শিরোনাম
◈ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সিদ্ধান্ত ◈ চুয়াডাঙ্গায় পানের বরজে আগুন ◈ মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে ডিবি ◈ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি ◈ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রচারণা দেখতে আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিজেপি ◈ বিএনপির হাতে শ্রমিকের রক্তের দাগ: ওবায়দুল কাদের ◈ মানবপাচার ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রিসহ বিভিন্ন অভিযোগে মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে: ডিবি প্রধান ◈ চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ৪৩ ডিগ্রি ◈ কুমিল্লায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যার আসামি গ্রেপ্তার  ◈ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব: প্রধান বিচারপতি 

প্রকাশিত : ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৬:০০ সকাল
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাঙালির রোহিঙ্গাবিদ্বেষ

মোজাম্মেল হোসেন তোহা : বাঙালির রোহিঙ্গাবিদ্বেষ দেখে মনে পড়লো ২০১৩ বা ২০১৪ সালের দিকে আমার ছোট ভাইকে একবার লিবিয়ান কিডন্যাপাররা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো, পাকিস্তানি মনে করে। কী হয়েছিলো পরে বলছি, তার আগে প্রেক্ষাপটটা একটু বলি। প্রবাসে যেসব বাংলাদেশিরা আসে তারা সাধারণত নিরীহ, ভীরু স্বভাবের হয়। তাদের একটা অংশ অপরাধে জড়ায় ঠিকই, কিন্তু সেগুলো ছিঁচকে অপরাধ। তারা চুরি করে, অন্যান্য বড় বড় অপরাধীদের দালালি করে, কিন্তু নিজেরাই ক্রাইম বস হয় বা ডাকাতি, সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, এ রকম উদাহরণ খুব কম। সেই তুলনায় পাকিস্তানিরা অনেক বেশি দুঃসাহসী, উগ্র। ২০১১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানিদের অস্ত্র হাতে নিয়ে গাদ্দাফী বাহিনীর সঙ্গে কাজ করতে দেখেছি। পরবর্তীতে আনসার আশ্শারিয়ার (আল-কায়েদার লোকাল অফশ্যুট) সঙ্গেও পাকিস্তানিদের দেখেছে অনেকে। আইএসের সঙ্গেও পাকিস্তানিরা ছিলো বলে শোনা গিয়েছিলো, যদিও শেষ পর্যন্ত নেপালি একজন আইএস পাওয়া গেলেও পাকিস্তানি আইএসের সন্ধান মেলেনি।

অ্যানিওয়ে ২০১৩ বা ২০১৪ সালের দিকে লিবিয়ার সিরতে একটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটে। একটা বাড়িতে পাকিস্তানি কিছু ওয়ার্কার থাকতো, স্থানীয় লিবিয়ান যুবকদের একটা দল রাতের বেলা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেখানে ঢুকে পড়ে ডাকাতি করার জন্য। এ রকম ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা সাধারণত কথা না বাড়িয়ে সব দিয়ে দেয়, বড়জোর হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করে। কিন্তু পাকিস্তানিদের কথা ভিন্ন। তারা এক ডাকাতের হাত থেকে রাইফেল কেড়ে নেয়। গোলাগুলি শুরু হয়। ডিটেইলস পুরোপুরি মনে নেই, কিন্তু যতোদূর মনে পড়ে, দুই পাকিস্তানি এবং এক ডাকাত আহত/নিহত হয়। নিহত ডাকাত ছেলেটি ছিলো ফারজানী। ফারজান ছিলো সিরতের বৃহত্তম ক্বাবিলা তথা গোত্র। গাদ্দাফীর পতনের পর তারাই স্থানীয় রাজনীতিতে সবচেয়ে পাওয়ারফুল হিসেবে আবির্ভূত হয়। লোকাল কাউন্সিল, লোকাল মিলিশিয়া, সব কিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সেই তাদেরই এক সদস্যকে পাকিস্তানিরা মেরে ফেলবে... এটা মেনে নেয়া তাদের পক্ষে কঠিন ছিলো।

সেসময় সিরতে ফারজানীদের একচেটিয়া মনোভাব ছিলো এ রকম... ফকিরের বাচ্চা ফকির পাকিস্তানির দল! আমাদের দেশে আসছিস কামলা দিতে, কত্তো বড় সাহস, আমাদেরই খুন করিস! এখানে ফারজানী ছেলেটাই যে রাইফেল হাতে ডাকাতি করতে ঢুকেছিলো, উগ্র জাতীয়তাবাদ বা গোত্রবাদের কাছে সেটা গৌণ হয়ে যায়। ওই ঘটনার পর থেকে সিরতে পাকিস্তানিদের টেকা কঠিন হয়ে পড়ে। বেশ কিছু পাকিস্তানি কিডন্যাপ হয়, প্রচুর পাকিস্তানি মেসে ডাকাতি হয়, রাস্তাঘাটে অনেকে ছিনতাইয়ের শিকার হয় এবং অন্তত একজন পাকিস্তানি শ্রমিককে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পায়ে গুলি করা হয়। সোজা কথায় পাকিস্তানবিদ্বেষী হেটক্রাইম চূড়ান্ত রূপ নেয়।

ঠিক এ রকম সময় একদিন আমার ভাই দোকান থেকে বাসায় ফিরছিলো, এমন সময় একটা টয়োটা পিকআপে করে দুজন লিবিয়ান কোনো একটা ঠিকানা জানতে চাওয়ার অজুহাতে তাকে কাছে ডেকে নেয়, এরপর পিস্তল দেখিয়ে গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে ফেলে এবং শহরের বাইরে নির্জন ফার্মের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। মাত্র একঘণ্টা, এর মধ্যেই আমরা বাড়িওয়ালাকে সঙ্গে নিয়ে হসপিটাল, থানা, মিলিশিয়া হেডকোয়ার্টার সব তোলপাড় করে ফেলেছি। কোথাও না পেয়ে যখন ঘরে ফিরে এসেছি, ততোক্ষণে দেখি সে বাসায় ফিরে এসেছে। ব্যাপার কী? অর্ধেক পথ যাওয়ার পর কিডন্যাপাররা যখন বুঝতে পারে সে আসলে পাকিস্তানি নয়, বাংলাদেশি, তখন হতাশ হয়ে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছিলো। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো যেকোনো পাকিস্তানিকে কিডন্যাপ করা। আমার ভাই তখন বয়সে ছোট ছিলো, ক্লাস নাইন বা টেনে পড়তো। তো নির্জন রাস্তায় নামিয়ে দেয়ার পর সে যখন জিজ্ঞেস করে, ‘আমি এখন বাসায় যাব কীভাবে?’ তখন কিডন্যাপাররা দয়াপরবশ হয়ে তাকে পাঁচ দিনারের একটা নোটও ধরিয়ে দেয়। অ্যানিওয়ে এটা হচ্ছে উগ্র ক্বাবিলাবাদ বা গোত্রবাদের একটা উদাহরণ। আমার এতোদিন ধারণা ছিলো বাংলাদেশিদের মধ্যে এই ক্বাবিলা জিনিসটা নেই। গত কয়েকদিনে বাঙালির রোহিঙ্গাবিদ্বেষ দেখে বুঝতে পারছি, আমার ধারণা ভুল ছিলো। পুরো বাংলাদেশটাই আসলে একটা ক্বাবিলা। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়