রাশিদ রিয়াজ : এতে কোনো সন্দেহ নেই যে প্রত্যেক মানুষ তার জীবনের কোনো না কোনো সময় নিঃসঙ্গতা, হতাশ, অনিশ্চয়তা, বিভ্রান্তির খপ্পরে পড়ে যান। জীবনের মানে কিংবা বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পান না অনেকে। তাদের কোথায় থাকা উচিত এবং তারা জীবনের উদ্দেশ্য হাতিয়ে তল পান না। কিভাবে জীবনে বেঁচে থাকা উচিত সে সম্পর্কে তাদের জানা কিংবা অজানা নিয়ে দোটানায় পড়ে যান। তাদের জন্যে কুরআন এক অলৌকিক পথের দিশা হয়ে উঠতে পারে নি:সন্দেহে।
কারণ সঠিক পথের দিশা দেয়া আছে কুরআনেই। আমাদের জীবন ও জীবনের পরিভ্রমণ এবং অস্তিত্বের কার্যকর ও অর্থপূর্ণ সন্ধান জানান দেয়ার এক বিস্ময়কর পথ এভাবে অনেক মনীষি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পেয়েছেন কুরআন থেকেই। যাদের হৃদয় ছিল ফাঁকা তারা তাদের এ শূন্যস্থান পূরণ করে নিতে পারেন নতুন জীবনের সন্ধানে সেই অন্ধকার সুরঙ্গের শেষ মাথায় পথের দিশা হিসেবে আলোক রেখা খুঁজে পাওয়ার মত এক অভিপ্রায়ে।
আপনি হয়তো কুরআন নিয়ে এখনো সন্দেহের মধ্যে আছেন, রয়েছে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। কারণ তা এখনো পড়া হয়ে ওঠেনি আপনার সময়ের অভাবে। ঘোরের মধ্যে না থেকে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন কোথায় পাওয়া যায় এটি? কে লিখেছে নাকি ঐশী বাণী এটি। হ্যা আপনি হয়ত আরো জানতে আগ্রহী হয়ে উঠতেই পারেন। আপনি হয়ত শুনেছেন কিংবা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন কুরআন এমন এক দিকনির্দেশনামূলক কিতাব যা বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয়।
কোনো সুযোগ বা কাকতলীয়ভাবে নয়। এই কিতাব সত্যিই সত্যিকার এক অলৌকিক বাণী সমৃদ্ধ। এটি পবিত্র কুরআন এবং এটি খাঁটি, অপরিবর্তনীয় বাণী নিয়ে এসেছে আল্লাহর কাছ থেকে মানুষকে সাহায্য এবং সারাটাজীবন সঠিকভাবে ও সঠিকপথে চলার জন্যে।
অন্তত কয়েকটি কারণ বলা যেতে পারে কেনো প্রত্যেকের কুরআন পড়া উচিত।
এটি পথপ্রদর্শনের উৎস।
কুরআনের পাতা খুললেই আপনার চোখে পড়বে বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ সুবহানতালা বলেছেন, তিনি এটি মানবকল্যাণের জন্যে পথপ্রদর্শক হিসেবে পাঠিয়েছেন। যা সন্ধান ও নেতৃত্ব দেয় সঠিক পথের। কুরআন আপনাকে জীবনের মানে, দিক নির্দেশনা ও গন্তব্য জানতে সাহায্য করে। এবং আল্লাহতালা ওয়াদা করেছেন কুরআন পড়লে তা মানবকল্যাণে আপনাকে নিয়োজিত করতে প্রভাব ফেলবে এবং তা বুঝে উঠতে পারলে আমাদের জীবন থেকে অন্ধকার কেটে যাবে।
কুরআনে বলা হয়েছে, ‘মানুষকে অন্ধকারের গহ্বর থেকে কল্যান ও আলোর পথে নিয়ে আসো।’ (১৪:১)
‘তাদের পথনির্দেশ দাও শান্তির পথে।’ (৫:১৬)
‘সেই পথ নির্দেশ দাও যা সবচেয়ে উপযুক্ত ও বিশ্বাসীদের সুসংবাদ দেয়।’ (১৭:৯)
আপনার অস্তিত্বের জানান দেয় যা, তাকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। জীবনের মানে খুুঁজুন। যদি আপনি আপনার এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পান তাহলে তা সহজেই কুরআনে পাবেন। এসব প্রশ্নের সত্যিকারের উত্তর কুরআনেই আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে। কুরআন আপনাকে এমন এক দূরদর্শিতা দেবে যাতে সহজেই আপনি বুঝবেন কিভাবে আপনি আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জন করার পথ খুঁজে পাবেন। কুরআনের বাণীগুলো আপনাকে জানান দেবে কিভাবে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে, কিভাবে মানব শিশুর গঠন হয়েছে, আপনার অস্তিত্বের উৎস কি, জীবন ও অস্তিত্বের পবিত্রতা।
আল্লাহ সুবাহানতালা বলেছেন আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কি।
‘তিনি জীবন ও মৃত্যু দিয়েছেন আমাদের পরীক্ষা করার জন্যে, আমাদের মধ্যে কে সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ করেছে তা নির্ধারণ করতে।’ (৬৭:২)
‘আমি জীন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধু আমার ইবাদত করার জন্যে।’ (৫১:৫৬)
ইসলাম সম্পর্কে জানুন।
ইসলামভীতি সারাবিশ্বে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বৈষমহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। ভোগবাদী সমাজ, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী পর্যায়ে সম্পদ কুক্ষিগত করে না রেখে জাকাতভিত্তিক অর্থনীতির রুপরেখা বাস্তবায়নে গড়িমসি, মানুষকে দাস শ্রেণী হিসেবে বিভক্ত করে রেখে সুবিধা আদায় এগুলো ইসলাম সম্মত নয়। তাই ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে, প্রচারণা যন্ত্রকে ব্যবহার করে জঙ্গি ও সন্ত্রাস কায়েম করে তাদের অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য দিয়ে কারা একটির পর একটি মুসলিম দেশে যুদ্ধময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বশ্যতা ও লেজুড়বৃত্তি টাইপের সরকার রেখে পরাশক্তিগুলো কিভাবে স্বাধীনতাকে নামকাওয়াস্তে বিশ্বাসের ঘেরাটোপে বন্দী করে রেখেছে মাত্র, তা বুঝতে হলে, এর বিরুদ্ধে কার্যকর লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হলে ইসলাম সম্পর্কে আপনাকে জানতেই হবে। সমাজে বৈষম্য, অর্থনীতির বিকাশ একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে দেয়ার ‘খেলারাম খেলে যা’ মার্কা সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেয়ার অন্যতম এক বিকল্প হচ্ছে সুদ বিহীন (জিরো ইন্টারেস্ট অংশীদারিত্ব) অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।
অথচ সুদের বিপরীতে ইসলামী অর্থনীতি এখনো সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট বিকল্প অর্থনীতি হিসেবে কিভাবে কার্যকর পথের সন্ধান দিতে পারে তা পরিস্কার নয়। এক্ষেত্রে মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তিক যে সৃষ্টিশীল উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে তা শুধু মুসলমান নয় দল, ধর্ম ও বর্ণ ভেদাভেদ ছাড়াই তা নির্ধারণে, মানবকল্যাণে সকলের এগিয়ে আসা উচিত ও কর্তব্য। এজন্যেই কুরআন সকলের পড়া উচিত। কারণ আল্লাহতালা বলেছেন, এটি পাঠানো হয়েছে মানবগোষ্ঠীর কল্যাণের জন্যে। কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর জন্যে নয় কেবল।
ইসলামকে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অনেক বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। প্রতিটি মানুষের উচিত তার নিজস্ব পদ্ধতিতে ইসলাম সম্পর্কে এধরনের বিভ্রান্তি চিহ্নিত করে তা দূর করার কৌশল রপ্ত করা। কারণ ইসলামতো তার জন্যেই এসেছে যে মানবকল্যাণ চায়। কুরআন খাঁটি এবং অপরিবর্তনীয় করে রাখা হয়েছে এজন্যেই। যা আল্লাহর বাণী হিসেবে প্রেরিত। এতে কোনো সংযোজন বা বিয়োজন হয়নি। ১৪’শ বছরের আগে থেকে এটি পড়ে আসছে মানুষ। ঐশী বাণী সমৃদ্ধ এ গ্রন্থটি সম্পর্কে মানুষ জানতে চাচ্ছে। যা এক বৈধ ও বিশ্বাসযোগ্য উৎস হয়ে আছে আপনাকে সত্যের পথ প্রদর্শনের জন্যে।
‘এবং তোমার রবের বাণী সত্য ও ন্যায়বিচারে পরিপূর্ণতা পেয়েছে। কেউ তার বাণী পরিবর্তন করতে পারে না, এবং তিনি শোনেন ও জানেন।’ (৬:১১৫)
‘এটি সেই গ্রন্থ যাতে কোনো সন্দেহ নেই।’ (২:২)
আল্লাহ সম্পর্কে জানুন
আপনি যদি আল্লাহ সম্পর্কে যথেষ্ট জানতে চান, এমন অনুভূতি থাকলে তাহলে তার বৈশিষ্ট্যাবলী এবং কিভাবে তাকে আপনি ভালবাসতে পারেন ও তার সান্নিধ্যে যেতে পারেন, কুরআন এসব সম্পর্কে আপনাকে অবহিত করে। আল্লাহর সৃষ্টির বিশালতা সম্পর্কে বিস্তারিত উদাহরণ রয়েছে। তার দয়া, মানুষের প্রতি ভালবাসা ও তার উদারতা কুরআন আপনাকে জানান দেবে। আপনি অনায়াসে সহজে আপনার হৃদয়ের কাছে উপলব্ধি খুঁজে পাবেন যখন সহজেই কুরআনের মাধ্যমে আপনার সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে জানতে পারবেন। সত্যিই যত বেশি আপনি কুরআন পড়বেন ততই আপনি আল্লাহর ভালবাসায় আবদ্ধ হয়ে পড়বেন। তার বিশালত্বে বিস্মিত হবেন।
আপনি কি মৃত্যুর পর কি ঘটবে জানতে চান?
এই জীবন শুধু মৃত্যুর পর শেষ হয়ে যাবে তা কি করে হয়? আপনি যদি মনে করেন আপনার জীবদ্দশায় যা কিছু ঘটছে আপনার মৃত্যুর পর আর কিছ্ইু অবশিষ্ট নেই, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে (মইরা গেলাম তো গেলাম...) তাহলে আপনি কি নিজেকে আরো আশাবাদী হয়ে ওঠা থেকে বঞ্চিত করছেন না। কুরআন আপনাকে আশাবাদী করে তোলে এই জীবন ছাড়াও মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে। এবং আপনি আপনার সমস্ত বিস্ময়কর সব অধিকার ও স্বর্গের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানতে পারবেন যা আল্লাহ আপনার কাছে ওয়াদা করেছে এবং তাদের জন্যে, যারা আল্লাহর ওপর বিশ^াস রাখেন।
কুরআনে বিজ্ঞানের অলৌকিকতা সম্পর্কে জানতে পেরে আপনি অবাক হবেন। কুরআনে অগুণতি উদাহরণ রয়েছে বিজ্ঞান সম্পর্কে যার কিছু কিছু আজও কেবল আবিস্কার করছেন বিজ্ঞানীরা। মধুর ভেষজগুণ, ভ্রুণতত্ত্বের অলৌকিক ঘটনা, তারকারাজির অবস্থান, সমুদ্রের অপার রহস্য, পর্বতমালার খাঁজ, পৃথিবীর আবর্তন এবং আরো অনেক কিছু।
আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন সেই সব মানুষের মাঝে যারা কুরআন পড়েন এবং এ থেকে শিক্ষা দিয়ে থাকেন।