মিজানুর রহমান মিলন : আসামের অর্থমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, ‘এনআরসি থেকে বাদ পড়াদের ফিরিয়ে নিতে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলবো। বাংলাদেশের সরকার ভারতের বন্ধু। তারা আমাদের সহযোগিতা করছে।’ এতোক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে! আর এক রোহিঙ্গা উপাখ্যান শুরুর দ্বারপ্রান্তে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যতোই বলুক না কেন এনআরসির তালিকা করায় বাংলাদেশে কোনো প্রভাব পড়বে না তা ডাহা মিথ্যা কথা ছাড়া কিছুই নয়, ¯্রফে ধোঁকাবাজি। যেখানে বাঙালি ও বাংলাদেশি শব্দদ্বয় জড়িত সেখানে শুধু ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হয়ে থাকতে পারে না। ভারত অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে দায় এড়ানোর জন্য, সুযোগের অপেক্ষায় আছে পুশ করার। বাংলাদেশ সরকারের সতর্ক থাকার পাশাপাশি কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত। এনআরসি তালিকা করায় ভারতের নিন্দা করা উচিত। কোনো সভ্য দেশ সভ্য সমাজ এটা করতে পারে না।
৪৭-এ দেশভাগের পর থেকে কিছু মানুষ ওপারে যেমন গেছে তেমনি ওপার থেকে কিছু মানুষ এপারে এসেছে। কিছুটা পার্থক্য তো রয়েছে। এদেরকে যদি উভয় দেশ তাড়িয়ে দেয় এরা যাবে কোথায়? তবে প্রজন্ম ধরে যারা যে দেশে বসবাস করছে তারা সেই দেশের নাগরিক এটাকেই মানদ- ধরতে হবে।
যাদের জন্ম যেখানে তারাও সেখানকার নাগরিক। এনআরসির তালিকা ভারত সরকার কোন মানদ-ের ভিত্তিতে করেছে তা আমার জানা নেই। জানা গেছে বাবা এনআরসির তালিকায় আছে, কিন্তু তার ছেলেমেয়ে কেউ সেই তালিকায় নেই। স্বামীর নাম আছে স্ত্রীর নেই, স্ত্রীর আছে স্বামীর নেই। ছেলেমেয়ের নাম আছে বাবা-মায়ের নাম নেই। আবার ৩০ বছর সামরিক বাহিনীতে চাকরি করার পরও এনআরসির তালিকায় নাম আসেনি! ভারত তো এক রাজ্য, এক ধর্ম ও এক ভাষার দেশ নয়। পার্শ্ববর্তী রাজ্যের কারও সঙ্গে পার্শ্ববর্তী রাজ্যের কারও বিয়ে তো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, বিশেষ করে প্রতিটি রাজ্যের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে এটা অহরহ ব্যাপার। তালিকা করার সময় অনেক মহিলা এজন্যই নাকি বাদ পড়েছে। কি বিস্ময়কর এরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে গেলো।
বাংলাদেশের কথায় ধরুন। এনআইডি করার আগে যদি বলা হতো প্রমাণ করেন আপনি বাংলাদেশের নাগরিক? বাংলাদেশের কতোজন মানুষ তা প্রমাণ করতে পারতেন? নিশ্চয় সংখ্যাটা চৌদ্দ বা ষোলো আনা হতো না। তাহলে আমাদের কি উচিত হতো এই বিশাল জনসংখ্যাকে নাগরিকত্ব বঞ্চিত করে তাদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে রেখে দেয়া অথবা দ্বিতীয় কোনো দেশে পাঠানোর চেষ্টা করা? এটা কি মানবিক কাজ? বিশাল সংখ্যক মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে একই সঙ্গে নিজেকে আধুনিক ও সভ্য দাবি করা যায় না। সেই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে কারও গর্ব করার কিছুই থাকে না।
এখন তো দেখা গেলো যে উদ্দেশ্যে এনআরসি করা তা পুরোপুরি বিফলে গেলো। তবে ভুল সংশোধন করার সময় আছে। ভারত সরকারকে বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। রাজনীতির সাময়িক স্বার্থে বিভক্তি ও তিক্ততা বাড়ালে বহু রাজ্য, বহু ধর্ম ও বহু জাতির দেশ ভারতের জন্যই আখেরে বুমেরাং হবে তা পরিষ্কার।
হেমন্ত বিশ্ব শর্মার কথায় ফিরে আসি। শুধু ১৯ লাখ বাংলা ভাষী কেন? আমাদের ভারতের বাংলা ভাষী জেলাগুলো দিয়ে দিন। বাংলা ও বাঙালি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাক। আপনাদের বোঝা পুরোদমে হালকা করে দেবো আমরা। দেরিতে হলেও ৪৭-এর মূল প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হোক। খ-িত বাংলা নয়, অখ- বাংলা চাই।
আপনার মতামত লিখুন :