :