আসিফুজ্জামান পৃথিল : জীবন রক্ষায় নিজেদের বাড়ি-ঘর, শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করেছেন সাধারণ কুর্দিরা। সীমান্ত লাগোয়ো রাস আল আইয়ান শহর প্রায় খালি হয়ে গেছে। শেষ মুহুর্তে হলেও যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের রক্ষায় এগিয়ে আসবে এই আশায় অনেক কুর্দিই আগে থেকে নিরাপদ স্থানে সরে যাননি। বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় হামলা শুরুর কথা নিশ্চিত করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। বিবিসি, সিএনএন
এরদোগান বলেছেন, সিরিয়ান শরণার্থীদের বসবাসের জন্য কুর্দি ‘সন্ত্রাসীদের’ সরিয়ে একটি সেফ জোন তৈরী করা এই হামলার লক্ষ্য। কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স-এসডিএফ জানিয়েছে, তুর্কি যুদ্ধবিমানগুলো বেসামরিক এলাকাগুলোতে হামলা চালিয়েছে। কিছুদিন আগেই তুরস্ক হামলার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তখন সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন।
সমালোচকরা বলছেন, এটি ছিলো সিরিয়ায় আক্রমণ করতে তুরস্ককে একটি সবুজ সঙ্কেত। সেনা প্রত্যাহারের আগে এরদোগানের সঙ্গেও কথা বলে নেন ট্রাম্প। এদিকে এ ঘটনায় শঙ্কা প্রকাশ করছেন কুর্দিরা। তারা বলছেন, এই ঘটনার কারণে পুরো একটি জাতিগোষ্ঠী ধ্বংস হয়ে যাবে। কুর্দি যোদ্ধারা আইএস বিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে লড়াই করেছে। তুরস্কের সঙ্গে কুর্দিদের ঐতিহাসিক শত্রুতা রয়েছে।
টুইটারে এক বার্তার মাধ্যমে হামলা শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করে এরদোগান বলেন, ‘একটি সন্ত্রাসী করিডোর বন্ধ করে আমাদের দক্ষিণ সীমান্তকে নিরাপদ করতে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এই সামরিক অভিযান এই এলাকায় শান্তি আনবে। আমরা সিরিয়ার ভৌগলিক মানচিত্র অক্ষুন্ন রাখবো এবং স্থানীয় জনসাধারণকে সন্ত্রাসের করাল থাবা থেকে মুক্ত করবো।’
তুরস্কে ৩৬ লাখের মতো সিরিয়ান শরণার্থী আছে। কুর্দিদের নিজেদের বাসিভূমি থেকে তাড়িয়ে শরণার্থীদের জন্য সেফ জোন করতে চায় তুরস্ক।
সীমান্ত শহর রাস আল-আইনের কাছে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরনের আওয়াজ পাওয়া গেছে। এরদোগানের হামলার ঘোষণার পর এসডিএফ যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আইএস বিরোধী দেশকে এই এলাকায় একটি নো ফ্লাই জোন প্রতিষ্ঠা করে নিরিহ মানুষের প্রাণ বাচাতে আহ্বান জানিয়েছে। এসডিএফ বলছে তুরস্কের আকাশ থেকে নিক্ষেপিত বোমায় মারা গেছেন ২ বেসামরিক ব্যক্তি। এই দুই জনই মিসরাফা গ্রামের বাসিন্দা। এই গ্রামের আরও দুজন আহত হয়েছেন। এই টুইট বার্তায় এসডিএফ এ কথা জানায়। এছাড়াও তুর্কি গোলন্দাজরা দেরিক এর বোউজরা বাধ লক্ষ্য করে আর্টিলারি শেল নিক্ষেপ করছে। এই বাধের পানি হাজারো সিরিয়ানের পানযোগ্য পানির একমাত্র উৎস।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলার বিষয়ে নিজের অবস্থান আরো ঘোলাটে করে তুলেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নেই। এবং তুরস্কের এই হামলা কোনো ভালো পরিকল্পনা নয়। তিনি বলেন, ‘ন্যাটো সদস্য তুরস্ক সিরিয়ায় আগ্রাসী হামলা চালিয়েছে। এখানে আর একটিও আমেরিকান সৈন্য নেই। যুক্তরাষ্ট্র কখনই এই হামলার অনুমোদন দেয়নি এবং পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে এই হামলা একটি বাজে ও বিশ্রি ধারণা। আমি রাজনীতিতে প্রবেশ করার পর থেকেই বলছি আমি এ ধরণের সমাপ্তিহীন যুদ্ধের বিপক্ষে। এই যুদ্ধে আমাদের কোনো লাভ নেই।’
এদিকে এই হামলার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপগুলো। ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি এবং ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রস উদ্বেগের কথা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বর্তমানে ১ লাখের বেশি মানুষ উত্তর সিরিয়ার রাক্কা, হাসাকাহ এবং দেইর ইজর এর বিভিন্ন শিবিরে আটক রয়েছেন। এরকম হামলায় সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে সদস্য রাষ্ট্র তুরস্ককে সংযম ধারণ করতে বলেছেন ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ। এক টুইট বার্তায় স্টলটেনবার্গ লিখেছেন, ‘তুর্কি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ন্যাটো উত্তর সিরিয়ায় তাদের চলমান অভিযানের বিষয়ে জানতে পেরেছে। আমি তুরস্ককে বলবো সংযম রাখতে। এবং আমরা আইএস বিরোধী যুদ্ধে যা অর্জন করেছি তা নষ্ট না করতে। আমি শুক্রবার এই বষয়টি নিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে আলোচনা করবো।’
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। সংস্থাটির কূটনীতিকরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যসহ ৫ ইউরোপীয় দেশ এই বৈঠকের অনুরোধ জানায়। এই বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিয় গুতেরেসও গভীর উদ্বেগে রয়েছেন বলে কূটনীতিকরা জানান।
সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব